বিধ্বংসী প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ভেসে গিয়ে গিয়েছে কেদারনাথ। উদ্ধারকারী হিসেবে দুর্গতদের পাশে বীরবিক্রমে কাজ করছে ভারতীয় বায়ুসেনা। ২০১৩ সালে টিভির পর্দায় এই ছবি দেখে স্বপ্ন দেখেছিলেন কিশোরী আঁচল গঙ্গওয়াল। তিনিও একদিন কাজ করবেন বায়ুসেনার পাইলট হয়ে।
তাঁর স্বপ্নকে আকাশকুসুমই মনে হয়েছিল আঁচলের অতি আপনজনেরও। যাঁর বাবা চায়ের দোকান চালান, তাঁর মেয়ে কি না বায়ুসেনার পাইলট হবেন! উড়ে এসেছিল এরকম তির্যক হাসি-মন্তব্যও।
লেখাপড়ায় মেধাবী আঁচল ছিলেন দক্ষ বাস্কেটবল খেলোয়াড়ও। তাঁর বায়ুসেনার ফাইটার পাইলট হওয়ার স্বপ্ন সত্যি করার জন্য প্রথমে সায় ছিল না বাড়ির লোকেরও।
কিন্তু আঁচল তাঁর পরিকল্পনায় অনড়। যদি কিছু হতে হয় জীবনে, তবে বায়ুসেনার পাইলট-ই হবেন।
এ দিকে, মেয়ের স্কুলের বেতন দিতে গিয়েই নাজেহাল অবস্থা তাঁর বাবা সুরেশ গঙ্গোয়ালের। দশম শ্রেণি উত্তীর্ণ হওয়ার পরে সংসারের চাপে ছেড়ে দিতে হয়েছিল পড়াশোনা। তারপর সেই যে চায়ের দোকানের কেটলি ধরেছিলেন, সিকি দশক পরে আজও তা ছাড়তে পারেননি।
ভোপালের ৪০০ কিমি দূরে নীমচ শহরে এতদিন সুরেশের পরিচয় ছিল ‘চাওয়ালা’। এখন তাঁকে সবাই একডাকে চেনে ‘এয়ারফোর্সের ফাইটার পাইলটের গর্বিত বাবা’ হিসেবে।
কিন্তু এই উত্তরণের প্রতিটি ধাপ ছিল বন্ধুর। মেয়ের পড়াশোনার খরচের জন্য সব লজ্জা ভুলে মাঝে মাঝে হাতও পাততে হয়েছে আত্মীয় পরিজনদের কাছে। তাতেও সমস্যা দূর হয়নি। স্কুল-কলেজের বেতন নির্ধারিত সময়ের পরে জমা দেওয়ার জন্য সুরেশ বা তাঁর স্ত্রীকে কখনও কখনও মিথ্যে অজুহাতের আশ্রয়ও নিতে হয়েছে। মেয়ের সাফল্য এখন তাঁদের গ্লানিমুক্ত করেছে।
এ ভাবেই স্কুলের পর কলেজের চৌকাঠও পেরিয়ে গেলেন আঁচল। কিন্তু তার পরেও স্বপ্ন যেন ক্রমেই ঝাপসা হয়ে পড়ছিল। কিছুতেই ফাইটার পাইলট হওয়ার প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারছিলেন না আঁচল।
কিন্তু বায়ুসেনার উর্দি তাঁকে পরতেই হবে। দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন আঁচল। সঙ্গে তাঁর পরিবারও। প্রতি বার অসফল হতেন, আরও বাড়িয়ে দিতেন পড়াশোনার গভীরতা। দীর্ঘ সময় কাটাতেন লাইব্রেরিতে।
অবশেষে ষষ্ঠ প্রচেষ্টায় সাফল্য। ভারতীয় বায়ুসেনার ফাইটার পাইলট হওয়ার পরীক্ষায় প্রতি ধাপে উত্তীর্ণ হলেন আঁচল। তারপর প্রশিক্ষণ পর্ব। সেই পর্বেও সসম্মানে সফল তরুণী আঁচল।
ফ্লাইং অফিসার হিসেবে সম্প্রতি ভারতী বায়ুসেনায় যোগ দিয়েছেন ২৪ বছর বয়সি আঁচল।
আঁচলের বাবা মা অবশ্য মেয়ের স্বপ্নপূরণের সাক্ষী হতে পারেননি করোনা আবহে লকডাউন পরিস্থিতির জেরে। শুরু হয়েছে গঙ্গওয়াল দম্পতির প্রতীক্ষার প্রহর। চোখের সামনে মেয়েকে ফাইটার পাইলটের বেশে দেখার।