—ফাইল চিত্র।
বাবা..বাবা..বাবা..।
উত্তরপ্রদেশে না কি পরপর দু’বার জেতা যায় না। যে মুখ্যমন্ত্রী শাসনকালে নয়ডা যান, তাঁর ভোটে হার নিশ্চিত। উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোট ঘিরে থাকা যাবতীয় প্রচারকে কার্যত গুঁড়িয়ে দিয়ে লখনউয়ের মসনদে দ্বিতীয় বার মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে শপথ নিতে চলেছেন ‘বুলডোজার বাবা’ (বুলডোজারের মতো মাফিয়া দমন করেছেন বলে দাবি করতেন, তাই ওই নামে ব্যঙ্গ করতেন অখিলেশ) যোগী আদিত্যনাথ।
পাক্কা ৩৭ বছর পরে উত্তরপ্রদেশের কুর্সিতে কোনও একজন মুখ্যমন্ত্রী পরপর দু’বার দায়িত্ব নিতে চলেছেন। যা আগামী দিনে তাঁর প্রধানমন্ত্রিত্বের রাস্তা খুলে দিতে পারে বলে আশায় বুক বাঁধছেন যোগী-ঘনিষ্ঠরা।
পাঁচ বছর আগে এই দিনে যোগী ছিলেন সাংসদ। প্রাথমিক ভাবে তাঁর নামও মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে ভাবা হয়নি। আজ পাঁচ বছর পর তাঁকে ছাড়া কাউকে মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী করা যেমন অসম্ভব দলের পক্ষে, তেমনি গুরুত্বের বিচারে দলে কার্যত তিন নম্বরে উঠে এসেছেন গোরক্ষপীঠের মঠাধীশ। তবে উত্তরপ্রদেশের বিজেপি নেতারা বলছেন, ‘‘প্রথম কে তা নিয়ে প্রশ্ন নেই। কিন্তু জননেতা হিসাবে নরেন্দ্র মোদীর পরে যোগীজির স্থান এখন দ্বিতীয় হবে না কেন! অমিত শাহের স্থান তৃতীয়।’’ গত আট বছর ধরে বিজেপিকে কার্যত চালনা করে এসেছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহ জুটি। উত্তরপ্রদেশের আজকের জয় সেই জুটির রসায়নকেই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল বলে অনেকের মত। প্রশ্ন তুলে দিল, দলে দ্বিতীয় কে? সম্প্রতি নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের মধ্যে কিছু বিষয় নিয়ে মতানৈক্য তৈরি হয়েছে বলে যখন গুঞ্জন, তখন ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে কার উপরে বেশি ভরসা রাখবেন প্রধানমন্ত্রী? গান্ধীনগর বনাম গোরক্ষপুরের লড়াইয়ের গন্ধ ছড়াতে শুরু করেছে বাতাসে।
গোরক্ষপুর গোড়া থেকেই নিশ্চিত ছিল ঘরের ছেলের জয়ের প্রশ্নে। আজ প্রায় ৬৫ শতাংশ ভোট পেয়ে সব মিলিয়ে ৮৫ হাজারের ব্যবধানে জিতেছেন মুখ্যমন্ত্রী। যোগী ঘনিষ্ঠরা বলছেন, আজকের ওই জয় নানা সম্ভাবনার জন্ম দিয়েছে। প্রশাসক হিসাবে যোগীর সাফল্যকে স্বীকৃতি দিয়েছেন রাজ্যের মানুষ। প্রতিষ্ঠানবিরোধিতার হাওয়া দূরে সরিয়ে উত্তরপ্রদেশের মতো বড় রাজ্যে ক্ষমতায় ফিরে এসেছে বিজেপি। যা ২০২৯ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির হয়ে যোগীর প্রধানমন্ত্রী পদপ্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনাকেও উস্কে দিয়েছে। তবে আনুষ্ঠানিক ভাবে বিজেপি শিবিরের বক্তব্য, ‘‘এ ধরনের সিদ্ধান্ত দলের শীর্ষ নেতৃত্ব নেবেন। তা ছাড়া, এত তাড়াতাড়ি এ নিয়ে কিছু বলা যায় না।’’
পাঁচ বছর আগে মুখ্যমন্ত্রিত্বের দৌড়ে না থেকেও শেষ মুহূর্তে বাজিমাতের পিছনে যোগীর সঙ্গে সঙ্ঘ পরিবারের একাংশের সুসম্পর্কেই প্রধান কারণ হিসাবে দাবি করেন অনেকে। গত পাঁচ বছরে সেই সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়েছে। যোগী-ঘনিষ্ঠ শিবিরের দাবি, আগামী পাঁচ বছরের শেষে জননেতা হিসাবে আরও পরিণত হবেন যোগী। সে সময়ে দলে যোগীর বিকল্প পাওয়া কঠিন হবে।
আজ ফলগণনার সন্ধ্যায় যোগী বলেন, ‘‘এই জয়ে আমাদের হুঁশ খোয়ালে চলবে না। এই জয় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার উপরে আমজনতার ভরসাকে আরও মজবুত করবে।’’
ক্যালেন্ডারের পাতায় এক সপ্তাহ পরে হোলি হলেও, উত্তরপ্রদেশে আজ দুপুর থেকেই আগাম উৎসবে মেতেছেন আম বিজেপি কর্মী থেকে যোগী আদিত্যনাথ। বাতাসে রঙ, আবিরের গন্ধ, ভেসে আসছে একটাই আওয়াজ-‘যোগীরা সারা রা রা...।’