তা ছাড়াও সেখানে বহু বাংলা ভাষাভাষী মানুষ চাকরি বা ব্যবসা সূত্রে বাস করেন। তথাকথিত ধর্মগুরুর ওই দাবি মানলে, উত্তরাখণ্ডে বাঙালিরা হিন্দুত্ববাদীদের হেনস্থার শিকার হবেন বলে আশঙ্কা অনেকের।
আনন্দ স্বরূপ। ছবি টুইটার।
বাঙালি হলেই সন্দেহের চোখে দেখতে হবে এবং পশ্চিমবঙ্গের পরিচয়পত্র থাকা যে কোনও মুসলমানকেই বাংলাদেশি অথবা রোহিঙ্গা বলে চিহ্নিত করতে হবে। ঠিক এই ভাষাতেই উত্তরাখণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিংহ ধামীর কাছে ‘আবেদন’ জানালেন তথাকথিত ধর্মগুরু এবং হরিদ্বার ধর্মসংসদে ঘৃণাভাষণের অন্যতম পাণ্ডা আনন্দ স্বরূপ।
গত বছর ডিসেম্বরে হরিদ্বারে এবং তার পরে একাধিক জায়গায় ধর্মসংসদের নাম করে মুসলিমদের উদ্দেশে সরাসরি খুন-ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হিন্দুত্ববাদী নেতা আনন্দ স্বরূপের নামাঙ্কিত প্যাডে লেখা একটি চিঠি এ দিন সামনে এসেছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ওই চিঠিতে হিন্দুত্ববাদীদের দাবি মেনে চার ধাম যাত্রায় ভিন্ ধর্মের কেউ আছে কি না, তা পরীক্ষার পদ্ধতি চালু করার জন্য উত্তরাখণ্ডের বিজেপি সরকারকে ধন্যবাদ জানানোর পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গের পরিচিতিপত্র থাকা যে কোনও মুসলমানকেই বাংলাদেশি বা রোহিঙ্গা বলে দাগিয়ে দেওয়ার ‘দাওয়াই’ দেওয়া হয়েছে। বিজেপি শীর্ষ নেতাদের ঘনিষ্ঠ এবং ঘৃণাভাষণের অন্যতম পাণ্ডা নরসিংহানন্দের অনুচর আনন্দ স্বরূপের নামাঙ্কিত প্যাডের ওই চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, ‘পশ্চিমবঙ্গের বসির হাট নামের একটি জায়গা আছে। বাংলাদেশ থেকে দলে দলে লোক প্রথম সেই জায়গা দিয়ে ভারতে ঢুকছে। তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য বা পঞ্চায়েত প্রধানেরা অবৈধ শরণার্থীদের আশ্রয় দিচ্ছে। আধার কার্ড ও অন্য শংসাপত্র তৈরি করে দিচ্ছে’। হিমালয়ে ‘মুসলিমদের ঠেকাতে এবং হিন্দু সংস্কৃতি রক্ষার’ জন্যই ওই দাওয়াই দিয়েছেন আনন্দ স্বরূপ। এই উগ্র হিন্দুত্ববাদী নেতার কথায়, ‘হিমালয়ে অহিন্দুদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হোক।’
মুসলিম এবং বাংলাভাষী হলেই তাঁদের বাংলাদেশি (মায়ানমারে অশান্তি শুরুর পর থেকে রোহিঙ্গা) বলে দাগিয়ে দেওয়ার অভিযোগ নতুন নয়। বিজেপি নেতারা দীর্ঘদিন ধরেই এই অভিযোগ তুলেছেন। দিনকয়েক আগে দিল্লির জহাঙ্গিরপুরীতে সংখ্যালঘু এলাকায় বুলডোজ়ার দিয়ে ভাঙচুরের ঘটনায় আম আদমি পার্টির নীরবতা নিয়ে প্রশ্নের জবাবে অরবিন্দ কেজরীওয়ালের দলের একাধিক নেতা-নেত্রী বাংলাভাষীমুসলিমদের রোহিঙ্গা বলে ‘চিহ্নিত’ করেছিলেন। যে ঘটনার পরে আপ সমর্থকদেরও অনেকেই কেজরীওয়ালের দলকে বিজেপির ‘বি-টিম’ বলে ক্ষোভ জানিয়েছেন। এ দিন ছড়িয়ে পড়া চিঠিটির বয়ান বাংলাভাষীদের পক্ষে উদ্বেগের বলে মনে করছেন অনেকে। উত্তরাখণ্ডে শরণার্থী বাঙালিদের কলোনি রয়েছে। তা ছাড়াও সেখানে বহু বাংলা ভাষাভাষী মানুষ চাকরি বা ব্যবসা সূত্রে বাস করেন। তথাকথিত ধর্মগুরুর ওই দাবি মানলে, উত্তরাখণ্ডে বাঙালিরা হিন্দুত্ববাদীদের হেনস্থার শিকার হবেন বলে আশঙ্কা অনেকের।