রাহুল দাস
বাবা ছেড়ে চলে গিয়েছেন। দুই ভাই আর মা দেবযানী দাসের ভরসা ছিল ছোট একটা চায়ের দোকান। সেই মায়ের ছেলে যখন ইঞ্জিনিয়ার হলেন, সেটাই ছিল এক বিরাট কৃতিত্ব, অভাবিত অর্জন। কিন্তু মেধাবী রাহুল দাসের স্বপ্ন তো তখনও পূরণ হয়নি! ইচ্ছে ছিল ইঞ্জিনিয়ার নয়, ডাক্তার হবেন। তাই বসলেন সর্বভারতীয় নিট পরীক্ষায়। প্রথম বারেই এল সাফল্য। নয়াদিল্লির এমসে ডাক্তারি পড়ার সুযোগ পেয়ে গেলেন অসমের বজালি জেলার পাতাচারকুচির বাসিন্দা রাহুল। তাঁর এই কৃতিত্বে খুশি হয়ে মুখ্যমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা ঘোষণা করেছেন, রাহুলের ডাক্তারি পড়ার খরচ বহন করবে রাজ্য সরকার।
রাহুল জানান, ১১ বছর আগে বাবা তাঁদের ছেড়ে চলে যান। অথৈ জলে পড়া মা দেবযানী দাসকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেন ব্যবসায়ী মন্টুকুমার শর্মা। পাতাচারকুচি চকে থাকা মন্টুবাবুর হার্ডওয়্যার দোকানের পাশেই চায়ের দোকান খোলেন রাহুলের মা। মন্টুবাবু তার জন্য কখনও ভাড়া চাননি। এমনকি নিট পাশ করার পরে দিল্লি যাওয়ার বিমানের ভাড়াও জুগিয়েছেন তিনিই। জেলাশাসক ভারতভূষণ দেবচৌধুরীর পৈত্রিক বাড়ির জমিতেই থাকেন তাঁরা। ভারতভূষণ জানান, রাহুল ও তাঁর ভাই দু’জনই মেধাবী। তাঁদের কাছ থেকে বাড়ি ভাড়া নেওয়ার প্রশ্নই ছিল না।
রাহুল জানান, দোকানে চা তৈরি ও বিক্রিতে মাকে সাহায্য করার ফাঁকেই পড়াশোনা করতেন। দুর্ঘটনাবশত হাত পুড়ে যায় তাঁর। প্রতিবন্ধী শংসাপত্র মেলে। ২০১৫ সালে প্রথম বিভাগে ভাল নম্বর পেয়ে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরেও দারিদ্রের জন্য পরের এক বছর লেখাপড়াই করতে পারেননি। দোকানের কাজে মাকে সাহায্য করেছেন। ২ বছর পরে তিনি ভর্তি হন চাংসারির সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অব পেট্রোকেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজিতে। ৮৫ শতাংশ নম্বর পেয়ে পাশ করে চাকরি পান বহুজাতিক সংস্থায়। কিন্তু ইচ্ছে ছিল ডাক্তারি পড়ার। বড় ছেলের স্বপ্নের কথা জানতেন মা। তিনি অভয় দেন, সংসারে যত কষ্টই হোক, চাকরি ছেড়ে ডাক্তারি পরীক্ষায় প্রবেশিকার জন্য তৈরি হোক রাহুল। মায়ের ভরসায় চাকরি ছেড়ে ফের পড়ায় মন দেন। প্রথম বার পরীক্ষায় বসে তাঁর র্যাঙ্ক হয় ১২,০৬৮। কিন্তু তফসিলি প্রমাণপত্র ও প্রতিবন্ধী প্রমাণপত্র থাকায় সুযোগ মিলে যায় এমসে। মন্ত্রী রণজিৎ কুমার দাস ফল বেরোনোর খবর পেয়ে দোকানে এসে অভিনন্দনে জানিয়ে গিয়েছেন। দিয়েছেন দশ হাজার টাকা। রাহুল বলেন, “আমার জন্য মা যা করেছেন, সেই ঋণ কোনও দিন শোধ করতে পারব না।” পুত্রগর্বে গর্বিত দেবযানী চাইছেন, ছোট ছেলেও যেন দাদার মতোই নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে।