—প্রতিনিধিত্বমূলক ছবি।
ভোট বড় বালাই। জ্বালানির আগুন দামে ক্ষুব্ধ মানুষের মন পেতে তাই সদ্য রান্নার গ্যাস সিলিন্ডার ২০০ টাকা কমিয়েছে মোদী সরকার। এ বার তেলের দাম কমানো নিয়েও আগামী দিনে ভাবনা-চিন্তা করার ইঙ্গিত দিল তারা। তবে তার আগে শর্ত রাখল, বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলিকে পেট্রল-ডিজ়েলের যুক্তমূল্য কর (ভ্যাট) ছাঁটতে হবে। বিরোধী মহলের অবশ্য দাবি, খয়রাতির রাজনীতি করতে নেমেছে বিজেপি। সামনেই রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ-সহ পাঁচ রাজ্যে নির্বাচন। আগামী বছর লোকসভা ভোট। পায়ের নীচের মাটি সরে যেতে পারে আঁচ করে আমজনতার মন পেতে মরিয়া তারা। গ্যাসের দাম কমানো হয়েছে সেই লক্ষ্যেই। আগামী দিনে তেলকেও এ ভাবে ব্যবহার করা হতে পারে। বিরোধীদের কটাক্ষ, ভোট যত এগিয়ে আসবে তত জনদরদি হয়ে উঠতে দেখা যাবে এই সরকারকে।
বিশ্ব বাজারে দীর্ঘদিন অশোধিত তেলের দাম ব্যারেল পিছু ৭০-৭৫ ডলারে ঘুরে বেড়ালেও, দেশবাসীর দরজায় সেই সুরাহা পৌঁছয়নি। এখন তা একটু উঠে প্রায় ৮৫ ডলার। তবে দেশে পেট্রল-ডিজ়েল এক বছরেরও উপর চড়া এবং একই জায়গায় থমকে। কলকাতায় আইওসি-র পাম্পে পেট্রলের লিটার ১০৬.০৩ টাকা, ডিজ়েল ৯২.৭৬ টাকা। এই পরিস্থিতিতে বুধবার তেলমন্ত্রী হরদীপ সিংহ পুরী বলেছেন, কেন্দ্র দু’বার তেলে উৎপাদন শুল্ক কমিয়েছে। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিও ভ্যাট ছেঁটেছে। কিন্তু কথায় কথায় মোদী সরকারের বিরোধিতা করে যারা, সেই বিরোধী রাজ্যগুলি কমানোর পথে হাঁটেনি। বরং দিল্লি, পঞ্জাবের মতো কেউ কেউ কর বাড়িয়ে দিয়েছে। তার পরেই মন্ত্রীর মন্তব্য, ‘‘অ-বিজেপি রাজ্যগুলিও যদি ভ্যাট কমায়, তা হলে কাঁধে কাঁধে মিলিয়ে কেন্দ্রীয় সরকার পরের পদক্ষেপ করার কথা ভাববে।’’
সংশ্লিষ্ট মহলের একাংশের মতে, ভোটের মুখে দেশ জুড়ে বাড়তে থাকা খাদ্যপণ্যের দাম কমাতে মরিয়া মোদী সরকার। তাই চাল-গমের রফতানি নিয়ন্ত্রিত করেছে। পেঁয়াজের জোগান বাড়াচ্ছে। টোম্যাটোআমদানি করছে বিদেশ থেকে। খোলা বাজারে কম দামে বিক্রির ব্যবস্থা করছে বিভিন্ন খাদ্যপণ্য। এ বার সেই লক্ষ্যেই তেলের দাম বিশেষত ডিজ়েলের খরচ কমানোর কথা ভাবতে পারে তারা। কারণ, তাতে পণ্য পরিবহণ খাতে খরচ কমবে। যে কারণে বহু বিশেষজ্ঞও অনেক দিন ধরে মূল্যবৃদ্ধিতে রাশ টানার জন্য তেলের শুল্ক আরও কমানোর কথা বলছেন। তবে বিভিন্ন পক্ষের এটাও ধারণা, রাজনীতির অঙ্ক কষে বিরোধী শাসিত রাজ্যগুলির উপরে আগে চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে মোদী সরকার। তারা ভ্যাট কমালে কেন্দ্রকে উৎপাদন শুল্ক ছাঁটতে হবে কম। এতে এক দিকে, আর্থিক বোঝা কিছুটা লাঘব হতে পারে। অন্য দিকে, ভোটের মুখে শুল্ক ছেঁটে জনমুখী পদক্ষেপের বার্তা দেওয়া যাবে। উপদেষ্টা সংস্থা সিটিগ্রুপ-ও মনে করছে, আসন্ন উৎসবের মরসুম এবং ভোটের প্রেক্ষিতে তেলের দাম কমানোর ব্যবস্থা করতে পারে কেন্দ্র।
গৃহস্থের রান্নার গ্যাস সিলিন্ডারের দাম ২০০ টাকা কমিয়ে ইতিমধ্যেই দেশের নাগরিকের স্বার্থ রক্ষার দাবি করেছে সরকার। বিরোধীদের প্রশ্ন, এর আগে বিশ্ব বাজারে এলপিজি বা সেটির উপাদান সস্তা হলেও কেন এই সুরাহা দেওয়া হয়নি? উল্টে একটি সিলিন্ডার হাজার টাকা ছাড়িয়েছে। সাধারণ মানুষের চাপ আরও বাড়িয়ে কোথাও সরকারি ভর্তুকি উধাও হয়েছে, কোথাও তা ছিল নামমাত্র। যেমন, কলকাতায় মিলত ১৯.৫৭ টাকা। গ্যাসের দাম এখানে ১১২৯ টাকা থেকে কমে ৯২৯ টাকা হওয়ার পরে সেটুকু ভর্তুকিও আর মিলবে কি না, তা নিয়ে জল্পনা রয়েছে বাজারে। এ দিনই অবশ্য এক সাক্ষাৎকারে পুরীর দাবি, ভর্তুকি শুধু উজ্জ্বলা যোজনার আওতায় থাকা দরিদ্র গ্রাহকদের জন্যই। তাঁরা ২০০ টাকা ভর্তুকি পান।
কেন্দ্রকে এসপি সমর্থিত সাংসদ তথা প্রাক্তন কংগ্রেস মন্ত্রী কপিল সিব্বলের কটাক্ষ, ২০২৪-এর ভোট যত এগিয়ে আসবে, ততই গরিবদের কথা আরও বেশি করে মনে পড়বে। তাঁর প্রশ্ন, তা হলে বিরোধী দলগুলি জনকল্যাণমুখী প্রকল্প হাতে নিলে খয়রাতির অভিযোগ তোলা হয় কেন? এত দিন দাম কেন কমেনি, প্রশ্ন জিডি (ইউ)-রও।
এ দিকে, রান্নার গ্যাসের দাম কমাতে কেন্দ্র রাষ্ট্রায়ত্ত তেল সংস্থাগুলিকে নির্দেশ দেওয়ায়, তাদের উপরে যে আর্থিক বোঝা চাপবে তা তাদের মিটিয়ে দেওয়া হবে বলে মোদী সরকারের তরফে ইঙ্গিত মিলেছিল। কিন্তু সূত্রের খবর, চলতি অর্থবর্ষের প্রথম পাঁচ মাসে সংস্থাগুলি বিপুল আয় করায় কেন্দ্র তাদের সেই ক্ষতিপূরণ না-ও দিতে পারে।