ম্যাট্রিক পরীক্ষার উত্তরপত্র পুড়ে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে এদিনও উত্তপ্ত রইল রাজ্য।
মাধ্যমিক শিক্ষা পর্ষদ বা ‘সেবা’ সূত্রে জানানো হয়, পুড়ে যাওয়া উত্তরপত্রের মধ্যে ছিল গোয়ালপাড়া ও কামরূপ জেলার পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র। এ কথা প্রচায় হতেই দুই জেলায় বিক্ষোভ তীব্রতর হয়। শিক্ষামন্ত্রী শরৎ বরকটকি বলেন, ‘‘যে সব কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীদের উত্তরপত্র পুড়েছে— সেখানে ফের নতুন প্রশ্নপত্রে পরীক্ষা নেওয়া হবে। যারা পরীক্ষা দিতে চাইবে না, তাদের অন্য পাঁচটি বিষয়ের নম্বরের ভিত্তিতে গড় নম্বর দেওয়া হবে।’’ কিন্তু মন্ত্রীর এমন সমাধানসূত্র মানতে নারাজ ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবকরা। প্রতিবাদরত ছাত্রছাত্রীদের দাবি, এত পরিশ্রম করে পরীক্ষা দেওয়ার পরে ফের নতুন করে পাঁচটি বিষয়ে পরীক্ষা দেওয়া তাদের পক্ষে সম্ভব নয়।
গত কাল যোরহাটের শঙ্করদেব সেমিনারি স্কুলে আগুন লেগে বাংলা, ভূগোল, বিজ্ঞান, সমাজ অধ্যয়ন, ঐচ্ছিক হিন্দি ও ঐচ্ছিক গণিতের উত্তরপত্র পুড়েছে। সেবাসূত্রে খবর, গোয়ালপাড়া ও কামরূপ জেলার তিনটি পরীক্ষাকেন্দ্রের উত্তরপত্র বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বাকি উত্তরপত্র ঠিকই আছে। খোদ জেলাশাসক বিশাল সোলাঙ্কি ও শিক্ষামন্ত্রীর মতে, যোরহাটের শঙ্করদেব সেমিনারির বন্ধ ঘরে বাইরে থেকেই আগুন লাগানো হয়েছিল। বরকটকি বলেন, সম্ভবত প্রধান শিক্ষক ও অন্য শিক্ষকদের রেষারেষির ফলেই এমন ঘটনা ঘটেছে। স্কুলে নৈশ চৌকিদার না থাকা নিয়েও বিতর্ক দেখা দিয়েছে। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই সিআইডি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। যোরহাট থানায় ওই ঘটনা নিয়ে তিনটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
ভোটের মুখে গোটা বিষয়টি নিয়ে রাজনীতিও চলছে চুটিয়ে। গত কাল ও আজ অসমে জনসভায় করছেন এআইসিসি সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী। গোটা ঘটনা নিয়ে রাহুল মুখ না খোলায় বিজেপি, ছাত্রমুক্তি সংগ্রাম সমিতিরা প্রতিবাদে নেমেছে। শিলচরে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী তথা বিজেপিক নির্বাচন কমিটির আহ্বায়ক হিমন্তবিশ্ব শর্মা বলেন, ‘‘অবিলম্বে তিন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদকে দিয়ে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ কমিটি গঠন করা হোক। কমিটি ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে জানাক, কোন কোন কেন্দ্রের মোট কটি উত্তরপত্র পুড়েছে। এরপর দ্রুত ঠিক করা হোক— যাদের উত্তরপত্র পুড়েছে তাদের নতুন করে পরীক্ষায় বসতে বাধ্য না করে অন্য কী উপায়ে পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যায়।
এ দিকে, রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে আজও শিক্ষামন্ত্রী, মুখ্যমন্ত্রীর কুশপুতুল পুড়িয়ে আন্দোলন চলছে। সিংহভাগ ছাত্রছাত্রী ও অভিভাবক ফের পরীক্ষায় বসার প্রস্তাব নস্যাৎ করে দিয়েছেন। তাঁদের দাবি, সেবা ও প্রশাসনের দায়িত্বজ্ঞানহীনতায় এমন কাণ্ড হয়েছে। তার শাস্তি ছাত্রছাত্রীদের দেওয়া চলবে না। গোয়ালপাড়ায় উত্তরপত্র গরুতে খাওয়া, উচ্চমাধ্যমিকের পদার্থ বিজ্ঞানের প্রশ্নপত্র ফাঁস হওয়া, অস্থায়ী শিক্ষকদের স্থায়ী করতে না পারা— ইত্যাদি অভিযোগে শিক্ষামন্ত্রীর পদত্যাগ দাবি করে আন্দোলনে নেমেছে বিভিন্ন সংগঠন। এর মধ্যেই ক্ষমতায় এসে টেট উত্তীর্ণ শিক্ষকদের চাকরি স্থায়ী করার প্রতিশ্রুতি দেন হিমন্ত।