তিনি আয়ুর্বেদ চিকিৎসক। তবে তাঁর দিনের অনেকটা সময়ই কাটে জিমে। রোগীর নাড়ি দেখার পাশাপাশি ১০ কেজির ডাম্বেল নিয়ে বাইসেপস-ট্রাইসেপসের সৌষ্ঠব তৈরিতেও তিনি সমান পারদর্শী।
মুম্বইবাসী ওই চিকিৎসকের নাম শর্বরী ইমানদার। বয়স ৩৯। পেশায় চিকিৎসক হলেও নেশায় ভারোত্তোলক তিনি।
চল্লিশের দোরগোড়ায় পৌঁছে জীবনের প্রথম সোনার পদক জিতেছেন। তার ঠিক এক বছরের মধ্যে ভারোত্তোলন প্রতিযোগিতায় জাতীয় স্তরে রুপো এনে দিয়েছেন নিজের রাজ্য মহারাষ্ট্রকে।
সম্প্রতি নেটমাধ্যমে পোস্ট করা তাঁর একটি ভিডিয়ো ছড়িয়েছে। ওই ভিডিয়োয় শাড়ি পরে ভারোত্তোলন ও শরীরী কসরৎ করতে দেখা যাচ্ছে শর্বরীকে। শাড়ি পরেই করেছেন পুশ আপ।
ওই ভিডিয়ো দেখার পর শর্বরীকে ‘মহিলা বাহুবলী’ বলে মন্তব্য করেছেন নেটাগরিকদের একাংশ। জানতে চেয়েছেন শর্বরীর সাফল্য আর সফরের কথাও।
তাঁর সম্পর্কে জানার আগ্রহ দেখে মুখ খুলেছেন শর্বরীও। এক সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জানিয়েছেন, স্বাস্থ্য ভাল রাখার ব্যাপারে বরাবরই আগ্রহী ছিলেন তিনি। পেশায় চিকিৎসক হলেও ভাল থাকার জন্য যোগাভ্যাস করতেন। কিন্তু তার পরও নিজের স্বাস্থ্য নিয়ে সন্তুষ্ট হতে পারছিলেন না শর্বরী। মনে হচ্ছিল কিছু খামতি থেকে যাচ্ছে।
শর্বরীর স্বামীও চিকিৎসক। শর্বরীকে ওয়েট ট্রেনিংয়ের পরামর্শ দেন তিনিই। জিমে যোগ দিতে বলেন।
চিকিৎসক হিসেবে দায়িত্ব তো রয়েছেই। এর পাশাপাশি দুই সন্তানের মা শর্বরী। সবদিক সামলে জিমে গিয়ে ওয়েট ট্রেনিং করা তাঁর পক্ষে সহজ ছিল না। তবে স্বাস্থ্য নিয়ে শর্বরীর অতি আগ্রহই তাঁকে এই সব প্রতিকূলতা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করেছে।
শর্বরী জানিয়েছেন, ভারোত্তোলনের প্রতি তাঁর আগ্রহ ক্রমে বাড়তে শুরু করেছিল। প্রশিক্ষকের উৎসাহে একটি প্রতিযোগিতায় নাম দেন। তাতে জিতেও যান তিনি।
পুণের আয়ুর্বেদিক কলেজ থেকে স্নাতক স্তরের পড়াশোনা শেষ করে স্নাতকোত্তরও পড়েছেন শর্বরী। তিনি আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় এমডি।
ইতিমধ্যেই এশিয়া উওমেনস ওয়েট ট্রেনিংয়ের চারটি পুরষ্কার জিতেছেন।
ব্যাপারটা অবশ্য খুব সহজও ছিল না। শর্বরীর কথায়, ‘‘প্রথম প্রথম তো পুল আপ পুশ আপই ঠিক ভাবে করতে পারতাম না। তবে এখন ৫২ কেজি ওজন অনায়াসে তুলতে পারি।’’
শাড়ি পরে জিমে যাওয়া প্রসঙ্গে তাঁর মত, পোশাক কখনও শারীরিক কসরতে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। শাড়ি তো নয়ই। তিনি মনে করেন ভারতীয় পোশাক শাড়ি সব ক্ষেত্রেই মানানসই।
শর্বরীর দুই ছেলের এক জনের বয়স ১৭, আরেক জনের ১৪। তাদের দায়িত্ব পালন করেই প্রতি দিন ২ ঘণ্টা করে জিমে সময় দেন তিনি।
খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারেও তিনি বেশ সংযমী। বাইরের খাবার খান না। বহু দিন হল খাবারের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছেন ভাজাভুজিও।
এখন আয়ুর্বেদ চিকিৎসার পাশাপাশি তাঁর কাছে স্বাস্থ্য এবং ডায়েট চার্টের ব্যাপারেও পরামর্শ নিতে আসেন অনেকে, বিশেষ করে মহিলারা।
শর্বরী মনে করেন, মহিলাদের স্বাস্থ্য ভাল রাখার জন্য ওয়েট ট্রেনিং খুবই জরুরি। কারণ বয়স হলে মেয়েদের হাড়ের সমস্যা দেখা যায়। মেনোপজের পর হাড়ের ব্যথাও হয় মহিলাদের।