ডিএসপি দেবেন্দ্র সিংহ। —ফাইল চিত্র
সংসদ হামলায় নাম জড়ালেও উর্দিতে এতদিন পর্যন্ত কালির দাগ লাগেনি। কিন্তু ধরা পড়ার পর সেই অভিযোগ খতিয়ে দেখতে শুরু করেছেন গোয়েন্দারা। তার সঙ্গে এ বার পুলওয়ামা কাণ্ডেও নাম জড়াল জঙ্গিদের সঙ্গে একই গাড়িতে ধরা পড়া জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিএসপি দেবেন্দ্র সিংহের। সরকারি ভাবে এখনও অভিযোগের সারবত্তা স্বীকার না করা হলেও বিষয়টি তদন্তের আওতা থেকে বাদ দিতে চাইছেন না তদন্তকারী একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার কর্তারা। শুরু হয়েছে রাজনৈতিক তরজাও। পুলওয়ামা কাণ্ডে জড়িত থাকতে পারেন এবং সেই বিষয়টিও তদন্ত করে দেখা উচিত বলে দাবি করেছেন কংগ্রেসের লোকসভার দলনেতা অধীর চৌধুরী।
শনিবার দুই জঙ্গি এবং তাদের এক সাহায্যকারীকে নিজের গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়ার সময় গ্রেফতার হন জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের ডিএসপি। সেই গাড়ি থেকেই পাঁচটি গ্রেনেড উদ্ধার হয়। ডিএসপির বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে মেলে একাধিক একে-৪৭ সিরিজের রাইফেল ও প্রচুর নগদ টাকা। তার পর থেকেই জম্মু-কাশ্মীর পুলিশের পাশাপাশি কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি), গুপ্তচর সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইং (র), সেনা গোয়েন্দা-সহ বিভিন্ন সংস্থা তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ চালিয়ে যাচ্ছে। জঙ্গিদের নিজের গাড়িতে নিয়ে যাওয়া, নিজের বাড়িতে আশ্রয় দেওয়া এবং তাদের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকা নেওয়ার কথা দেবেন্দ্র স্বীকার করে নিয়েছেন বলে দাবি গোয়েন্দাদের। তার মধ্যেই এ বার গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে আত্মঘাতী জঙ্গি হানায় জড়িয়ে গেল দেবেন্দ্রর নাম।
অধীর চৌধুরী একটি জাতীয় সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘‘নতুন করে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা উচিত। পুলওয়ামা হামলায় অভিযুক্তের তালিকায় দেবেন্দ্র সিংহকেও অন্তর্ভুক্ত করে পুর্নাঙ্গ তদন্ত হওয়া উচিত।’’ পাশাপাশি বিজেপিকে নিশানা করে অধীরের টুইট, ‘‘ধৃত ডিএসপির নাম যদি দেবেন্দ্র সিংহ না হয়ে দেবেন্দ্র খান হত, তা হলে আরএসএস-এর ট্রোল রেজিমেন্ট ঝাঁপিয়ে পড়ে তীব্র আক্রমণ শুরু করত। দেশের শত্রুকে জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে নিন্দা করা উচিত।’’
বহরমপুরের কংগ্রেস সাংসদ বিতর্ক উস্কে দিলেও তদন্তকারী বাহিনীর কর্তারা অবশ্য এখনই বিষয়টি নিশ্চিত করতে চাইছেন না। বরং দেবেন্দ্রকে পুলওয়ামা তদন্তের বাইরেই রাখতে চাইছেন। তাঁদের যুক্তি, পুলওয়ামা হামলার আগে ২০১৮ সালের শেষের দিকে দেবেন্দ্র বদলি হন শ্রীনগরে হাইজ্যাক বিরোধী ইউনিটে। তাঁর পোস্টিং হয় শ্রীনগর বিমানবন্দরে। তার আগে পর্যন্ত তিনি পুলওয়ামার দার জেলায় আর্মড গার্ডের ডিএসপি পদে ছিলেন। স্পেশাল অপারেশনস গ্রুপ (এসওজি)-এ ছিলেন না। জম্মু-কাশ্মীরে জঙ্গি হানা এবং তাদের গতিবিধি সম্পর্কে যাবতীয় তদন্ত ও তথ্য সংগ্রহের ভার থাকে এই এসওজি-র উপরেই।
আবার পুলওয়ামা কাণ্ডের তদন্তের সঙ্গে যুক্ত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশকর্তা বলেন, ‘‘পুলওয়ামার হামলার তদন্তে ভিতরের কারও যোগ এখনও পাওয়া যায়নি। ওই হামলা চালিয়েছিল পাকিস্তানের জঙ্গি গোষ্ঠী জইশ-ই-মহম্মদ। হামলার দায়িত্ব ছিল মুফতি আসগর। যদিও তদন্তকারীদের একটি সূত্রে খবর, কোনও সম্ভাবনাই উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। সব কিছুই স্ক্যানারে রাখা হয়েছে। প্রয়োজনমতো পদক্ষেপ করা হবে।
গত বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি পুলওয়ামায় সিআরপিএফ কনভয়ে আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায় পাক জঙ্গিরা। প্রায় ১০০ কেজি বিস্ফোরক বোঝাই একটি গাড়়ি কনভয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। তাতে মারা যান ৪৪ জন সিআরপিএফ জওয়ান।