সংসদে ঢুকছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। মঙ্গলবার। ছবি: এপি।
শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় ৩৭০ অনুচ্ছেদের ঘোর বিরোধী ছিলেন। জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা বাতিল করাই ছিল তাঁর জনসঙ্ঘের প্রধান লক্ষ্য। নরেন্দ্র মোদী ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিল করে সেই বঙ্গসন্তান শ্যামাপ্রসাদের ইচ্ছাই পূরণ করলেন বলে এ বার বাঙালির আবেগ উস্কে দেওয়ার কৌশল নিচ্ছে বিজেপি।
ভারতীয়দের ‘পারমিট’ নিয়ে কাশ্মীর যাওয়ার নিয়ম সত্ত্বেও ১৯৫৩-য় সেই নিয়ম ভেঙে কাশ্মীরে ঢুকেছিলেন শ্যামাপ্রসাদ। সেখানে গ্রেফতারের পর বন্দি অবস্থাতেই তাঁর মৃত্যু হয়। আজ লোকসভায় প্রধানমন্ত্রীর দফতরের প্রতিমন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ বলেন, ‘‘যে দিন ওঁর মৃতদেহ কলকাতায় পৌঁছেছিল, পশ্চিমবঙ্গের সাংসদরা জানেন, সে দিন কী বিরাট জনসমাগম হয়েছিল।’’ এখন তৃণমূল কংগ্রেস ৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করার বিরোধিতা করে সেই শ্যামাপ্রসাদের ‘পবিত্র স্মৃতি’-র অপমান করেছে বলে অভিযোগ তুলেছে বিজেপি। আজই তৃণমূলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, তৃণমূল এই বিলের পক্ষে ভোট দিচ্ছে না। কারণ মোদী সরকারের উচিত ছিল, আগে জম্মু-কাশ্মীরের রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনা করা। বিজেপির ‘থিঙ্ক ট্যাঙ্ক’ শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় রিসার্চ ফাউন্ডেশন-এর ডিরেক্টর অনির্বাণ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, ‘‘রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়ের স্মৃতির অপমান করছেন। তাঁর প্রাণদানকে অবজ্ঞা, উপহাস করছেন। আমি বাঙালি হিসেবে এই অবস্থানের নিন্দা করছি।’’
৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের করার পরে এ বার বিজেপির কৌশল, রাজ্যে রাজ্যে গিয়ে এর কারণ বোঝানো। বিজেপি বোঝাবে, এই ৩৭০ অনুচ্ছেদের জন্যই জম্মু-কাশ্মীরে বিচ্ছিন্নতাবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মাথাচাড়া দিয়েছিল এবং উন্নয়ন থমকে ছিল। এর মধ্যে যে কোনও মুসলিম বিরোধিতা নেই, এতে জম্মু-কাশ্মীরের
হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, সকলের উপকার হবে, তা-ও বোঝানোর চেষ্টা করবে তারা।
একই কর্মসূচি নেওয়া হবে পশ্চিমবঙ্গেও। রাজ্যে, বিশেষ করে এই ক্ষেত্রে জনসঙ্ঘের প্রতিষ্ঠাতা শ্যামাপ্রসাদের গুরুত্ব বোঝানো হবে। অনির্বাণ বলেন, ‘‘৩৭০ অনুচ্ছেদ রদ করার প্রয়োজনীয়তা শ্যামাপ্রসাদ তখনই বুঝতে পেরেছিলেন। কিন্তু তৃণমূলনেত্রী শুধু মাত্র তাঁর ভোটব্যাঙ্কের রাজনীতির জন্য এর বিরোধিতা করছেন।’’
আজ লোকসভায় জিতেন্দ্র বলেন, ‘‘আজ থেকে ৬৬ বছর আগে জম্মু-কাশ্মীরে প্রবেশ করে শ্যামাপ্রসাদ গ্রেফতারি বরণ করেছিলেন। গ্রেফতারির সময় তিনি তাঁর তরুণ সহযোগী অটলবিহারী বাজপেয়ীকে বলেছিলেন, অটল, গোটা দুনিয়াকে গিয়ে জানিয়ে দাও, শ্যামাপ্রসাদ পারমিট ছাড়াই জম্মু-কাশ্মীরে ঢুকেছেন। আজ উনি বেঁচে থাকলে নিজের ভঙ্গিতে বলতেন, যাও দুনিয়াকে বলো, মোদী ৩৭০ অনুচ্ছেদ খারিজ করে দিয়েছেন।’’
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ আজ লোকসভায় বলেন, বাংলা বা অন্য রাজ্যের ছেলেমেয়েরাও বলছে, কাশ্মীর ভারতের অখণ্ড অঙ্গ। উত্তরপ্রদেশ সম্পর্কে এ কথা বলতে হয় না। কারণ কাশ্মীরেই ৩৭০ অনুচ্ছেদ ছিল।
শাহ আজ স্পষ্ট করে দিয়েছেন, বিজেপি শ্যামাপ্রসাদের সমালোচনা শুনতে রাজি নয়। ন্যাশনাল কনফারেন্সের সাংসদ হসনৈন মসুদি আজ যুক্তি দিয়েছিলেন, শ্যামাপ্রসাদ ৩৭০ অনুচ্ছেদ চালু করার সময় নেহরুর ক্যাবিনেটের অংশীদার ছিলেন। অমিত তার প্রতিবাদ করে বলেন, ক্যাবিনেটে থাকা মানে একে সমর্থন করা নয়। তা ছাড়া সে সময় সংবিধান সভা নিজের মতো সংবিধান তৈরি করছিল। তা ক্যাবিনেটের মাধ্যমে হত না।