প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ছবি: পিটিআই।
সদ্য ক্রিকেট বিশ্বকাপ শেষ হয়েছে ভারতে। তার পরেই ছিল পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা ভোট। লোকসভা ভোটের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে শেষ দফার সেই ভোটকে তাই অনেকেই বিশ্বকাপের আবহে ‘সেমিফাইনাল’ বলছিলেন। কারণ চূড়ান্ত ‘খেলা’য় মাঠে নামার আগে জনতা জনার্দনের মন কোন দিকে, তা জেনে নেওয়ার শেষ সুযোগ এই ভোটই। রবিবার চার রাজ্যের ভোটের ফল ঘোষণার পর বিশ্বকাপের উপমাতেই প্রশ্ন তোলা যেতে পারে, ফাইনালে কারা ‘ট্রফি’ তুলবে তার ইঙ্গিত কি মিলল সেমিফাইনালে?
রবিবার যে চারটি রাজ্যের ভোটের ফল ঘোষণা করা হয়েছে, সেগুলি হল— রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ, ছত্তীসগঢ় এবং তেলেঙ্গানা। এই চার রাজ্যে মোট লোকসভা আসনের সংখ্যা যথাক্রমে ২৯, ২৫, ১১ এবং ১৭। অর্থাৎ এই ভোটের ফল থেকে মোট ৮২টি লোকসভা আসনের ভোটারদের সম্ভাব্য মতামত জানা যেতে পারে। ৫৪৩ টি আসনের লোকসভায় ৮২টি আসনের মতামত জানার অর্থ ১৫ শতাংশের কিছু বেশি ভোটের হিসাব।
কী ভাবে পাওয়া যাবে সেই হিসাব। খুব সহজ হিসাবে এই মান নির্ণয় করা যেতে পারে প্রতিটি দলের প্রাপ্য আসনের সংখ্যাকে ৭দিয়ে ভাগ করে নিলে। কারণ সাধারণত অধিকাংশ লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে থাকে সাতটি করে বিধানসভা। ফলে প্রাপ্য আসনের সংখ্যাকে সাত দিয়ে ভাগ করলে জানা যাবে একটি দলের হাতে কতগুলি লোকসভা আসন রয়েছে। উদাহরণ হিসাবে ছত্তীসগঢ়ের কথাই ধরা যাক।
২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ছত্তীসগঢ়ে জিতেছে বিজেপি। ৫৪টি আসন পেয়েছে তারা। অন্যদিকে কংগ্রেস পেয়েছে ৩৫টি আসন। সহজ হিসাব করলে এই ৫৪টি আসন পাওয়ায় বিজেপির হাতে ৭টি লোকসভা কেন্দ্র এসেছে বলে ধরে নেওয়া যেতে পারে। সেক্ষেত্রে কংগ্রেসের হাতে এসেছে ৫ টি লোকসভা আসন। ছত্তীসগঢ়ে মোট লোকসভা আসন ১১টি। (হিসাবের অতি সরলীকরণে সংখ্যার সামান্য হেরফের হয়েছে। তবে এ থেকে একটা আন্দাজ পাওয়া যেতে পারে।) যেখানে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি ছত্তীসগড়ে ৯টি আসনে জিতেছিল। কংগ্রেস পেয়েছিল ২টি আসন।
তেলঙ্গানায় মোট লোকসভা আসনের সংখ্যা হল ১৭। এর মধ্যে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে তৎকালীন শাসকদল বিআরএস পেয়েছিল ৯টি আসন। বিজেপি পেয়েছিল ৪টি। কংগ্রেস ৩টি আসনে জিতেছিল। ২০২৩ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সরল হিসাব বলছে কংগ্রেসের হাতে রয়েছে ৬৪টি বিধানসভা অর্থাৎ ৯টি লোকসভা আসন। বিআরএস ৩৯টি বিধানসভা পেয়েছে অর্থাৎ ৫টি লোকসভা আসন। বিজেপি পেয়েছে ৮টি বিধানসভা অর্থাৎ ১টি লোকসভা আসন।
রাজস্থানে মোট লোকসভা আসন ২৫টি। ২০১৯ সালের এর মধ্যে ২৪টিতেই জিতেছিল বিজেপি। কংগ্রেস একটিও পায়নি। ২০২৩-এর বিধানসভার হিসাবে কংগ্রেসের হাতে রয়েছে ৬৯ বিধানসভা অর্থাৎ ৯টি লোকসভা। বিজেপির হাতে ১১৫টি বিধানসভা অর্থাৎ ১৬টি লোকসভা আসন।
মধ্যপ্রদেশে ২৯টি লোকসভার মধ্যে ২০১৯ সালে ২৮টিতে জিতেছিল বিজেপি। কংগ্রেস পেয়েছিল একটি আসন। ২০২৩ সালে বিজেপি ১৬৩টি আসন পেয়েছে বিধানসভায় অর্থাৎ সরল হিসাবে লোকসভার ২৩টি আসন। কংগ্রেসের হাতে রয়েছে ৬৬টি বিধানসভা অর্থাৎ লোকসভার ৯টি আসন। (এখানেও হিসাবের অতি সরলীকরণে সংখ্যার সামান্য হেরফের হয়েছে।)
তা হলে কী দাঁড়াল? হিসাবের সামান্য হেরফেরকে গুরুত্ব না দিলে ৮২ লোকসভা আসনের মধ্যে ৪৭টি রয়েছে বিজেপির দখলে। কংগ্রেসের হাতে রয়েছে ৩২টি লোকসভা আসন। অর্থাৎ ব্যবধান মাত্র ১৫-র।
তবে মনে রাখতে হবে যে পদ্ধতিতে এই হিসাব হয়েছে তাকে অতিসরলীকরণ করা হয়েছে। ফলে এই হিসাব কখনওই লোকসভা ভোটের ফলাফলের হিসাব নয়। এই হিসাব দিয়ে লোকসভার ভোটের ফলের আন্দাজ পাওয়াও সম্ভব নয়। এ খানে শুধুই গত বারের লোকসভা ভোটের ফলাফলকে সামনে রেখে এ বারের বিধানসভা ভোটের ফলাফলকে সামান্য বিশ্লেষণ করার চেষ্টা হয়েছে মাত্র।