দক্ষিণে মোদী। আর উত্তরে সনিয়া। দেশের দু’প্রান্ত থেকে কাল দুই দলের দুই নেতা একে অন্যকে হুঙ্কার ছেড়েছিলেন। আজ দুই নেতাকেই এক শ্রেণিতে বদ্ধ করে মাঠে নামলেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল।
সনিয়ার কালকের পথ ধরেই আজ দিল্লির যন্তর-মন্তরে কেজরীবাল কপ্টার-দুর্নীতিতে বিঁধলেন মোদী ও সনিয়াকে। দাবি করলেন, নরেন্দ্র মোদী সনিয়া গাঁধীকে ভয় পান, তাই দু’বছরেও কপ্টার-ঘুষ কাণ্ডে তদন্ত একচিলতেও এগোয়নি। সনিয়াকে গ্রেফতার করে জেরা করার হিম্মতও নেই মোদীর। উভয়ের মধ্যে সমঝোতা এটাই, নরেন্দ্র মোদীর ‘ভুয়ো’ ডিগ্রি নিয়ে চুপ থাকবেন সনিয়া। আর মুখে শুধু তদন্তের কথা বললেও সনিয়াকে গ্রেফতার করবেন না মোদীও। উভয়েই দুর্নীতির শরিক।
দুর্নীতিতে কংগ্রেস-বিজেপি ‘ভাই-ভাই’— কেজরীবালের এই তত্ত্ব নতুন নয়। তৃণমূলও দুই দলের থেকে সমদূরত্ব বজায় রেখে এ ধরনের অবস্থান নিয়ে চলছে। কিন্তু কেজরীবাল আজ দিল্লির সড়কে নেমে এটিকে অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়ে নিজের প্রাসঙ্গিকতা ধরে রাখতে চাইলেন। কেজরীবালের এই তত্ত্বের জবাব দিয়ে অবশ্য খোদ প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোহর পর্রীকর বলেন, ‘‘অরবিন্দ কেজরীবালের উচিত দিল্লির মুখ্যমন্ত্রিত্ব ছেড়ে দিয়ে সিবিআইতে যোগ দেওয়া। আয়কর দফতরের অফিসার থাকতে কত জনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছিলেন তিনি, তার জবাব দিন।’’ কংগ্রেসের নেতা রাগিনি নাইক কেজরীবালের বিরুদ্ধে তোপ দেগে বলেন, ‘‘দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার আগে তো তিনি শীলা দীক্ষিতকেও জেলে পাঠাবেন বলেছিলেন। ক্ষমতায় এসে এখন চুপ!’’
এর অবশ্য সাফাই দিয়ে আম আদমি পার্টি নেতা আশুতোষ বলেন, ‘‘প্রথম বার কেজরীবাল ক্ষমতায় এসে শীলা দীক্ষিতের বিরুদ্ধে এফআইআর করেছিলেন। কিন্তু পরের ক্ষমতায় আসার পর ‘অ্যান্টি কোরাপশন ব্যুরো’ কেড়ে নেওয়া হয়েছে দিল্লি সরকারের হাত থেকে। শীলা দীক্ষিতের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার কাজ এখন মোদী সরকারের। কিন্তু যেহেতু কংগ্রেস ও বিজেপি হাতে হাত ধরে রয়েছে, তাই কেন্দ্রও কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।’’
মুখে কেজরীবালের জবাব দিলেও সনিয়াকে গ্রেফতার করা নিয়ে মোদীকে যে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিয়েছেন দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী, তাতে কিছুটা অস্বস্তির মধ্যে রয়েছে বিজেপি। কারণ, তারা জানে তদন্তের জাল গোটাতে এখন অনেকটা সময় লাগবে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী যে ‘রাঘববোয়াল’কে গ্রেফতার করার কথা বলছেন, সেটি সম্ভব হবে ঘুষের টাকা কোন পথে গিয়েছে তার হদিস পেলেই। তার জন্য বিদেশি ব্যাঙ্কেও তদন্ত করতে হবে। অন্য দেশের সহযোগিতাও প্রয়োজন। তার উপর কংগ্রেসের মতো প্রধান বিরোধী দলের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক আক্রমণ এক বিষয়, তাঁর বিরুদ্ধে প্রমাণ যদি সুদূর ভবিষ্যতে পাওয়াও যায়, তাঁকে গ্রেফতার করলে পাল্টা সমীহ আদায়ের সুযোগ পাবে গাঁধী পরিবার। তাতে কংগ্রেসই আরও শক্তিশালী হবে। গত কাল যন্তর-মন্তরে নেমে গ্রেফতার বরণ করে সনিয়া সেই ভিতটিই পুঁতে রাখার চেষ্টা করেছেন।
আর সে কারণেই এখনও পর্যন্ত কেজরীবালও শীলা দীক্ষিতের বিরুদ্ধে কোনও পদক্ষেপ করতে পারেননি, রবার্ট বঢরার বিরুদ্ধে প্রমাণ থাকলেও বিজেপি কোনও পদক্ষেপ করেনি। কিন্তু যে ভাষায় কেজরীবাল পায়ে পা দিয়ে ঝগড়া করতে পারেন, সেই স্তরে গিয়ে মোকাবিলা করা যে দুষ্কর সেটি বার বার টের পাচ্ছেন বিজেপি নেতারা। দিল্লি বিজেপি সভাপতি সতীশ উপাধ্যায় অবশ্য পরিস্থিতি কিছুটা সামাল দিতে বলেন, ‘‘আসলে কেজরীবালই কংগ্রেসের সুবিধা করে দিতে চাইছে। তদন্তের মাঝে এ ধরনের মন্তব্য করে তিনি সনিয়া গাঁধীরই সুবিধা করে দিতে চান।’’