সারা দেশে রেল পরিষেবা স্বাভাবিক হওয়ার পরে এ-পর্যন্ত প্রায় ৩০০ নিজস্ব ফুড প্লাজ়া খুলে দিয়েছে আইআরসিটিসি। চলতি মাসে তাদের আরও ৭০-৮০টি ফুড প্লাজ়া খুলে দেওয়ার কথা। অতিমারি পরিস্থিতিতে গত দু’বছরে পর্যটন ব্যবসার মতোই প্রভূত ক্ষতি হয়েছে হোটেল-রেস্তরাঁ ব্যবসার। বহু স্টেশনে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও যাত্রী চলাচল আগের পর্যায়ে পৌঁছয়নি বলে রেলের খবর।
ফাইল চিত্র।
ট্রেন তো চালায়, যাত্রীদের বিচিত্র খাদ্যরুচি এবং হরেক রুচির রসনাতৃপ্তির খাবার বানানোর ব্যাপারে রেলের দক্ষতা কতটা? প্রশ্নটা উঠছে আইআরসিটিসি বা ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কেটারিং অ্যান্ড টুরিজ়ম কর্পোরেশনের এক্তিয়ারে নাক গলিয়ে রেল নিজেরাই খাবার সরবরাহের দিকে ঝোঁকায়। বিভিন্ন স্টেশনে রেলের নিজস্ব উদ্যোগে ফুড প্লাজ়া, রেস্তরাঁ খোলার সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আর্জি জানিয়েছে আইআরসিটিসি। ওই কাজে রেলের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। মনে করা হচ্ছে, সেই কারণেই এই আবেদন জানানো হয়েছে।
সারা দেশে রেল পরিষেবা স্বাভাবিক হওয়ার পরে এ-পর্যন্ত প্রায় ৩০০ নিজস্ব ফুড প্লাজ়া খুলে দিয়েছে আইআরসিটিসি। চলতি মাসে তাদের আরও ৭০-৮০টি ফুড প্লাজ়া খুলে দেওয়ার কথা। অতিমারি পরিস্থিতিতে গত দু’বছরে পর্যটন ব্যবসার মতোই প্রভূত ক্ষতি হয়েছে হোটেল-রেস্তরাঁ ব্যবসার। বহু স্টেশনে ট্রেন চলাচল শুরু হলেও যাত্রী চলাচল আগের পর্যায়ে পৌঁছয়নি বলে রেলের খবর।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, আইআরসিটিসি নিজেরা ওই সব প্লাজ়া চালায় না। তারা বাইরের সংস্থাকে বরাত দেয়। অতিমারি পর্বে আয় না-হওয়ায় এই লাইসেন্সপ্রাপ্ত বহু সংস্থা ফুড প্লাজ়া চালানোর দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছে বলেও অভিযোগ। এই অবস্থায় আইআরসিটিসি সারা দেশে কমবেশি ৪০টি ফুড প্লাজ়া রেলকে ফিরিয়ে দিয়েছে। বিভিন্ন সময়ে টেন্ডার বা দরপত্র ডাকার পরেও উপযুক্ত সংস্থা না-মেলায় এই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়েছে বলে রেল শিবিরের খবর।
দেশের বড় বড় রেল স্টেশন চত্বরে ফুড প্লাজ়া, জন-আহার, রকমারি খাবারের রেস্তরাঁ চালানোর দায়িত্ব আইআরসিটিসি-র মাধ্যমে বেসরকারি সংস্থাকে দিয়ে রেলের প্রতি বছর প্রায় ১২০ কোটি টাকা আয় হয়। অতিমারি পরিস্থিতিতে সেই আয় কার্যত তলানিতে ঠেকেছে। ওই খাতে গত দু’বছরে এক-দশমাংশেরও কম আয় হয়েছে রেলের। চলতি অর্থবর্ষে আয় বাড়ানোর জন্য রেলের উপরে প্রভূত চাপ রয়েছে। ‘অপারেটিং রেশিয়ো’ বা রেল পরিচালনার অনুপাত ৯৭ টাকার কমে ধরে রাখতে মরিয়া হয়ে আয় বাড়ানোর চেষ্টা করছে রেল। সার্বিক ভাবে এই পরিস্থিতির দরুন যে-সব ফুড প্লাজ়া, রেস্তরাঁ চালানোর লোক মেলেনি, সেগুলিকে রেল এ বার নিজেরাই চালাতে উদ্যোগী হয়েছে।
রেল বোর্ডের পক্ষ থেকে গত ৮ মার্চ ১৭টি জ়োনকে রেস্তরাঁ, ফুড প্লাজ়া খুলে দেওয়ার অধিকার দেওয়া হয়। কিন্তু রেল বোর্ডের সংশ্লিষ্ট নির্দেশকে ঘিরে শোরগোল পড়ে। ট্রেন চালানো ছাড়া রেলের পরিষেবা সংক্রান্ত কাজ দেখার জন্যই আইআরসিটিসি তৈরি করা হয়েছিল। এখন ওই সংস্থারই অধিকার কেড়ে নেওয়ার উদ্যোগ ঘিরে প্রশ্ন উঠছে। রেলকর্তাদের একাংশের বক্তব্য, আইআরসিটিসি-র ওই কাজ করার অভিজ্ঞতা ও দক্ষতা থাকায় তাদের উপরেই নির্ভর করা উচিত। আইআরসিটিসি সূত্রের খবর, অতীতে রেল নিজে রেস্তরাঁ, ফুড প্লাজ়ার দায়িত্ব নিয়ে চালানোর চেষ্টা করলেও তাতে বিশেষ সুফল মেলেনি। এই পরিস্থিতিতেই রেলের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করার জন্য সংস্থার তরফে আর্জি জানানো হয়েছে।