ankhi das

রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রীর পুত্রবধূ, ফেসবুকের প্রাক্তন কর্ত্রী আঁখি দাস ছিলেন মেধাবী ছাত্রী

ফেসবুকের আগে আঁখি ছিলেন মাইক্রোসফট ইন্ডিয়ায়। সেখানে তিনি পাবলিক পলিসি, লিগাল অ্যান্ড কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্সের অধিকর্তা পদে কর্মরত ছিলেন।

Advertisement
শেষ আপডেট: ২৯ অক্টোবর ২০২০ ১০:২২
Share:
০১ ২৪

সম্প্রতি বিতর্কিত যে নামগুলি আলোচনার শীর্ষে, তাঁদের অন্যতম আঁখি দাস। নামী বহুজাতিক সংস্থায় দীর্ঘ দিন উঁচু পদে চাকরি করা মুষ্টিমেয় বাঙালি মেয়েদের মধ্যে তিনি এক জন।

০২ ২৪

ব্যক্তিগত জীবন প্রচারের আড়ালে রাখতেই ভালবাসেন আঁখি। তাঁর ছাত্রীজীবনের প্রথমার্ধ কেটেছে কলকাতায়। কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক স্তর সম্পূর্ণ করে লোরেটো কলেজের ছাত্রী আঁখি চলে যান দিল্লি। জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক এবং রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেন।

Advertisement
০৩ ২৪

ফেসবুকের ভারত, দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার পলিসি হেড বা নীতি নির্ধারক দলের প্রধান ছিলেন আঁখি। দীর্ঘ ৯ বছর তিনি এই গুরুত্বপূর্ণ পদে ছিলেন। কর্পোরেট উচ্চপদস্থ হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতা দেড় দশকের।

০৪ ২৪

ফেসবুকের আগে আঁখি ছিলেন মাইক্রোসফট ইন্ডিয়ায়। সেখানে তিনি পাবলিক পলিসি, লিগাল অ্যান্ড কর্পোরেট অ্যাফেয়ার্সের অধিকর্তা পদে কর্মরত ছিলেন।

০৫ ২৪

গত অগস্ট মাসে বিতর্কের কেন্দ্রে উঠে আসে আঁখির নাম। অভিযোগ ওঠে, ফেসবুকে বিজেপি এবং হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের নেতা-নেত্রীদের ঘৃণা মন্তব্য কার্যত দেখেও দেখেন না কর্তৃপক্ষ। আমেরিকার একটি প্রথম সারির সংবাদপত্রের প্রতিবেদন ঘিরে শোরগোল পড়ে যায় ভারতে।

০৬ ২৪

ওই প্রতিবেদনে অভিযোগ তোলা হয়, বহু বিজেপি নেতা এবং কট্টর হিন্দুত্ববাদী নেতা-নেত্রীর ‘উস্কানিমূলক’ বা হিংসা ছড়ানোর মতো মন্তব্য এবং পোস্ট ফেসবুক থেকে সরানোর বিরোধী ছিলেন আঁখি।

০৭ ২৪

আমেরিকার ওই সংবাদপত্র তাদের রিপোর্টে ফেসবুকের অভ্যন্তরীণ কয়েকটি ইমেল প্রকাশ করে। তার ভিত্তিতে ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়, বিজেপি নেতা টি রাজা সিংহের পোস্ট করা ‘উস্কানিমূলক’ মন্তব্য সরানোর বিরোধিতার পাশাপাশি আঁখি ওই বিজেপি নেতাকে ‘বিপজ্জনক’ বলে চিহ্নিত করার ক্ষেত্রেও বিরোধিতা করেছিলেন।

০৮ ২৪

চলতি বছর অগস্টে ফেসবুকের বিরুদ্ধে ব্যবসায়িক স্বার্থে ঘৃণা-ভাষণের সঙ্গে আপসের অভিযোগ এ বার গড়ায় আদালত পর্যন্ত। আঁখির বিরুদ্ধে বিদ্বেষমূলক মন্তব্য প্রচার এবং ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে ছত্তীসগঢ় পুলিশ মামলা দায়ের করে। কংগ্রেসের তরফে পুরো ঘটনার তদন্ত চেয়ে ফেসবুক কর্ণধার মার্ক জাকারবার্গের কাছে চিঠি পাঠানো হয়।

০৯ ২৪

ছত্তীসগঢ় পুলিশ সূত্রের খবর, আবেশ তিওয়ারি নামে এক সাংবাদিকের অভিযোগের ভিত্তিতেই আঁখির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। অন্য দিকে অনলাইন ও অফলাইনে তাঁকে শারীরিক আক্রমণ ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে দিল্লি পুলিশের সাইবার অপরাধ শাখায় আবেশ-সহ মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন আঁখি।

১০ ২৪

ফেসবুকে যাঁর উস্কানিমূলক বার্তা নিয়ে এত বিতর্কের জলঘোলা হয়, তেলঙ্গানার সেই নেতা হলেন টি রাজা সিংহ। এই বিজেপি বিধায়ক একটি বিশেষ ধর্মীয় গোষ্ঠীর মানুষদের গুলি করে মারার সওয়াল করেছিলেন ফেসবুকে।

১১ ২৪

আমেরিকার সংবাদপত্রের প্রতিবেদনে দাবি, এর পরে ‘বিপজ্জনক ব্যক্তি এবং সংস্থা’ নীতির ভিত্তিতে রাজাকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করার জন্য সুপারিশ করেছিলেন ফেসবুকের ভারতীয় শাখার কয়েক জন কর্মী। কিন্তু আঁখি নাকি স্পষ্ট জানিয়ে দেন, বিজেপি নেতাদের আইনভঙ্গকারী হিসেবে শাস্তি দিলে ভারতে ফেসবুকের ব্যবসায়িক ক্ষতি হতে পারে।

১২ ২৪

রাজা অবশ্য ওই বিদ্বেষমূলক পোস্টের দায় অস্বীকার করে টুইট বার্তায় বলেছেন, ‘আমার নামে অনেকগুলি ফেসবুক পেজ রয়েছে। কিন্তু আমার নিজের কোনও অফিসিয়াল ফেসবুক পেজ নেই। ওই পোস্টের দায় আমার নয়’।

১৩ ২৪

শেষ পর্যন্ত চাপের মুখে তেলঙ্গনার বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন ফেসবুক কর্তৃপক্ষ। বন্ধ করে দেওয়া হয় তাঁর অ্যাকাউন্ট। যদিও ওই বিজেপি বিধায়ক শেষ অবধি দাবি করে গিয়েছেন তাঁর কোনও অফিশিয়াল ফেসবুক অ্যাকাউন্টই নেই।

১৪ ২৪

এই প্রসঙ্গে এক ফেসবুক মুখপাত্র বিবৃতিতে বলেন, ‘‘ঘৃণা এবং হিংসায় উস্কানিমূলক পোস্ট আমাদের নীতির পরিপন্থী। আমরা সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির পোস্টগুলি মূল্যায়ন করে দেখেছি। সেগুলি আমাদের নীতি লঙ্ঘন করছে। তাই আমাদের প্ল্যাটফর্ম থেকে তাঁর অ্যাকাউন্ট সরানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’’

১৫ ২৪

ঘটনার জল গড়াতেই উঠে আসে আঁখির বোন রশ্মি দাসের নাম। রশ্মি ছিলেন জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে এবিভিপির সভানেত্রী। সেই তথ্য সামনে আসায় পুরো বিষয়টি নতুন মাত্রা পেয়েছিল।

১৬ ২৪

বিতর্কের আড়াই মাসের মধ্যে ফেসবুক থেকে পদত্যাগ করলেন আঁখি। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাঁর পদত্যাগের কথা স্বীকার করেছেন। ফেসবুক কর্তৃপক্ষ তাঁর পদত্যাগকে সাম্প্রতিক বিতর্ক থেকে বিচ্ছিন্ন রাখলেও রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের দাবি, এটা প্রত্যাশিতই ছিল।

১৭ ২৪

বিতর্ক শুরু হওয়ার পরেই সংস্থার ভিতরে-বাইরে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে আঁখিকে। ওই অভিযোগ ওঠার পর সংসদীয় কমিটির সামনেও হাজিরা দিতে হয়েছিল আঁখিকে। ওয়াকিবহাল মহলের পর্যবেক্ষণ, এই গোটা বিতর্কিত পর্বের জেরেই আঁখির ইস্তফা।

