নরেন্দ্র মোদী এবং অমিত শাহ।
লোকসভা ভোটের আগেই জম্মু-কাশ্মীরের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের ভাবনা এসেছিল বিজেপির। কিন্তু তার আগেই ঘটে যায় পুলওয়ামার ঘটনা। পরে বালাকোটে সেনা অভিযান-ভোট ইত্যাদি নিয়ে সে পথে আর এগোনো হয়নি।
বিজেপির এক সূত্রের মতে, লোকসভা ভোটের জন্য বিজেপির ইস্তাহার তৈরির সময়ই ৩৭০ অনুচ্ছেদ নিয়ে বিস্তর আলোচনা হয়। এই ইস্তাহার তৈরির দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহ। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে রাজনাথ ও অরুণ জেটলি এই বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও করেন। কোন পথে ৩৭০ অনুচ্ছেদ তোলা যায়, তার পথও খোঁজা হয়ে যায়। বিজেপির মতে, জনসঙ্ঘের আমল থেকে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের কথা তোলা হচ্ছে। সেটি বিলোপ করে ভোটে যাওয়ার একটি ভাবনাও ছিল। তবে সেটির আর দরকার হয়নি।
অটল বিহারী বাজপেয়ী সরকারের মন্ত্রী যশোবন্ত সিন্হার মতে, নোটবন্দির পিছনে কোনও অর্থনৈতিক ভাবনা ছিল না। ছিল রাজনৈতিক লক্ষ্য। ভোটে জেতার। তেমনই এখন যে পদক্ষেপ সরকার করল, তার সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরের কোনও সম্পর্ক নেই। সামনে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যে ভোট। সে ভোটে জেতাই বিজেপির লক্ষ্য। সিন্হার মতে, ইন্দিরা গাঁধী মারা যাওয়ার পর তাঁর আবেগে ভর করে রাজীব গাঁধী লোকসভায় চারশোর বেশি আসন পেয়েছিলেন। এখন যদি ভোট হয়, তা হলে ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপকে সামনে রেখে সেই রেকর্ডও ভেঙে দিতে পারবে বিজেপি।
আজ আলোচনার একেবারে শেষ লগ্নে যখন প্রধানমন্ত্রী লোকসভায় প্রবেশ করেন, সেই সময় গোটা বিজেপি শিবিরে স্লোগান ওঠে, ‘ভারত মাতা কি জয়’। স্পিকারও বাধা দেননি। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেন, ‘‘সকলের ভাবনা আমি বুঝতে পারছি। এত বছর ধরে যে আবেগ বুকের মধ্যে বন্ধ ছিল, আজ তা ফেটে পড়ছে।’’
জাতীয়তাবাদের আবেগ সামনে রেখে সংসদের ভিতরেই বিরোধী শিবিরকে ছত্রভঙ্গ করে দিয়েছে বিজেপি। বিরোধী শিবির ভেঙে যেমন সাংসদরা বিজেপিতে যোগ দিচ্ছেন, তেমনই রাজ্যসভায় সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা না থাকা সত্ত্বেও তিন তালাক, তথ্যের অধিকার, ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের পরে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিল পাশ করিয়ে নিয়েছে সরকার। ফলে এখানেই প্রশ্ন উঠছে, সামনে যে ক’টি রাজ্যে ভোট, সেখানে বিরোধী দলগুলি কি বিজেপির সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে? আর পরের লোকসভাতেই বা কী হবে?
গত রবিবারই দলের সাংসদদের প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন, ‘‘এখন থেকেই ২০২৪-এর ভোটের জন্য প্রস্তুতি নিন। যে বুথে হেরেছেন আর যে আসনে জয় আসেনি, সেখানে বেশি করে জোর দিন। কর্মীর মনোভাব নিয়ে কাজ করুন।’’ বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘বিজেপি ইতিমধ্যেই সামনের সবক’টি নির্বাচন জেতার একটি রূপরেখা তৈরি করে ফেলেছে। চলতি বছরে হরিয়ানা, মহারাষ্ট্র, ঝাড়খণ্ডের মতো রাজ্যে ভোট। ২০২০ সালে দিল্লি, বিহার। ২০২১-য় বাংলা, তামিলনাড়ু, কেরল, অসম। ২০২২-এ উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, পঞ্জাব, হিমাচল, গোয়া, গুজরাত, মণিপুর। সদস্য সংগ্রহ অভিযানের মাধ্যমে শুধু নতুন সদস্য সংগ্রহ হচ্ছে না, ভোটের প্রচারও হচ্ছে। অমিত শাহ নিজে ভোটমুখী রাজ্যে গিয়ে রাত কাটাবেন। সংসদের অধিবেশন শেষ হলেই রাজ্যওয়াড়ি বৈঠক করে কৌশল নির্ধারণ হবে।’’