জেনারেল রাওয়াতের সিকিম যাওয়াকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। —ফাইল চিত্র।
সিকিম পৌঁছলেন ভারতের সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত। ডোকা লা সীমান্তে ভারতীয় এবং চিনা বাহিনীর তৎপরতা আচমকা বেড়েছে সম্প্রতি। দু’দেশই সীমান্তে বিশাল বাহিনী পাঠিয়েছে এবং তারা এখন মুখোমুখি অবস্থানে। এই পরিস্থিতিতেই সিকিম গেলেন জেনারেল রাওয়াত। সেনা সূত্রে জানানো হচ্ছে, জেনারেল রাওয়াতের এই সিকিম সফর আসলে রুটিনমাফিক। কিন্তু ভারত-ভুটান-চিন সীমান্তে উত্তেজনা আচমকা যে ভাবে বেড়েছে, তার প্রেক্ষিতে সেনাপ্রধানের সিকিম যাওয়া এবং বাহিনীর প্রস্তুতি ও বিন্যাস খতিয়ে দেখার কর্মসূচিকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা।
ভারতীয় বাহিনী সিকিমে ঠিক কতটা প্রস্তুত, তা নিজেই খতিয়ে দেখবেন সেনাপ্রধান। কোন অঞ্চলে বাহিনীর বিন্যাস কেমন, সীমান্তে কত সেনা মোতায়েন করা হয়েছে, সে সব নিয়ে বাহিনীর অন্য পদস্থ কর্তাদের সঙ্গে সেনাপ্রধানের আলোচনা হবে বলে জানা গিয়েছে। সিকিমে সেনার ফর্মেশন হেডকোয়ার্টারে এই বৈঠকের আয়োজন হয়েছে বলে খবর।
তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সিকিম সীমান্ত উত্তপ্ত। ভারত-চিন-ভুটান সীমান্তে অবস্থিত ডোকা লা মালভূমি অঞ্চলকে ঘিরে উত্তেজনা বেড়েছে। চিনা সেনা সীমান্ত লঙ্ঘন করে ভারতীয় এলাকায় ঢুকে বুলডোজার দিয়ে দু’টি বাঙ্কার ভেঙে দিয়েছে বলে অভিযোগ। ওই অঞ্চলে সীমান্ত পাহারা দেওয়ার দায়িত্বে থাকা ইন্দো-টিবেটান বর্ডার পুলিশের (আইটিবিপি) ক্যাম্প সীমান্ত থেকে বেশ কিছুটা ভিতরে। ‘লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল’ (এলএসি) বরাবর টহল দেওয়ার সময় ভারতীয় জওয়ানরা সীমান্ত লাগোয়া বাঙ্কারগুলিতে বিশ্রাম নিতেন। তাই বাঙ্কার ভাঙার খবর পেয়েই ক্যাম্প থেকে বাহিনী পৌঁছে যায় এলএসি-তে। বাড়তে থাকে উত্তেজনা।
সিকিম সীমান্তে সৈন্য সমাবেশ কতটা, যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলায় বাহিনী কতটা প্রস্তুত, সেনাপ্রধান সে সব নিয়ে বিশদে আলোচনা করেছেন। —ফাইল চিত্র।
এর পরেই গ্যাংটকের ১৭ নম্বর ব্ল্যাক ক্যাট ডিভিশন এবং সুকনার কোর কম্যান্ডারের অফিস থেকে বাড়তি সেনা পৌঁছয় ওই এলাকায়। সব মিলিয়ে চার ব্যাটেলিয়ন সেনা জমায়েত করে ফেলা হয় কয়েক দিনের মধ্যেই। পৌঁছে যান ওই তল্লাটের দুই ব্রিগেডিয়ারও। মাউন্টেন ডিভিশনের এক মেজর জেনারেলও এলাকা পরিদর্শনে যান। চিনও বাড়তি সেনা নিয়ে আসে। ফলে পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন: সিকিম সীমান্তে গোপন ঘাঁটি তৈরির চেষ্টা আটকে দেওয়ায় গর্জন শুরু চিনের
পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে ভারত ফ্ল্যাগ মিটিংয়ের অনুরোধ করেছিল। কিন্তু কোনও জুনিয়র অফিসারের উপস্থিতিতে বৈঠক করতে চায়নি চিন। শেষ পর্যন্ত ২০ জুন ভারতের এক ব্রিগেডিয়ার এবং চিনের এক মেজর জেনারেল উপস্থিতিতে বৈঠক হয়। কিন্তু তাতেও সমস্যা মেটেনি। কারণ, চিন কোনও মতেই আন্তর্জাতিক সীমান্ত থেকে পিছিয়ে যেতে নারাজ। ফলে ভারতীয় সেনাও পূর্ণ প্রস্তুতি বজায় রাখছে।
আরও পড়ুন: উত্তপ্ত হচ্ছে সিকিম-তিব্বত সীমান্ত, ডোকা লা-য় মুখোমুখি ৮ হাজার সেনা
ডোকা লা চিনের এলাকা না হওয়া সত্ত্বেও, চিন ওই অঞ্চলে রাস্তা তৈরির চেষ্টা করছিল। কৌশলগত ভাবে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এমন একটি অঞ্চলে চিন সামরিক ঘাঁটি তৈরির করার চেষ্টা করছিল, যাতে ভারতের স্বার্থ অরক্ষিত হয়ে পড়ার আশঙ্কা ছিল। রাস্তা তৈরির চেষ্টা ভারতীয় বাহিনী একাই আটকে দেয়। আর ভুটানকে সঙ্গে নিয়ে ভেস্তে দেওয়া হয় সামরিক ঘাঁটি তৈরির চেষ্টাও।
সীমান্ত এলাকায় চিনের স্বেচ্ছাচারিতার চেষ্টা ভারত এই ভাবে আটকে দেবে, বেজিং তা একেবারেই আশা করেনি। তাই বাধা পেয়ে এখন সীমান্তে আস্ফালন শুরু করেছে চিনা বাহিনী। ভারতীয় বাহিনী যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে বলে খবর। সেনাপ্রধান নিজে এই পরিস্থিতিতে সিকিমে যাওয়ায় আরও স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে, সীমান্তের পরিস্থিতিকে একেবারেই হালকা করে দেখছে না নয়াদিল্লি।