আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে উঠে আসছে অন্য কাশ্মীরের ছবি
সামনেই ইদ। সরকারের তরফে চেষ্টা করা হচ্ছে শান্তিপূর্ণ কাশ্মীরের একটা ছবি তুলে ধরার। এই সময়েই ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসি-র প্রতিবেদনে উঠে আসছে অন্য এক উপত্যকা, যেখানে ক্রোধের আগুন ছড়িয়ে রযেছে ইতিউতি।
দু’দিন ধরে উপত্যকা ঘুরে বিবিসি নিউজে নিজের অভিজ্ঞতা লিখেছেন এক সাংবাদিক। তাঁর লেখনীতে স্পষ্ট,উপত্যকায় রোষের আগুন ধিকধিক করে জ্বলছে। ওই সাংবাদিকের দাবি, দু’দিনের সফরে বহু মানুষের সঙ্গে তিনি দেখা করেছেন। পদে পদে ব্যারিকেডে আটকানো হয়েছে তাঁকে। সেসব পেরিয়ে মানুষের কাছে পৌঁছে যখন জিজ্ঞেস করেছেন কেমন আছেন, উত্তর এসেছে—‘‘সরকার আমাদের সঙ্গে নৃশংসতা করছে। দিন রাত চার দেওয়ালে আটকে থাকতে হচ্ছে।’’
আরও পড়ুন: কাশ্মীরে ফের পথে ডোভাল, ঘুরে দেখলেন বাজার থেকে ইদগাহ
আরও পড়ুন: ছন্দ ফেরানোর সরকারি প্রচেষ্টা শুরু, ইদে সব কিছু স্বাভাবিক থাকবে তো, প্রশ্ন ঘুরছে উপত্যকায়
সাংবাদিককে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলতেও বাধা দিয়েছে পুলিশ। সাবধান করে বলা হয়েছে, কার্ফু চলছে। তিনি দেখেছেন কার্ফু ভয়ে যুবকেরা ঘরে ফিরে গেলেও, বন্দুকের দিকে পাল্টা তর্জনি উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছেন অকুতোভয় বৃদ্ধ। এমনটাই দাবি করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে।
ততক্ষণে তাঁকে এলাকা ছাড়ার নির্দেশও দেওয়া হয়েছে। এলাকা ছাড়তে ছাড়তে সাংবাদিক দেখেছেন, বাচ্চা কোলে নিয়ে বিক্ষুব্ধ মধ্যবয়স্ক বলেছেন, ‘‘আমার বাচ্চা এখন ছোট, বড় হলে ওকে বন্দুক ধরতে শেখাব।’’
ওই প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, কাশ্মীরের বহু মানুষ আর এই দমন পীড়নে বাঁচতেই আগ্রহী নন। দিল্লিতে থাকা রিজওয়ান মালিক নামে এক কাশ্মিরী নাগরিকের বয়ানও উঠে এসেছে ওই প্রতিবেদনে। সেখানে রিজওয়ান জানাচ্ছেন, ৩৭০ অনুচ্ছেদ প্রত্যাহারের আগের দিন অর্থাৎ রবিবার তিনি পরিবারের লোকের সঙ্গে কথা বলেছেন। সোমবার থেকেই পরিবারের লোকের কোনও খোঁজ না পেয়ে উদ্বিগ্ন হয়ে তিনি বিমানে চড়ে শ্রীনগরে পৌঁছন। তবে মেলেনি পরিবারে সঙ্গে দেখা করার ছাড়পত্র। অনেকটা সময় অপেক্ষা করার পরে দিল্লি ফিরে যেতে বাধ্য হন ২৫ বছর বয়সি এই অ্যাকাউন্ট্যান্ট।
জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের শোপিয়ান উপত্যকা পরিদর্শনের ঘটনার নিন্দাও করা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে। সেখানে বলা হয়েছে, এটি বিশ্বের দরবারে কাশ্মীরের স্বাভাবিকতা তুলে ধরার একটি অপচেষ্টা।
অন্য দিকে, শনিবার ডোভাল অনন্তনাগের মতো স্পর্শকাতর অঞ্চলে পৌঁছন। ঘুরে দেখেছেন এলাকার বাজার, ইদগাহ। সব মিলে যখন কাশ্মীরের অবস্থা একটু করে স্বাভাবিক হওয়ার বার্তা মিলছে কেন্দ্রের তরফে, তখন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে উঠে আসা এই বিপরীত ছবি কেন্দ্রের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে।