Apple iPhone Hacking Alert

আইফোনে পেগাসাসের মতো স্পাইঅয়্যার ঢোকাতে পারে রাষ্ট্রের হ্যাকাররা, সতর্কবার্তা অ্যাপ্‌লের

সাধারণ চর-সফ্‌টওয়্যারের তুলনায় এই ‘ভাড়াটে যোদ্ধা-স্পাইঅয়্যার’ অনেকে ‘সুনির্দিষ্ট এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক’ হয়ে থাকে। এর সাহায্যে অল্প কয়েক জন ‘শিকার’ কে বেছে নিয়ে ফোনে আড়ি পাতা হয়।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ এপ্রিল ২০২৪ ১৪:৩৪
Share:

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

অ্যাপ্‌লের আইফোনে গ্রাহকদের উদ্দেশে আবার এল সতর্কবার্তা। বুধবারের ওই বার্তায় গ্রাহকদের মোবাইলে ‘ভাড়াটে যোদ্ধা-স্পাইঅয়্যার’ ঢুকিয়ে দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। ইজ়রায়েলি সংস্থা এনএসও-র তৈরি পেগাসাসের মতো ওই স্পাইঅয়্যারের সাহায্যে আড়ি পাতাই রাষ্ট্রীয় বা বেসরকারি হ্যাকারদের উদ্দেশ্য বলে জানিয়েছে অ্যাপ্‌ল।

Advertisement

গত অক্টোবরে কংগ্রেস সাংসদ শশী তারুর, তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্র, সমাজবাদী পার্টির প্রধান অখিলেশ যাদব-সহ বিভিন্ন বিরোধী নেতা-নেত্রী এবং কয়েক জন সাংবাদিকের অ্যাপ্‌লের আইফোনে সতর্কবার্তা এসেছিল— ‘আপনার ফোনটি রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রিত হ্যাকিংয়ের নিশানা হয়েছে’। এর পরেই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়। তার রেশ মেটার আগেই ভারত-সহ ৯২টি দেশের আইফোন ব্যবহারকারীদের কাছে আবার এল অ্যাপ্‌লের সতর্কবার্তা।

সাধারণ চর-সফ্‌টঅয়্যারের তুলনায় এই ‘ভাড়াটে যোদ্ধা-স্পাইঅয়্যার’ অনেক ‘সুনির্দিষ্ট এবং ব্যক্তিকেন্দ্রিক’ হয়ে থাকে। এর সাহায্যে অল্প কয়েক জন ‘শিকার’কে বেছে নিয়ে তাদের ফোনে নজরদারি চালান সরকারি বা বেসরকারি হ্যাকারেরা।

Advertisement

২০২১ সালের জুলাইয়ে একটি সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত রিপোর্টে ইজ়রায়েলি ‘স্পাইঅয়্যার’ পেগাসাসের সাহায্যে রাহুল গান্ধী, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ বিরোধী নেতা-নেত্রী, সাংবাদিক এমনকি, কয়েক জন বিচারপতির ফোনেও আড়ি পাতার অভিযোগ তোলা হয়েছিল নরেন্দ্র মোদীর সরকারের বিরুদ্ধে। ঘটনার তদন্তের জন্য বিশেষ কমিটি গড়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালত নিযুক্ত সেই কমিটির রিপোর্টে স্পষ্ট ভাষায় জানানো হয়েছিল মোদী সরকারের তরফে তদন্তে কোনও সহযোগিতা করা হয়নি।

অভিযোগ ওঠার পরেই ইজ়রায়েলি সংস্থা এনএসও জানিয়েছিল, তারা শুধুমাত্র বিভিন্ন দেশের সরকারকেই তাদের চর-সফ্‌টঅয়্যার পেগাসাস বিক্রি করেছিল। বিভিন্ন দেশের নিরাপত্তা এবং গোয়েন্দা সংস্থাই এই স্পাইঅয়্যার কাজে লাগিয়ে ফোনে আড়ি পেতে থাকে। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলির ক্ষেত্রে স্বরাষ্ট্র সচিবের অনুমতি ছাড়া আড়ি পাতা যায় না। ফলে অ্যাপ্‌লের সতর্কবার্তার পরেই ‘রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রিত হ্যাকিংয়ের’ বিরুদ্ধে নতুন করে সরব হয়েছিলেন বিরোধীরা। যার জেরে কেন্দ্রীয় তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রক জানায়, হ্যাক-সতর্কবার্তার তদন্ত করবে ‘ভারতীয় সাইবার নিরাপত্তা সংস্থা’ (ইন্ডিয়ান কম্পিউটার ইমার্জেন্সি রেসপন্স টিম বা ‘সিইআরটি-ইন’)।

প্রকাশিত কয়েকটি খবরে দাবি, ওই সতর্কবার্তা এবং তার পরে ফোন পরীক্ষায় চর-সফ্‌টঅয়্যারের উপস্থিতি চিহ্নিত হওয়ার পরে প্রথমে অ্যাপ্‌লের ভারতীয় কর্তাকে তলব করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার। কেন ওই সতর্কবার্তা আইফোনের গ্রাহকদের পাঠানো হয়েছে, তার জবাবদিহি চাওয়া হয়। ওই কর্তা জানান, বিষয়টি আইফোনের নিরাপত্তা ব্যবস্থার অঙ্গ। গ্রাহককে এই পরিষেবা দেওয়া আমেরিকার সিলিকন ভ্যালির কোম্পানিটির ব্যবসায়িক নীতি, যা বদলানো তাঁর মতো আঞ্চলিক স্তরের আধিকারিকের পক্ষে সম্ভব নয়।

এর পরে অ্যাপ্‌লের সদর দফতরে তলব করে এক বড়কর্তাকে ডেকে আনা হয়। এমন কোনও সতর্কবার্তা ভারতীয় আইফোন গ্রাহকদের না-দিতে চাপ দেওয়া হয়। ওই কর্তা পরবর্তী সময় আমেরিকার একটি সংবাদপত্রকে জানান, মোদী সরকারের প্রতিনিধিরা তাঁর সঙ্গে বৈঠকে ‘উচ্চকণ্ঠে নানা ভয়ভীতিও দেখান’। তাঁরা কার্যত নির্দেশের সুরে জানিয়ে দেন, রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত হ্যাকিং-এর কোনও সতর্কবার্তা গ্রাহকদের দেওয়া যাবে না।

অ্যাপ্‌লের ওই কর্তা তাঁদের সংস্থার নীতিগত অবস্থান, গ্রাহকদের সাইবার নিরাপত্তার অধিকার এবং আইনি অধিকার সম্পর্কে নিজেদের অবস্থান মোদী সরকারের প্রতিনিধিদের জানান। বিশ্বের ১৫০টি দেশে অ্যাপ্‌লের আইফোন ব্যবহার হয়, কোনও দেশের সরকার ওই বিষয়টি নিয়ে যে আপত্তি প্রকাশ করেনি, সে কথাও ভারত সরকারের প্রতিনিধিদের বলেন। কিন্তু তাতেও সরকারি প্রতিনিধিদের ‘সন্তুষ্ট’ করা সম্ভব হয়নি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement