ছবি: সংগৃহীত।
দু’মাস আগে নরেন্দ্র মোদী সংসদে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে মুসলিম তোষণের অভিযোগ করতে তুলে ধরেছিলেন আরিফ মহম্মদ খানের প্রসঙ্গ। আজ কেরলের রাজ্যপাল করা হল তাঁকেই।
এক যুগ ধরে রাজনীতির বাইরে আরিফ। ২০০৪ সালে বিজেপিতে যোগ দিয়ে তিন বছরের মধ্যেই দল ছাড়েন। তার আগে বিএসপি, জনতা দল, কংগ্রেস— নানা দলে ঘুরেছেন। কিন্তু তাঁর পরিচিতি রাজীব গাঁধীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার কারণেই। রাজীব সরকারে মন্ত্রী ছিলেন। কিন্তু শাহ বানো মামলায় সুপ্রিম কোর্টের রায় সংসদে বদলে ফেলায় ইস্তফা দেন তিনি। মোদী যে দিন থেকে তিন তালাক বিল নিয়ে সক্রিয় হয়েছেন, সে দিন থেকেই মুসলিম মহিলাদের সমানাধিকার নিয়ে ফের মুখর হয়েছেন। হয়ে উঠেছেন মোদীর প্রখর সমর্থক। সে কারণেই তাঁকে উদ্ধৃত করে গত জুনে সংসদে রাজীব ও কংগ্রেস নেতৃত্বকে আক্রমণ করেছিলেন মোদী। এ দিন সন্ধ্যায় আরএসএস-এর একটি অনুষ্ঠানে গিয়ে আরিফ জানান, কত ‘রামভক্ত’ তিনি। বলেন, ‘‘যে সভ্যতার প্রতীক রাম, সে সভ্যতায় সবাই একে অন্যের সূত্রে বাঁধা। সেটিকেই মজবুত করতে হবে।’’
কিন্তু এ সবের সঙ্গে রাহুল গাঁধীর কী যোগ? বিজেপি শিবিরের মতে, মুসলিম অধ্যুষিত বলেই অমেঠী ছেড়ে কেরলের ওয়েনাডে লড়তে গিয়েছিলেন রাহুল গাঁধী। বাবার মতো এখনও তিনি সংখ্যালঘুদের ভোটব্যাঙ্ক হিসেবেই দেখেন। রাহুলের সাম্প্রতিক মন্তব্যকেও হাতিয়ার করে পাকিস্তান। সে জন্যই প্রকাশ জাভড়েকর ওয়েনাডের কথা স্মরণ করিয়েছেন। এ বারে সেই কেরলেই এমন এক জন রাজ্যপাল হলেন, যিনি মুসলিমদের নিয়ে রাজীবের ভূমিকার কট্টর সমালোচক।
বিজেপি নেতা অমিত মালব্য বলেন, ‘‘রাজীব গাঁধীর মন্ত্রিসভায় এক জন প্রগতিশীল মুসলিম মুখ ছিলেন আরিফ মহম্মদ খান। রাজীবের তোষণের নীতির প্রতিবাদ করে তিনি ইস্তফা দেন। সেই আরিফ মহম্মদ আজ কেরলের রাজ্যপাল হওয়ার পরে প্রশ্ন উঠবে, কংগ্রেস কখনও ফিরে আসুক, সেটি কি আমরা চাই?’’ আরিফ বলেন, ‘‘ঈশ্বরের নিজের দেশকে জানতে পারার সুযোগ আমার সৌভাগ্য।’’
রাষ্ট্রপতি আজ পাঁচ রাজ্যের রাজ্যপাল নিয়োগ করেছেন। হিমাচল প্রদেশ থেকে কলরাজ মিশ্রকে সরিয়ে আনা হল রাজস্থানে। হিমাচলে রাজ্যপাল হলেন বন্দারু দত্তাত্রেয়। মহারাষ্ট্রে উত্তরাখণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভগৎ সিংহ কোশিয়ারি। তেলঙ্গানায় রাজ্যপাল হলেন তামিলনাড়ুতে বিজেপির সভাপতি তামিলিসাই সৌন্দররাজন। রাজ্যপালদের বাকি নিয়োগেও দক্ষিণে জোর দেওয়া হয়েছে। তামিলনাড়ুর বিজেপি সভাপতিকে রাজ্যপাল করার পিছনে সেখানে দলের কোন্দলই দায়ী বলে মনে করা হচ্ছে। না হলে এত কম বয়সে রাজ্য রাজনীতি থেকে তামিলিসাইকে সরানোর আর কোনও কারণ নেই বলেই মত অনেকের।
তবে রাজস্থানের বিদায়ী রাজ্যপাল কল্যাণ সিংহের সাংবিধানিক রক্ষাকবচ যাওয়ার পরে প্রশ্ন উঠেছে, বাবরি মসজিদ ধ্বংস মামলায় উত্তরপ্রদেশের এই প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকাও কি খতিয়ে দেখা হবে? রাজ্যপাল ছিলেন বলে এত দিন ‘অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র’ নিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করা যায়নি।