সুর চড়ালেন রাহুল। ছবি: পিটিআই।
পলাতক শিল্পপতি বিজয় মাল্য ইস্যুতে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির বিরুদ্ধে সুর আরও চড়াল কংগ্রেস। বৃহস্পতিবার কংগ্রেসের হয়ে আক্রমণ শানাতে আসরে নামলেন খোদ কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী।
এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে রাহুলের দাবি, ‘‘মিথ্যে বলছেন জেটলি। দেশ ছেড়ে পালানোর দু’দিন আগে সংসদে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সঙ্গে প্রায় ২০ মিনিট ধরে কথা বলেছিলেন বিজয় মাল্য। লন্ডন যাওয়ার কথাও জানিয়েছিলেন। আর সব কিছু জানা সত্ত্বেও মুখে কুলুপ এঁটে থেকেছিলেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী। আসলে বিজয় মাল্য যাতে নির্ঝঞ্ঝাটে দেশের বাইরে চলে যেতে পারেন, সে ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন অরুণ জেটলিই।’’
২০১৬-র পয়লা মার্চ অরুণ জেটলি এবং বিজয় মাল্যের বৈঠকটিই এ দিন রাহুলের মূল অস্ত্র ছিল। এর ঠিক দু’দিন পরেই দেশ ছেড়ে পালান বিজয়। রাহুল এ দিন সাংবাদিক বৈঠকে এনেছিলেন জেটলি-মাল্য বৈঠকের প্রত্যক্ষদর্শী কংগ্রেস নেতা পি এল পুনিয়াকে। পুনিয়া এ দিন দাবি করেন, ‘‘২০১৬-র পয়লা মার্চ, বাজেট অধিবেশনের সময় আমি বসে ছিলাম সংসদের সেন্ট্রাল হলে। তখনই আমি জেটলি আর মাল্যকে প্রায় ১৫-২০ মিনিট ধরে বৈঠক করতে দেখি। মাল্য নিজেই জেটলির সঙ্গে দেখা করতে এসেছিলেন।’’ একই সঙ্গে পুনিয়ার দাবি, গত আড়াই বছর ধরে তিনি বিভিন্ন জায়গায় এই বৈঠকের কথা বলে এলেও তা নিয়ে কেউ কোনও সাড়াশব্দ করেননি। এত দিনে কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী কয়েক মিনিটের ‘ছোট’ আলাপচারিতার কথা স্বীকার করছেন, কিন্তু তা পনেরো মিনিটেরও বেশি বলে দাবি করছেন ওই কংগ্রেস নেতা।
আরও পড়ুন: নিষিদ্ধ হল স্যারিডন, ট্যাক্সিম-সহ ৩২৮টি বহুল ব্যবহৃত ওষুধ
এর পরেই কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী বলেন, ‘‘সংসদের সিসিটিভি ফুটেজ দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যাবে কত ক্ষণ বৈঠক করেছিলেন মাল্য আর জেটলি।’’ মাল্য পালাচ্ছেন, তা জানা সত্ত্বেও সিবিআই, ইডি বা অন্যান্য কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাকে কিছু না জানিয়ে কেন চুপ করে বসেছিলেন জেটলি, সেই প্রশ্নও তুলেছেন কংগ্রেস সভাপতি। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির পদত্যাগের পাশাপাশি পুরো বিষয়টি নিয়ে নিরপেক্ষ তদন্তের দাবিও করেছে কংগ্রেস।
আরও পড়ুন: সাংসদ-বিধায়কদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলায় পশ্চিমবঙ্গ দ্বিতীয়
সংসদের এই বৈঠকের ঠিক দু’দিন পরেই দেশের বিভিন্ন ব্যাঙ্কগুলির কাছ থেকে নেওয়া ৯ হাজার কোটি টাকার ঋণ শোধ না করে দেশ ছেড়ে পালিয়েছিলেন বিজয় মাল্য। বুধবারই লন্ডনে বিজয় মাল্য দাবি করেছেন, দেশ ছাড়ার আগে অরুণ জেটলির সঙ্গে দেখা করে সব কিছু জানিয়েছিলেন তিনি। তার পর থেকেই ব্যাকফুটে অরুণ জেটলি। মাল্যের এই দাবির পরই তড়িঘড়ি ফেসবুকে অরুণ লেখেন, ‘‘সংসদ কক্ষ থেকে বেরিয়ে আমার ঘরে যাচ্ছিলাম। উনি দ্রুত পায়ে কাছে এসে জানান, পাওনা মেটাতে একটা প্রস্তাব দিতে চান। আমি জানতাম, উনি আগেও এমন ভাঁওতা দিয়েছেন। তাই ওঁকে স্পষ্ট বলে দিই, আপনি ব্যাঙ্কের সঙ্গে কথা বলুন। আমার সঙ্গে কথা বলে লাভ হবে না। ওঁর সঙ্গে যে সব নথি ছিল তা-ও আমি নিইনি।’’
জেটলি এই দেখা হওয়ার ঘটনাটিকে ছোট করে দেখাতে চাইলেও কয়েকটি বিষয় তুলে আনছে কংগ্রেস। প্রথমত, মাল্যের পালানোর ঠিক দু’দিন আগে এই সাক্ষাৎ। দ্বিতীয়ত, জেটলি এই সাক্ষাতের কথা এত দিন সামনে আনেননি কেন? তৃতীয়ত, মাল্যের লন্ডন যাওয়ার জেনে থাকলে তিনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে কোনও ব্যবস্থা নিতে বলেননি কেন?
কংগ্রেসে আক্রমণের মুখে অবশ্য থেমে থাকেনি বিজেপিও। কেন্দ্রীয় আইনমন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ টুইট করেন, কংগ্রেস অযথা পুরো বিষয়টি নিয়ে জলঘোলা করছে। একই সঙ্গে রাহুল গাঁধী লন্ডন থেকে ঘুরে আসার পরই বিজয় মাল্য এই বক্তব্য সামনে আনলেন কেন, সেই প্রশ্নও তোলা হয়েছে বিজেপির তরফে।
(ভারতের রাজনীতি, ভারতের অর্থনীতি- সব গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)