১৮ ২৪

ভারতে ফেসবুকের ভাইস প্রেসিডেন্ট এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর অজিত মোহন অবশ্য প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানান, ‘‘আঁখি পদত্যাগ করেছেন। তিনি জনসেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে চান। এ দেশে আমাদের পুরনো কর্মীদের মধ্যে আঁখি অন্যতম। তিনি প্রায় ৯ বছর আমাদের সংস্থার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। গত ২ বছর ধরে তিনি প্রথম সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন। আমাদের সংস্থায় তাঁর অবদান অনেক।’’

১৯ ২৪

২০১১ সালে ফেসবুকের ভারতীয় শাখায় যোগ দেওয়া আঁখির অন্যতম কাজই ছিল সরকারের সঙ্গে সংস্থার সম্পর্ক মসৃণ রাখা। তাঁর বিরুদ্ধে রাজনৈতিক পক্ষপাতের অভিযোগ উঠেছে একাধিক বার।

২০ ২৪

আমেরিকার নামী সংবাদপত্রে প্রকাশিত প্রতিবেদনে দাবি, ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদী লোকসভা ভোটে জেতার পরে উচ্ছ্বসিত আঁখি কর্মীদের ই-মেলে লিখেছিলেন, “আমরা ওঁর সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচার দাবানলের মতো ছড়িয়ে দিয়েছিলাম। বাকিটা ইতিহাস।” ২০১২ সালে গুজরাতে বিধানসভা ভোটের সময়েও নাকি বিজেপিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় দড় করে তোলায় ভূমিকা ছিল প্রাক্তন ফেসবুক কর্ত্রীর।

২১ ২৪

আমেরিকার সংবাদ মাধ্যমকে উদ্ধৃত করেই কংগ্রেস, তৃণমূল-সহ বিরোধীদের অভিযোগ, বিজেপি নেতাদের বিদ্বেষমূলক লেখা-ছবি-ভিডিয়ো (কনটেন্ট) সরিয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে শিথিলতা দেখাতেন আঁখি। রেখে দেওয়া হত বহু উস্কানিমূলক কথাবার্তা। একই নীতি নেওয়া হত তাঁদের হোয়াটসঅ্যাপের বেলায়।

২২ ২৪

সর্বসমক্ষে এ বিষয়ে আগাগোড়া আঁখির পাশে তাঁর প্রাক্তন কাজের জায়গা ফেসবুক। কিন্তু শেষমেশ ওই সমস্ত অভিযোগের চাপেই তাঁকে সরতে হল কি না, প্রশ্ন থাকছেই। একইসঙ্গে ঘুরপাক খাচ্ছে আরও একটি প্রশ্ন। পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে আঁখি কি এ বার নিজেই ‘জনসেবার তাগিদে’ কোনও রাজনৈতিক দলে নাম লেখাবেন?

২৩ ২৪

আঁখির পাশে আছেন তাঁর পরিজনরাও। রাজ্যের প্রাক্তন মন্ত্রী তথা তৃণমূলনেতা রবিরঞ্জন চট্টোপাধ্যায়ের পুত্রবধূ তিনি। স্বামী সৌম্য চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে আঁখি বর্তমানে দিল্লিবাসী। প্রেসিডেন্সি কলেজের প্রাক্তন ছাত্র সৌম্যও জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ে যুক্ত ছিলেন এবিভিপি-র সঙ্গে।

২৪ ২৪

অগস্ট মাসে আঁখিকে কেন্দ্র করে ঝোড়ো বিতর্ক শুরু হওয়ার পরে অশীতিপর রবিরঞ্জন সংবাদ মাধ্যমে বলেন, তাঁর পুত্রবধূ বুদ্ধিমতী। তিনি অনৈতিক কিছু করতে পারেন না। রবিরঞ্জনের অভিযোগ ছিল, আঁখিকে ঘিরে ষড়যন্ত্র তৈরি হয়েছে। একইসঙ্গে তিনি জানান, আঁখি এই ষড়যন্ত্রের মোকাবিলা করতে পারবেন বলেই তাঁর বিশ্বাস।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
Follow us on:
আরও গ্যালারি
Advertisement