পুরাতত্ত্ববিদ বি বি লাল। ছবি: সংগৃহীত।
বাবরি মসজিদের নীচে মন্দিরের কাঠামো রয়েছে, এই তত্ত্বকে মাটি খুঁড়ে প্রমাণ করেছিলেন পুরাতত্ত্ববিদ বি বি লাল। আজ তাঁকে পদ্মবিভূষণ দিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। রাম মন্দির নির্মাণের আবেগের সঙ্গে বিজেপির উত্থান ওতপ্রোতভাবে জড়িত থাকায় লালের খেতাবপ্রাপ্তিতে রাজনৈতিক তাৎপর্য দেখছেন বিরোধীরা।
বি বি লাল ১৯৭৫-৭৬ সালে অযোধ্যা এলাকায় বিস্তারিত খনন কার্য চালান। সেখানেই বাবরি মসজিদের দক্ষিণে মাটির নীচে স্তম্ভ খুঁজে পান তিনি। রিপোর্টে বলা হয়েছিল, ওই স্তম্ভগুলির আকার বাবরি মসজিদের আয়তনের চেয়ে বেশি। মাঝে সেই অনুসন্ধান বন্ধ হয়ে যায়। এর পরে ১৯৯২ সালের বাবরি মসজিদ ধ্বংস হয়। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়ার শেষে ২০২০ সালের রাম মন্দিরের শিলান্যাস করেন নরেন্দ্র মোদী। বিরোধীদের মতে আজ লালকে ওই সম্মান দিয়ে রাম মন্দিরের আবেগকেও স্বীকৃতি দেওয়া হল। আজ পদ্মভূষণ পেয়েছেন রাম মন্দির নির্মাণ কমিটির চেয়ারম্যান নৃপেন্দ্র মিশ্র। ১৯৬৭ ব্যাচের ওই আমলা প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী হিসাবে নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে গুজরাতে, পরে ২০১৪ সালে মোদী প্রধানমন্ত্রী হলে তাঁর প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি ছিলেন।
পদ্মবিভূষণ প্রাপকদের মধ্যে রয়েছেন জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে। এই খেতাব দেওয়ার পিছনে নির্দিষ্ট কূটনৈতিক কারণ রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। শিনজো আবের জমানাতেই ভারতের সঙ্গে জাপানের কৌশলগত সম্পর্ক ক্রমশ ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। মোদীর ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় নীতির অন্যতম শরিক জাপান। চিন বিরোধিতার প্রশ্নে আন্তর্জাতিক জোটে আবের জাপান প্রধান শক্তি। কলকাতার নতুন মেট্রো থেকে বুলেট ট্রেন- অতিমারি পরবর্তী বিশ্বে বিনিয়োগের একটি নির্ভরযোগ্য রাষ্ট্রও হল জাপান। মরণোত্তর পদ্মবিভূষণ পেয়েছেন গায়ক এস পি বালসুব্রহ্মণ্যম। গত বছর করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি।
গুজরাত রাজনীতিতে মোদীর পথপ্রদর্শক কেশুভাই পটেলকে আজ মরণোত্তর পদ্মভূষণ দেওয়া হয়েছে। এক সময়ে সখ্য থাকলেও, ২০০১ সালে কেশুভাইকে সরিয়ে গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী হন নরেন্দ্র মোদী। সেই যে দু’জনের সম্পর্কে চিড় ধরে তা আর কোনও দিন মেরামত হয়নি। ২০১২ সালে মোদীকে হারাতে গুজরাত পরিবর্তন পার্টি গড়েন কেশুভাই। যদিও গো-হারা হেরে যায় তাঁর দল। তাঁরই মতো মরণোত্তর পদ্মভূষণ পেলেন অসমের কংগ্রেস নেতা তরুণ গগৈ ও বিহারের রামবিলাস পাসোয়ান। অনেকেই মনে করছেন, চলতি বছরের অসম বিধানসভার ভোটের আগে গগৈকে ওই খেতাব দিয়ে দল-মতের ঊর্ধ্বে থাকার বার্তা দিল নরেন্দ্র মোদী সরকার।