শ্রীনগরের রাস্তায় ভারতীয় জওয়ানরা।—ছবি পিটিআই।
এক মাসের নিষেধাজ্ঞায় কাশ্মীরের পরিস্থিতি বদলায়নি তেমন। তবে ঠিক এক মাসের মাথায় আজ দক্ষিণ কাশ্মীরের শোপিয়ানে প্রায় ৪০ জন গ্রামবাসীকে মারধর করার অভিযোগ উঠল সেনার বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে মুখ খোলেনি সেনা।
শোপিয়ানের পারিগাম ও ওমপোরা গ্রামের বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ওই গ্রামগুলির কাছে গাছের গুঁড়ি ফেলে রাস্তা অবরোধ করেছিলেন বাসিন্দাদের একাংশ। বুধবার রাস্তা সাফ করে নিজেদের গাড়ি যাওয়ার পথ করে সেনা। সে দিনই রাতে ওই দু’টি গ্রামে ঢোকে সেনার কয়েকটি দল। ঘরবাড়ি তছনছ করতে শুরু করেন জওয়ানেরা। কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করেন তাঁরা। তার পরে শুরু হয় বাসিন্দাদের মারধর। অভিযোগ, মহিলা-সহ প্রায় ৩৬ জন বাসিন্দাকে সেনারা বেধড়ক মারধর করেন। তাতে কয়েক জনের হাড় ভেঙে যায়।
বাসিন্দাদের অভিযোগ, তাঁদের বাঁচাতে পুলিশ আসেনি। মারধরের পরে দুই গ্রামের ২০ জন যুবককে তুলে নিয়ে যায় সেনা। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে ওই এলাকার রাস্তা কাঁটাতার দিয়ে আটকে দেয় সেনা। ফলে আহতদের শ্রীনগরের হাসপাতালেও নিয়ে যাওয়া যায়নি। শোপিয়ানের হাসপাতালেই চিকিৎসা চলছে তাঁদের।
কাশ্মীরের স্বাস্থ্য দফতরের কর্তারা মেনে নিয়েছেন, পারিগাম এবং ওমপোরা এলাকার কয়েক জন বাসিন্দা শোপিয়ান জেলা হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তবে ঠিক কত জন তা জানাতে রাজি নন তাঁরা। তাঁদের দাবি, কারও আঘাতই গুরুতর নয়। পুলিশের দাবি, ওই দুই গ্রামের বাসিন্দারা বাহিনীকে লক্ষ্য করে পাথর ছুড়েছিলেন। সংঘর্ষে কয়েক জন আহত হয়েছেন। পুলওয়ামার রাজপোরা, উটরু ও অন্য কয়েকটি এলাকাতেও সেনার বিরুদ্ধে গ্রামে ঢোকার অভিযোগ উঠেছে।
এমন ঘটনার অভিযোগ সামনে না আসলেও নিষেধাজ্ঞার এক মাসে উপত্যকায় কয়েক হাজার মানুষকে আটক করা হয়েছে বলে সরকারি সূত্রেই খবর। তাঁদের মধ্যে প্রায় ১ হাজার মানুষকে উপত্যকার বাইরের জেলে বন্দি করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক সরকারি কর্তারা।
সম্প্রতি নিষেধাজ্ঞা কিছুটা শিথিল করেছিল প্রশাসন। কিন্তু তাতে উপত্যকার থমথমে চেহারা বদলায়নি। বন্ধই রয়েছে দোকানপাট, স্কুল। দোকানিরা স্পষ্টই জানাচ্ছেন, কাশ্মীরের স্বতন্ত্র পরিচয় কেড়ে নিয়েছে দিল্লি। সেই পরিচয় ফিরিয়ে দিলে তবেই ফের ব্যবসা শুরু করবেন তাঁরা।
আজ শিক্ষক দিবসে শ্রীনগরের প্রায় কোনও স্কুলেই আসেনি পড়ুয়ারা। এক মিশনারি স্কুলের শিক্ষকেরা জানালেন, এ দিন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আর বিতর্কসভার আয়োজন করা হয়। কিন্তু এ বার কোনও পড়ুয়াই আসেনি।
শ্রীনগরের অতিরিক্ত ডেপুটি কমিশনারের দফতরের সামনে কয়েক দিন ধরেই দেখা যাচ্ছে লম্বা লাইন। পরিবারের যে সব সদস্যকে আটক করা হয়েছে তাদের জামিনে মুক্ত করা যায় কি না তা জানতে আসছেন মানুষ। কিন্তু বিশেষ ফল মিলছে না।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উপরে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফলে ধাক্কা খেয়েছে চিকিৎসা পরিষেবা। শ্রীনগরের দুই বড় হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। কিন্তু তাঁদের চিকিৎসার উপযুক্ত ব্যবস্থা করা ক্রমশই কঠিন হয়ে দাঁড়াচ্ছে বলে জানাচ্ছেন চিকিৎসকেরা। কাশ্মীরের বাইরে থাকা পরিবার-পরিজনের সঙ্গে কথা বলাও বন্ধ। এমনকি ইদের শুভেচ্ছাটুকুও জানাতে পারেননি অনেকে। এম ইউসুফ খানের ছেলে ইকবাল জার্মানিতে ডক্টরেট করছেন। ইউসুফ বললেন, ‘‘প্রায় এক মাস কথা হয়নি। ও কেমন আছে জানি না।’’
মনোবিদদের মতে, নিষেধাজ্ঞায় কাশ্মীরে গভীর মানসিক আঘাত পাচ্ছে শিশুরা। থেরাপির মাধ্যমে শিশুদের মানসিক সমস্যার মোকাবিলার কাজ করেন পারভেজ মাসুদি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘স্কুল বন্ধ। স্বাভাবিক জীবন নেই। ফলে শিশুরা বড় ধাক্কা খাচ্ছে। পরে এর ফল জানা যাবে।’’