ভারতের পাশেই দাঁড়াল রাশিয়া। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ
জম্মু-কাশ্মীর নিয়ে এ বার ভারতের পাশে দাঁড়াল পুরনো বন্ধু রাশিয়াও। মস্কো স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, সংবিধান মেনেই জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের স্টেটাস বদল করেছে ভারত। একই সঙ্গে ভারত ও পাকিস্তান দু’দেশকে শান্তি রক্ষার বার্তাও দিয়েছে তারা।
রুশ বিদেশমন্ত্রকের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘‘সংবিধানসম্মত ভাবেই ভারত জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের বিশেষ মর্যাদার পরিবর্তন করেছে ও দু’টি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ভাগ করেছে।’’ ওই বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘‘আমরা আশা করি যে এই সিদ্ধান্তের ফলে ওই এলাকার পরিস্থিতির অবনতি হবে না। রাশিয়া সব সময়েই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সুষ্ঠু সম্পর্কের পক্ষে সওয়াল করে আসছে।’’
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে রাশিয়ার ওই বিবৃতিতে উঠে এসেছে লাহৌর চুক্তি ও শিমলা চুক্তির কথাও। তাতে বলা হয়েছে, ‘‘আমরা আশা করব, শিমলা চুক্তি ও লাহৌর ঘোষণাপত্র মেনে দুই দেশ রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক ভাবে তাদের যাবতীয় দ্বন্দ্বের নিরসন ঘটাবে।’’
আরও পড়ুন: ছররার আঘাতে অন্য কাশ্মীর-কথা
রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ সদস্যের মধ্যে কাশ্মীর প্রসঙ্গে রাশিয়ার এই অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, মস্কোই প্রথম বলল, সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ খারিজ ভারতের ‘নিজস্ব’ ব্যাপার। আগেই, ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল এবং জম্মু-কাশ্মীরের প্রশাসনিক বিভাজন নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের পাঁচ সদস্য— চিন, আমেরিকা, রাশিয়া, ফ্রান্স এবং ব্রিটেনকে গোটা বিষয়টি জানিয়েছিল ভারত। পাকিস্তানের দাবি সত্ত্বেও কোনও দেশই ভারতের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে কোনও কথা বলেনি। কিন্তু, রাশিয়াই প্রথম স্পষ্ট করে সরাসরি ভারতের পক্ষে দাঁড়িয়ে মতামত দিল। মস্কোর এই প্রতিক্রিয়া আসলে নয়াদিল্লির অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করল বলেই মনে করছে কূটনৈতিক মহল।
অথচ, সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ নিয়ে ভারতে কোণঠাসা করতে তৎপর পাকিস্তান। তাদের প্রতিবাদের স্বর কতটা জোরালো তা বোঝাতে ভারতের সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বন্ধ করেছে ইসলামাবাদ। একই সঙ্গে, তা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলেও পৌঁছেছে তারা।
জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, চিন-সহ আন্তর্জাতিক মহলের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করেছে পাকিস্তান। কিন্তু, ইসলামাবাদকে কিছুটা হতাশ করে, কয়েক দিন আগে মার্কিন বিদেশ দফতরের মুখপাত্র মর্গান অর্টাগাস স্পষ্ট জানিয়েছেন, ‘‘কাশ্মীর নিয়ে আমাদের নীতির পরিবর্তন হয়নি।’’
আরও পড়ুন: ‘আমার চার বছরের মেয়ে এখন কাশ্মীরে, গত ৪৮ ঘণ্টা ওর গলা শুনিনি’
এ নিয়ে রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব অ্যান্তোনিয়ো গুতেরেসকে চিঠি দিয়েছিলেন পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশি। কিন্তু, তার সরাসরি জবাব এড়িয়ে গিয়েছেন মহাসচিব। জম্মু-কাশ্মীরে শান্তি ও স্থিতাবস্থা বজায় রাখার আর্জি জানিয়েছেন গুতেরেস। কাশ্মীর নিয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছেন রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদের প্রধান জোয়ানা রনেকাও।
কিছুটা হলেও পাকিস্তানের পাশে দাঁড়িয়েছে ‘বন্ধু’ চিন। বেজিংয়ে কুরেশির উপস্থিতিতেই চিনা বিদেশ মন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছে, ‘একতরফা’ সিদ্ধান্তে কেউ যেন ওই এলাকার স্থিতাবস্থা নষ্ট না করে। সেই সঙ্গেই বেজিংয়ের বক্তব্য, ভারত -পাকিস্তান দু’দেশেরই উচিত বিষয়টি দ্বিপাক্ষিক আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা। অর্থাৎ বিষয়টি নিয়ে বেজিংয়ের থেকে যতটা আশা করেছিল ততটা পায়নি ইসলামাবাদও।
আরও পড়ুন: জম্মুতে উঠল ১৪৪ ধারা, স্কুল খুলল সাম্বা-কাঠুয়ায়, বিক্ষিপ্ত বিক্ষোভ ‘শান্তির’ কাশ্মীরে