Unnatural Death

‘ভিক্ষা করো’, সন্তানদের অত্যাচারে আত্মঘাতী দম্পতি

পুলিশ জানিয়েছে, বছর সত্তরের হাজারিরাম বিষ্ণোই ও তাঁর ৬৮ বছর বয়সি স্ত্রী চাওয়ালি দেবীর বাড়ি রাজস্থানের নাগপুরে করনি এলাকায়। বৃহস্পতিবার বাড়ির জলের ট্যাঙ্ক থেকে তাঁদের দেহ উদ্ধার হয়েছে।

Advertisement

সংবাদ সংস্থা

জয়পুর শেষ আপডেট: ১২ অক্টোবর ২০২৪ ০৬:৫৩
Share:

—প্রতীকী চিত্র।

খেতে চাইলে বলা হত, বাটি হাতে রাস্তায় গিয়ে ভিক্ষে করো। মাঝেমাঝেই মারধর, কখনও আবার চিরতরে শেষ করে দেওয়ার হুমকি। সম্পত্তির জন্য দিনের পর দিন ছেলে-বৌমাদের এই অত্যাচার আর সহ্য করতে পারছিলেন না ৭০ বছর বয়সি বৃদ্ধ ও তাঁর স্ত্রী। শেষে স্বামী-স্ত্রী একসঙ্গে বাড়ির জলের ট্যাঙ্কে ঝাঁপ দিয়ে আত্মঘাতী হয়েছেন। এ সব কথা দু’পাতার সুইসাইড নোটে লিখে গিয়েছেন বৃদ্ধ দম্পতি। ঘরেরই একটি দেওয়ালে আটকানো ছিল সেই সুইসাইড নোট।

Advertisement

পুলিশ জানিয়েছে, বছর সত্তরের হাজারিরাম বিষ্ণোই ও তাঁর ৬৮ বছর বয়সি স্ত্রী চাওয়ালি দেবীর বাড়ি রাজস্থানের নাগপুরে করনি এলাকায়। বৃহস্পতিবার বাড়ির জলের ট্যাঙ্ক থেকে তাঁদের দেহ উদ্ধার হয়েছে। বৃদ্ধ দম্পতির দুই ছেলে ও দুই মেয়ে। দু’পাতার সুইসাইড নোটে বৃদ্ধ-বৃদ্ধা লিখেছেন, তাঁদের ছেলে রাজেন্দ্র কমপক্ষে তিন বার মারধর করেছিলেন। অন্য ছেলে সুনীলও দু’বার গায়ে হাত তুলেছিলেন। মেয়েরাও হুমকি দিেতন, কাউকে মারধরের কথা বললে বা পুলিশে যাওয়ার কথা ভাবলে, ঘুমের মধ্যেই মেরে ফেলা হবে। সুইসাইড নোটে রাজেন্দ্র ও তাঁর স্ত্রী রোশনি, সুনীল ও তাঁর স্ত্রী অনিতা ও পুত্র প্রণবের নাম লিখে গিয়েছেন হাজারিরাম। দুই মেয়ে মঞ্জু ও সুনীতার নামও লিখেছেন। চিঠিতে বেশ ক’জন আত্মীয়ের নামও লিখেছেন বৃদ্ধ। তিনি লিখে গিয়েছেন, ছেলেমেয়েদের দাবি ছিল, সব সম্পত্তি তাঁদের নামে লিখে দিতে হবে। কিছু আত্মীয়স্বজনও তাঁদের মদত দিচ্ছিলেন, অভিযোগ বৃদ্ধ-বৃদ্ধার।

আত্মঘাতী দম্পতি চিঠিতে জানান, তাঁদের ঠকিয়ে, ঝগড়া-অশান্তি করে তিনটি জমি ও একটি গাড়ি নিজেদের নামে করে নিয়েছিলেন সন্তানেরা। বৃদ্ধ লিখেছেন, তাঁদের থেকে সব কিছু কেড়ে নিয়ে তাঁদের খেতে দিতেন না ছেলেমেয়েরা। ফোন করে অকথ্য ভাষায় গালাগালি দিতেন। সুইসাইড নোটে বৃদ্ধ লিখেছেন, এক দিন সুনীল তাঁকে ফোন করে বলেছিলেন, “একটা বাটি নাও, গিয়ে ভিক্ষা করো। আমি তোমায় খেতে দেব না। কাউকে যদি এ সব বলতে যাও, মেরে ফেলব।”

Advertisement

নাগপুর পুলিশের এসপি নারায়ণ টোগাস জানান, গত কাল তাঁরা খবর পান, হাজারিরাম ও চাওয়ালি দেবীর বাড়িতে কাউকে দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। পুলিশ এসে বাড়ি তল্লাশি করে জলের ট্যাঙ্কে বৃদ্ধ-বৃদ্ধার দেহ পায়। টোগাস বলেন, “বাড়ির চাবি হাজারিরামের পকেটে ছিল। ফরেন্সিক দল ঘটনাস্থল থেকে সব তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করেছে। বাড়ির ভিতরে সিসিটিভি ক্যামেরা ছিল। সেটার রেকর্ডিং পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে। মৃতদেহ দু’টি ময়না তদন্তের জন্য পাঠানো হয়েছে।” তিনি জানান, সুইসাইড নোট পাওয়া গিয়েছে, কিন্তু সব সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই তদন্ত করা হচ্ছে। কারণ, গত সোমবার বৃদ্ধের ছেলে সুনীল নাগপুর পুলিশ-প্রশাসনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছিলেন, তাঁর বাবা-মা আত্মহত্যা করে ছেলেমেয়েদের ফাঁসানোর চেষ্টা করেছেন। বৃহস্পতিবার দেহ উদ্ধার হলেও পুলিশের সন্দেহ, মঙ্গলবার হয়তো মারা যান বৃদ্ধ-বৃদ্ধা। পুলিশ কর্তার আশা, ময়না তদন্তের রিপোর্ট এলে হয়তো কিছু জট খুলবে।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement