প্রতীকী ছবি।
স্বাধীনতা দিবসের দিনই জম্মু কাশ্মীরে নিয়ন্ত্রণরেখায় বরফের নীচে থেকে উদ্ধার হল ছ’মাস আগে নিখোঁজ হওয়া এক জওয়ানের দেহ। গুলমার্গে উদ্ধার হওয়া রাজেন্দ্র সিংহ নেগি (৩৬) ভারতীয় সেনাবাহিনীর ১১ গঢ়বাল রাইফেলসের হাবিলদার পোস্টে কর্মরত ছিলেন। শ্রীনগরের সেনা হাসপাতালে মেডিক্যাল প্রক্রিয়ার পর পরিবারের হাতে দেহ তুলে দেওয়া হবে। ১৯ অগস্ট তাঁর দেহ দেহরাদূনের বাড়িতে পৌঁছবে বলে সেনা আধিকারিকরা পরিবারের সদস্যদের জানিয়েছেন।
সেনা সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বছরের জানুয়ারিতে গুলমার্গে টহলদারির সময় পা পিছলে খাদে পড়ে যান রাজেন্দ্র। পুরু বরফের নীচে চাপা পড়ে যান তিনি। সেনাবাহিনীতে নিখোঁজের রিপোর্ট দায়ের হয় ৮ জানুয়ারি। যদিও সেনার তরফে সরকারি ভাবে সে বিষয়ে কিছু জানানো হয়নি তখন। তার পর থেকেই নিখোঁজ রাজেন্দ্রর খোঁজে সবরকম চেষ্টা চালানো হচ্ছিল। কিন্তু কোনও সন্ধান না পেয়ে জুন মাসে তাঁকে শহিদ ঘোষণা করা হয়। ২১ জুন পরিবারকে সে কথা জানিয়ে দেওয়া হয়।
কিন্তু রাজেন্দ্রর স্ত্রী রাজেশ্বরী দেবী সে কথা মেনে নিতে পারেননি। সেনা কর্তৃপক্ষকে তিনি জানিয়ে দিয়েছিলেন, মৃতদেহ নিজে চোখে না দেখা পর্যন্ত তাঁরা রাজেন্দ্রর মৃত্যু হয়েছে, এ কথা মেনে নেবেন না। অবশেষে গত কাল স্বাধীনতা দিবসের দিনই সেই মৃতদেহ উদ্ধারের পর ফের তাঁদের খবর পাঠানো হয়েছে।
বরফের নীচে দেহ চাপা পড়লে তাতে পচন ধরে না। সেনা আধিকারিকদের সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার সেনা জওয়ানরা গুলমার্গে নিয়ন্ত্রণরেখা বরাবর টহলদারির সময় পুরু বরফের নীচে চাপা পড়া একটি দেহ দেখতে পান। তার পর বরফ কেটে সরিয়ে সেই দেহ উদ্ধার করেন সেনা জওয়ানরা। পরে তাঁর সহকর্মীরাই তাঁর দেহ চিহ্নিত করেন। জানুয়ারি মাসে শীতের সময় গুলমার্গ-সহ প্রায় গোটা উপত্যকাই বরফের চাদরে ঢাকা পড়ে। শীত বিদায়ের সঙ্গে সঙ্গে সেই বরফ গলতে শুরু করে। সেনাকর্তারা মনে করছেন, এ ক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে। বিরাট পুরু বরফের চাদরের উপরের অংশ বাহ্যিক আবহাওয়ার কারণে অনেকটাই গলে যাওয়ায় বরফের উপরের স্তরে উঠে এসেছিল দেহ।
আরও পড়ুন: আগের চেয়ে ভাল আছেন প্রণব, জানালেন ছেলে অভিজিৎ
রাজেন্দ্রর কাকা রঘুবীর সিংহ নেগীকে সেনার তরফে ফোন করে পুরো বিষয়টি জানানো হয়। তিনি বলেন, ‘‘রাজেন্দ্রর মর্মান্তিক পরিণতির কথা শনিবার সন্ধ্যায় আমাকেই ফোনে জানানো হয়। ওঁরা (সেনাকর্তারা) বলেছেন, টহলদারির সময় পুরু বরফের নীচে রাজেন্দ্রর দেহের সন্ধান মেলে। ওরাঁ আরও জানিয়েছেন, নেগির দেহ শ্রীনগরের হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। চিকিৎসকরা মৃত্যু পরবর্তী প্রক্রিয়া সারছেন। সেই প্রক্রিয়া সারা হলে আমাদের হাতে দেহ তুলে দেওয়া হবে।’’ তবে প্রথমে পরিবারকে জানানো হয়েছিল, রবিবারই দেহ বাড়িতে পাঠানো হবে। কিন্তু পরে সেনা কর্তারা জানান, দেহ পৌঁছবে ১৯ অগস্ট।
আরো পড়ুন: ফের উত্তরপ্রদেশ, ধর্ষণের পর চোখ উপড়ে, জিভ কেটে খুনের অভিযোগ
তবে প্রাথমিক পর্যায়ে গঢ়বাল রাইফেলসে রাজেন্দ্রর সহকর্মী ও সেনা আধিকারিকরা মনে করেছিলেন, পা পিছলে পড়ে পাহাড়ের খাদ গড়িয়ে হয়তো পাকিস্তানের দিকে চলে গিয়েছিলেন রাজেন্দ্র। যদিও পরে সেনাবাহিনী সেই তত্ত্ব খারিজ করে দেয়।
উত্তরাখণ্ডের চামোলি জেলার বাসিন্দা রাজেন্দ্র সেনাবাহিনীতে যোগ দেন ২০০১ সালে। তবে বছর তিনেক আগে চামোলি থেকে পাকাপাকি ভাবে দেহরাদুনে স্ত্রী ও তিন সন্তানকে নিয়ে বসবাস করতে শুরু করেন। তবে তাঁর মা-বাবা এখনও চামোলিতেই থাকেন। ছেলের শেষকৃত্যে যোগ দিতে সোমবার দেহরাদুনে যাচ্ছেন তাঁরা।