—ফাইল চিত্র।
আইন বাতিল হয়ে গিয়েছে ঢের আগে। অথচ সেই আইনে গ্রেফতারি জারি আজও। তা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে তিরস্কৃত কেন্দ্রীয় সরকার। সরকারের বিরুদ্ধে মুখ খুলে গত কয়েকবছরে গ্রেফতার হয়েছেন একাধিক সমাজকর্মী। তাঁদের গ্রেফতারির বিরুদ্ধে আদালতে আবেদন জমা পড়েছিল। তার শুনানিতেই বিষয়টি উঠে এসেছে। তা নিয়ে সোমবার কেন্দ্র সরকারের তীব্র সমালোচনা করে শীর্ষ আদালত। যে বা যাঁরা ওই বাতিল আইনে গ্রেফতারির নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁদের জেলে ঢোকানো হবে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছে।
২০০০ সালে ভারতে তথ্যপ্রযুক্তি আইন পাস হয়। ৬৬(এ) ধারাটি তাতে যোগ হয় ২০০৮ সালে, একটি সংশোধনী প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। তাতে বলা হয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও লেখা পড়তে গিয়ে যদি মনে হয়, সেটি অপমানজনক বা ভুয়ো, তাহলে যেই লিখুন না কেন, সেটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে গন্য হবে। তার জন্য ৩ বছরের সাজাও হতে পারে। ২০১৫ সালে একটি মামলার শুনানিতে ওই ধারাটিকে অসংবিধানিক ও বাক স্বাধীনতা বিরুদ্ধ তকমা দেয় সর্বোচ্চ আদালত। প্রশ্ন তোলে, একটা লেখা কারও পছন্দ না হলেই সেটা শাস্তিযোগ্য অপরাধ কী করে হয়? স ধারাটিতে অসচ্ছতা রয়েছে বলেও জানায় আদালত। তাই সেটি বাতিল করা হয়।
কিন্তু ধারা বাতিল হলেও, ২০১৫ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত ২২ জনেরও বেশি সমাজকর্মীকে ৬৬(এ) ধারায় গ্রেফতার করা হয়েছে। তা নিয়ে আদালতে একটি আবেদন জমা দেয় স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা পিপলস ইউনিয়ন ফর সিভিল লিবার্টিজ (পিইউসিএল)। সোমবার সেটির শুনানি করছিল বিচারপতি আর নারিমান ও বিনীত সরনের ডিভিশন বেঞ্চ। তাঁরা বলেন, “অসংবিধানিক বলে ৬৬(এ) ধারাটি আগেই বাতিল করা হয়েছে। তা সত্ত্বেও যদি ওই ধারায় গ্রেফতারি জারি থাকে, তা হলে ভয়ঙ্কর ব্যাপার। অভিযোগ সত্যি প্রমাণিত হলে কড়া পদক্ষেপ করা হবে। যে বা যাঁরা গ্রেফতারির নির্দেশ দিয়েছেন, তাঁদের প্রত্যেককে জেলে ঢোকানো হবে।”
আরও পড়ুন: ‘সিঙ্ঘম’ হতে গিয়ে বেকায়দায়, আলিপুরদুয়ারের ডিএম-কে ছুটিতে পাঠিয়ে দিল নবান্ন
আরও পড়ুন: উচ্চবর্ণের আর্থিক দুর্বলদের জন্য ১০ শতাংশ সংরক্ষণ! ভোটের মুখে কল্পতরু মোদী সরকার
আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে নরেন্দ্র মোদী সরকারের কাছে এ ব্যাপারে জবাব চেয়ে পাঠিয়েছেন তাঁরা।
পিইউসিএল-এর তরফে ওই আবেদনে বলা হয়, বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমের রিপোর্ট, ন্যাশনাল ক্রাইম রিপোর্ট ব্যুরো (এনসিআরবি) এবং এই সংক্রান্ত নানা মামলার নথি ঘেঁটে বিষয়টি নজরে এসেছে তাদের। দেশের আইনব্।বস্থা নিয়ে যদিও সবিস্তার কিছু পাওয়া যায়নি সেখানে, তবে বাতিল হওয়া সত্ত্বেও ভারতীয় আইন ব্যবস্থায় ৬৬(এ) ধারাটি আজও বহাল রয়েছে বলে নিশ্চিত করা গিয়েছে।
বিতর্কিত ওই ধারাটির বিরুদ্ধে বহুদিন ধরে প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন সমাজকর্মী, বাক স্বাধীনতা এবং ইন্টারনেটের স্বাধীনতা সংক্রান্ত বিভিন্ন সংস্থা। তবে ধারাটিকে সুপ্রিম কোর্টে প্রথম চ্যালেঞ্জ জানান আইনের ছাত্রী শ্রেয়া সিংহল। ২০১২ সালে দুর্নীতির ব্যাখ্যা করতে কার্টুন আঁকায় গ্রেফতার হন অসীম ত্রিবেদী। ওই বছরই ইমেলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কার্টুন চালাচালির জন্য গ্রেফতার হন কলকাতার যাদবপুর ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র। তার পরে সুপ্রিম কোর্টে ওই ধারার বিরুদ্ধে আবেদন জানান বহু সমাজকর্মী ও সংগঠন। তাঁদের দাবি ছিল, ধারাটিতে স্পষ্ট করে কিছু বলা নেই। তাই যে যার ইচ্ছে মতো আইন ব্যাখ্যা করে নিচ্ছে। এ ভাবে চললে আইনের অপব্যবহার বাড়বে।