পরিস্থিতির জেরে আপাতত বন্ধ করা হয়েছিল জম্মু কাশ্মীরে চিঠিপত্র ও পার্সেল পাঠানো। দেশের সর্বত্র পাঠানো হয়েছিল এই মর্মে নির্দেশ। বলা হয়েছিল, পরবর্তী নির্দেশ পর্যন্ত জম্মু ও কাশ্মীর সার্কেলের জন্য কোনও ধরনের ‘মেল’ বুক করা যাবে না। বেসরকারি ক্যুরিয়র সার্ভিসও জম্মু ও কাশ্মীরে তাদের পরিষেবা বন্ধ রেখেছিল। তবে এই কাশ্মীরেই আছে বিশ্বের একমাত্র ভাসমান ডাকঘর।
শিকারায় চেপে শুধু ফুল নয়। সেই ডাকঘরে আসা যাওয়া করত চিঠিপত্রও। কাশ্মীরের শ্রীনগরে ডাল হ্রদে ওই ভাসমান ডাকঘরকে দূর থেকে দেখলে মনে হয় যেন আর পাঁচটা শিকারার মতো এটাও একটা সাধারণ শিকারা। ভুল ভাঙবে ভারতীয় ডাকবিভাগের হোর্ডিং দেখে।
পর্যটনের মরসুমে এখানে উপচে পড়ত পর্যটকদের ভিড়। দরকার না থাকলেও তাঁরা চিঠি পাঠাতেন প্রিয় জনকে। কারণ ডাকটিকিটের বিশেষ ছাপে থাকত ‘ডাল লেক’। অনেকে সংগ্রহে রাখবেন বলে কিনেও নিতেন ডাল হ্রদের ছবি দেওয়া বিশেষ ডাকটিকিট।
২০১১ সালে ডাকঘরটির উদ্বোধন করেন জম্মু কাশ্মীরের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। তারপর থেকে এটাও শ্রীনগরের দর্শনীয় স্থানের মধ্যে অন্যতম।
এই ডাকঘরে চিঠিপত্র আসত শিকারায়। আবার বিভিন্ন ঠিকানায় প্রাথমিক ভাবে চিঠিপত্র যেত শিকারা বেয়েই।
পোস্টমাস্টার এবং অন্যান্য ডাককর্মীরাও আসতেন জলপথে। পর্যটনের মরসুমে বাড়ত কাজের চাপ। শিকারায় ডাল হ্রদ ঘোরার সময় পর্যটকরা পা ফেলতেন বিশ্বের একমাত্র ভাসমান ডাকঘরে।
যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাল্টেছে মানুষের প্রয়োজন। তাই এই ডাকঘর থেকে আন্তর্জাতিক ফোনকল করা যেত। ছিল ইন্টারনেট পরিষেবাও।
ভাসমান ডাকঘরে আছে ফিলাটেলি মিউজিয়াম বা ডাকটিকিট সংগ্রহশালা। সেখানে আছে ডাকটিকিটের সমৃদ্ধ সংগ্রহ। ডাকটিকিট জমানোর শখ থাকলে এখানে এসে লাভবান হন পর্যটকরা।
ভাসমান ডাকঘর লাগোয়া দোকান থেকে অনেকেই কিনতেন টুকটাক উপহারের জিনিস। শিকারাকে বিভিন্ন ব্যবসায়িক কাজে ব্যবহার করা হয়ে আসছে দীর্ঘ কয়েক দশক ধরেই। সেই ধারা মেনে অভিনব ভাসমান ডাকঘর ভূস্বর্গের পর্যটনে নতুন মাত্রা যোগ করেছিল।
উপত্যকা ফিরুক স্বাভাবিক ছন্দে। সবার সঙ্গে ডাল হ্রদে ভেসে থাকা ডাকঘরও রয়েছে এই অপেক্ষায়।