এক দিকে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় সংস্কারের পথে এগিয়ে যাওয়ার বার্তা দেওয়ার দায়, অন্য দিকে সঙ্ঘ পরিবার ও দলের ভিতরেই পাল্টা চাপ— এই দু’য়ের জাঁতাকলে পড়ে আজ বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় ৫১ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি বিনিয়োগের বিরোধিতাই করল বিজেপি। আর সেই বিরোধিতা এল খোদ দেশের অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির কাছ থেকেই। যে-সরকার দিন কয়েক আগেই ইউপিএ সরকারের নীতি বহাল রাখার কথা জানিয়েছে।
জেটলি আজ বলেন, বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় ৫১ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত ইউপিএ আমলের নেওয়া নীতিরই ধারাবাহিকতা। বিজেপি কোনও দিনই একে সমর্থন করেনি। প্রশ্ন, অর্থমন্ত্রীই যদি এর বিপক্ষে হন এবং তাঁর দলের প্রকাশ্য অবস্থানও যদি এর বিরুদ্ধে, তবে কেন ইউপিএ-র নীতি খারিজ না-করে বহাল রাখা হল? এই প্রশ্ন তুলছে ব্যবসায়িক সংগঠনগুলিও। বিজেপি সমর্থিত ব্যবসায়ীদের সর্বভারতীয় সংগঠনের প্রধান প্রবীণ খাণ্ডেলওয়াল সরকারের এই সিদ্ধান্তের পরেই নাগপুরে আরএসএসের সদর দফতরে আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন। আজ তিনি বলেন, ‘‘সরকার ও দল যদি এর বিরুদ্ধে হয়, তা হলে সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে না কেন?’’ জেটলি সরাসরি জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘কিছু বিষয় সরকারের উপরেই ছেড়ে দেওয়া ভাল।’’
সরকারি সূত্র অবশ্য বলছে, সংসদে পণ্য-পরিষেবা কর বিল বিরোধীদের চাপে আটকে গিয়েছে। আন্তর্জাতিক লগ্নিকারীদের কাছে তাতে ভুল বার্তা গিয়েছে। সে কারণে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির সিদ্ধান্ত বহাল রেখে সদর্থক বার্তা দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তাতে সঙ্ঘের যেমন আপত্তি রয়েছে, তেমনই বিজেপি সমর্থিত ব্যবসায়ী সংগঠনও অখুশি। এই ব্যবসায়ীরা বিজেপি-র ভোট ব্যাঙ্ক বলেই অর্থমন্ত্রীকে অবস্থান স্পষ্ট করতে হল। এমনিতেই ইউপিএ আমলে এই নীতি ঘোষিত হলেও একটিমাত্র সংস্থা ছাড়া আর কেউ লগ্নিতে আগ্রহ দেখায়নি। বিজেপি শাসিত রাজ্যেও কোনও সংস্থা আসতে চাইবে না। আরও অনেক রাজনৈতিক দল এর বিরোধিতায় রয়েছে। ফলে সরকারি নীতি থাকলেও এর বাস্তব রূপায়ণ তেমন ভাবে সম্ভব নয় বলেই আশঙ্কা সংশ্লিষ্ট মহলে। কিন্তু লগ্নিকারীদের মনোবল জিইয়ে রাখাটা জরুরি বলেই খাতায়-কলমে পিছু হটলেন না জেটলি।