ফাইল চিত্র।
পাটশিল্প নিয়ে আন্দোলন জারি থাকবে বলে রবিবার ফের হুঁশিয়ারি দিলেন ব্যারাকপুরের সাংসদ অর্জুন সিংহ। ফলে প্রশ্ন উঠেছে, পাটশিল্প নিয়ে বস্ত্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকের পরেও কি ক্ষোভ মেটেনি ব্যারাকপুরের বিজেপি সাংসদের? রবিবার ফের আন্দোলন জারি রাখার কথা বলে সে কথাই কি বুঝিয়ে দিলেন তিনি? অর্জুনের কথায়, ‘‘ললিপপে ভুলছি না।’’
রবিবার দিল্লিতে অর্জুন দাবি করেছেন, সোমবার ফের পাট শিল্পের পরিস্থিতি নিয়ে বস্ত্র মন্ত্রকের কর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন। কেন্দ্রের পাট নীতির বিরুদ্ধে ওই আন্দোলন করে অর্জুন ভবিষ্যতে তৃণমূলে যাওয়ার পথ পরিষ্কার করে রাখতে চাইছেন বলেই মনে করছেন রাজনীতির অনেকে। তাঁর তৃণমূলে যোগদান নিয়ে অর্জুনের জবাব, রাজনীতিতে কোনও কিছুই অসম্ভব নয়।
পাটশিল্পের সঙ্কটে সরাসরি কেন্দ্রীয় নীতির বিরুদ্ধে আঙুল তুলে ধারাবাহিক ভাবে সরব রয়েছেন বিজেপি সাংসদ অর্জুন। পাটের দাম ও জোগান নিয়ে নিশানা করেছিলেন কেন্দ্রীয় বস্ত্রমন্ত্রী পীযূষ গয়ালকে। তার পর পাটশিল্পের সঙ্কট মেটাতে পাশে চেয়ে সরাসরি চিঠি দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। অর্জুনের এই সক্রিয়তায় তাঁর দলবদলের সম্ভাবনা নিয়ে জল্পনা শুরু হয় রাজনৈতিক মহলে। এই অবস্থায় অর্জুনকে দিল্লিতে ডেকে শনিবার বৈঠক করেন বস্ত্রমন্ত্রী গয়াল। বৈঠক সেরে মন্ত্রীর সঙ্গে ছবি দিয়ে টুইট করে অর্জুন জানিয়েছিলেন, ‘‘বৈঠক ইতিবাচক হয়েছে। আশা করছি সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’’ কিন্তু এ দিন সকালেই পুরনো মেজাজে ফিরে অর্জুন সাংবাদিক সম্মেলনে বলেন, ‘‘আমার ধারণা, কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে এই প্রথম সমস্যা বোঝাতে পেরেছি। তবে ললিপপে ভুলছি না। মন্ত্রীকে বলেছি, কেবল আমলাদের কথায় পাটশিল্প চলতে পারে না। কেন্দ্রের নীতির কারণে পাটের উৎপাদন হ্রাস পেয়েছে। আমার বিশ্বাস, গয়াল পাট চাষিদের সমস্যা বুঝতে পেরেছেন। তাই সোমবার বস্ত্র মন্ত্রকের সচিবের সঙ্গে বৈঠক করার পরামর্শ দিয়েছেন গয়াল। যতক্ষণ না কেন্দ্রীয় সরকার সিদ্ধান্ত বদল করবে, ততক্ষণ আন্দোলন চলবে।’’
কেন্দ্রের শাসক দলের সাংসদ হয়েও বস্ত্র মন্ত্রকের নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে দলবদলের সম্ভাবনা উস্কে দিয়েছেন অর্জুন। তৃণমূলের একটি অংশের মতে, অর্জুনের দলবদল এখন সময়ের অপেক্ষা। যদিও দলবদল প্রশ্নে স্পষ্ট ভাবে কিছু জানাননি অর্জুন। তৃণমূলে যোগ দেওয়া প্রসঙ্গে অর্জুন বলেন, ‘‘রাজনীতিতে এক দল থেকে অন্য দলে যাওয়া অপরাধ নয়। তবে আমি এখনও বিজেপিতেই আছি। বিজেপি কোনও কর্মসূচি নিলে তাতে যোগ দেব।’’ যদিও সোমবার রাজ্য বিজেপি বাংলার আইনশৃঙ্খলার অবনতি নিয়ে যে মহামিছিলের ডাক দিয়েছে, তাতে তিনি থাকতে পারছেন না বলে জানিয়ে দিয়েছেন। অর্জুন জানিয়েছেন, এই মুহূর্তে তাঁর প্রধান লক্ষ্য বাংলার পাট শিল্পকে বাঁচানো।
অর্জুন এমন একটি রুগ্ন শিল্পের কর্মীদের জন্য কেন্দ্রের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন, যা নিয়ে নৈতিক ভাবে তাঁকে সমর্থন করতে বাধ্য হয়েছেন রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। বেসুরো অর্জুনকে ধরে রাখতে তাই রবিবার তড়িঘড়ি বৈঠক করেন পীযূষ গয়াল। যদিও ঘনিষ্ঠ মহলে অর্জুনের দাবি, খোদ প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপের কারণেই এত দ্রুত তাঁর সঙ্গে বৈঠকে বসতে বাধ্য হয়েছেন গয়াল। অর্জুনের দাবি, পাট চাষিদের কথা বলে তিনি কোনও দলবিরোধী কাজ করেননি। উল্টে তিনি বলেন, ‘‘রাজ্য বিজেপির প্রত্যেকে আমায় সমর্থন করেছেন।’’ অর্জুনের এই ‘উদ্যোগ’ সম্পর্কে অবশ্য মন্তব্য করতে চাননি বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, ‘‘এটা দলের কোনও সমস্যা নয়। অর্জুন সিংহ নিশ্চয়ই সরকারকে বোঝাবেন।’’ তৃণমূলের সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ অবশ্য বলেন, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই যে বাংলার স্বার্থরক্ষার একমাত্র কেন্দ্র, অর্জুনের এই সক্রিয়তার নির্যাস তা-ই।’’