প্যাংগং লেক এলাকায় গুলি চালাল চিনা বাহিনী। ছবি: সংগৃহীত
প্যাংগং লেক এলাকায় চিনা বাহিনীর গুলি চালানো ঘিরে উত্তেজনা বাড়ছে পূর্ব লাদাখের প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায়। ঘটনার পরেই বাড়তি সেনা মোতায়েন করছে নয়াদিল্লি। অন্য দিকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে ঘটনার রিপোর্ট দিয়েছেন সেনাপ্রধান এম এম নরবণে। এ নিয়ে আজ সাউথ ব্লকে উচ্চ পর্যায়ের জরুরি বৈঠক হতে পারে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের একটি সূত্রে খবর। অন্য দিকে ভারতীয় সেনার তরফে বিবৃতি দিয়ে জানানো হল, চিনা বাহিনী ভারতীয় সেনার একটি ফরওয়ার্ড পোস্টের কাছাকাছি চলে এসেছিল। তবে ভারতীয় জওয়ানরা সংযত থাকায় বড়সড় অঘটন এড়ানো গিয়েছে।
গালওয়ান উপত্যকায় সংঘর্ষের পর দু’পক্ষের আলোচনায় সেনা সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। গালওয়ান থেকে সেনা সরলেও প্যাংগংয়ে এখনও ৪ মে-র আগের পরিস্থিতি এখনও ফেরায়নি বেজিং। উপরন্তু গত কয়েক দিন ধরে ক্রমাগত প্ররোচনা দিয়ে চলেছে। সোমবার সন্ধ্যার দিকেও তেমনই চিনা আগ্রাসনের জেরে সীমান্তে চরম উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্যাংগং-এর দক্ষিণে একটি ফরওয়ার্ড পোস্টের কাছাকাছি চলে আসে চিনা বাহিনী। ভারতীয় সেনা জওয়ানদের ভয় দেখাতে শূন্যে কয়েক রাউন্ড গুলি চালায় চিনা ফৌজ। কিন্তু বেজিং দাবি করেছে, ভারতীয় সেনাই গুলি চালিয়েছে।
ভারতীয় সেনা বেজিংয়ের দাবি উড়িয়ে বিবৃতি দিয়ে জানিয়েছে, ‘‘যথন কূটনৈতিক, সামরিক ও রাজনৈতিক স্তরে দু’দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে, তার মধ্যেও চিনের পিপল্স লিবারেশন আর্মি (পিএলএ) বেপরোয়া ভাবে চুক্তি ভঙ্গ করে আগ্রাসনের চেষ্টা চালাচ্ছে। ৭ সেপ্টেম্বর সোমবারের ঘটনায় পিএলএ-ই প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় ফরোয়ার্ড পোস্টের কাছে চলে আসে। তবে চিনা বাহিনীরই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ফিরে যায়। কিন্তু যাওয়ার আগে আমাদের সেনাকে ভয় দেখাতে শূন্যে কয়েক রাউন্ড গুলি চালায়। তবে এত গুরুতর প্ররোচনা ও উস্কানি সত্ত্বেও আমাদের সেনা সংযত থেকেছে এবং পরিণত বুদ্ধিমত্তার পরিচয় দিয়েছে।’’
আরও পড়ুন: ফের প্ররোচনা, প্যাংগং-এ শূন্যে গুলি চালিয়ে ভারতকেই দূষল বেজিং
ভারতীয় সেনা কখনও নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করেনি জানিয়ে বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, ‘‘ভারত যেখানে সেনা সরানোর প্রক্রিয়া চালাচ্ছে এবং স্থিতাবস্থা ফেরানোর চেষ্টা করছে, তখন নিয়ন্ত্রণরেখায় ক্রমাগত প্ররোচনা দিয়ে চলেছে চিন। কোনও অবস্থাতেই ভারতীয় সেনা নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করেনি বা কোনওরকম প্ররোচনামূলক কাজকর্ম করেনি।’’
অন্য দিকে চিনের গুলি চালানোর ঘটনার বিস্তারিত রিপোর্ট প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে জানিয়েছেন সেনাপ্রধান। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকেও জানানো হয়েছে বলে একটি সূত্রে খবর। আজ মঙ্গলবার বিষয়টি নিয়ে বৈঠকে বসতে পারেন প্রতিরক্ষা ও সেনা কর্তারা। সূত্রের খবর, প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পাশাপাশি চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ (সিডিএস) বিপিন রাওয়াত, সেনার তিন বাহিনীর প্রধানও বৈঠকে থাকতে পারেন।
আরও পড়ুন: ‘লাদাখের পরিস্থিতি অত্যন্ত গুরুতর’, প্রভাব ফেলবে সম্পর্কে, মস্কো বৈঠকের আগে বললেন জয়শঙ্কর
সেনা সূত্রে ঘটনার সোমবার সন্ধ্যার ঘটনার একটি বিবরণও উঠে এসেছে। জানা গিয়েছে, সোমবার সন্ধে ৬টা থেকে ৭টার মধ্যে ঘটনাটি ঘটে। চিনের একটি টহলদারি বাহিনী দক্ষিণ প্যাংগং লেকে ভারতীয় ফরওয়ার্ড পোস্টের কাছাকাছি চলে আসে। ওই এলাকা গুরুং পাহাড় ও রাজাংলা পাহাড়ের মাঝামাঝি পড়ে। সেখানে একটি চূড়ায় ভারতীয় সেনা মোতায়েন রয়েছে। ভারতীয় জওয়ানদের বক্তব্য, ওই চূড়া থেকে তাঁদের সরিয়ে ওই পোস্টের দখল নিতেই এসেছিল চিনা ফৌজ। জওয়ানরা তা বুঝতে পেরে সতর্ক পজিশন নিয়ে নেয়। কিন্তু কিছুক্ষণের মধ্যেই সম্ভবত নিজেদেরই উপর মহলের নির্দেশ আসে ফিরে যাওয়ার জন্য। তখন শূন্যে কয়েক রাউন্ড গুলি চালিয়ে ফিরে যায় চিনা বাহিনী।