কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।
তিনি আসবেন। তটস্থ গোটা করিডর।
রাইসিনা পাহাড়ে উঠলে চারটি মন্ত্রক। ডান পাশে স্বরাষ্ট্র, বাঁ দিকে প্রতিরক্ষা। একটু এগোলে ডান দিকে অর্থ, বাঁয়ে বিদেশ ও প্রধানমন্ত্রী দফতর। আর সোজা রাষ্ট্রপতি ভবন। শনিবার ছুটির দিন, পর্যটকদের ভিড় থাকে। কিন্তু আজ তিনি আসবেন। তাই পাহাড়ে চড়ার অনুমতি নেই। পরিচয়পত্র দেখিয়ে, চিরুনি তল্লাশির পর তা-ও ছাড় পাচ্ছেন সাংবাদিকরা। প্রশ্ন উঠছে, এখন থেকেই! প্রতিরক্ষা মন্ত্রকে প্রবেশে এমনিতেই কড়াকড়ি, গত কাল অর্থ মন্ত্রকেও সাংবাদিকদের বিচরণে রাশ টানতে বলেছেন নির্মলা সীতারামন, বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর তো দেখাই করছেন না। আর তার পর অমিত-বিক্রমের থেকে অন্য কী-ই বা আশা করা যায়?
‘তিনি’ দেশের নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে পা রাখতেই থমথমে ভাব। ‘প্রচণ্ড জনমত’ নিয়ে নরেন্দ্র মোদী ফের প্রধানমন্ত্রী। আর দ্বিতীয় ক্ষমতাধর ব্যক্তি অমিত শাহ এখন রাজনাথ সিংহকে সরিয়ে নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী। গত কাল থেকেই বিজেপি শিবিরে আলোচনা শুরু হয়েছে, ‘‘এ বারে সব ঠান্ডা হবে ভয়ে।’’ জম্মু-কাশ্মীরে কালকেই পাঁচ যুবক সন্ত্রাসের পথ ছেড়ে মূলস্রোতে ফিরেছেন। বিজেপির অনেক নেতাই ঘরোয়া মহলে বলতে শুরু করেছেন, ‘‘দেখুন, স্বরাষ্ট্রে শুধু অমিত শাহের নাম ঘোষণা হয়েছে। দায়িত্বও নেননি। তার আগে শুধু তাঁর নামেই প্রভাব পড়তে শুরু করেছে।’’ অনেকে তো এখন থেকেই অমিতের মধ্যে আর এক বল্লভভাই পটেলের ছায়া দেখতে শুরু করেছেন।
সেই অমিত শাহ মন্ত্রকের দায়িত্ব নিতে আসবেন। স্বাগত জানাতে নর্থ ব্লকের দরজায় দাড়িয়ে রয়েছেন দুই রাজীব। স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব গওবা ও গোয়েন্দা প্রধান রাজীব জৈন। মন্ত্রীর ঘর দোতলায়। তিনি কী লিফ্টে চেপে উঠবেন? আধ ঘণ্টা ধরে খুলেই রাখা হয়েছে লিফ্ট। গোটা করিডরে থিকথিকে ভিড়। শনিবারেও মন্ত্রকে পুরো উপস্থিতি। অবশেষে বেলা সোয়া বারোটা নাগাদ এলেন তিনি। লিফ্ট ছেড়ে সিড়ি দিয়েই উঠলেন। তার আগে অবশ্য দেখা করে এসেছেন এত দিন মন্ত্রকের দায়িত্বে থাকা রাজনাথের সঙ্গে। যাঁর ঠিকানা এখন নর্থ ব্লকের উল্টো দিকে সাউথ ব্লকে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘরে চেয়ারের পিছনেই অমিত শাহের নাম খোদাই করা হয়েছে গত কাল। দেশের ৩৫ নম্বর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তিনি।
নিজের নতুন ঘরে প্রবেশ করলেন। সই করে দায়িত্ব নিলেন। দুই প্রতিমন্ত্রী জি কিষাণ রেড্ডি ও নিত্যানন্দ রায়কে ডেকে পাঠালেন। দু’মিনিটের জন্য। তার পর ‘নমস্কার’ করে সকলকে বিদায় নিতে বললেন। থাকলেন শুধু স্বরাষ্ট্রসচিব আর গোয়েন্দা প্রধান। তাঁদের সঙ্গে একান্তে বৈঠক করলেন অনেক ক্ষণ। এর পর সব যুগ্ম সচিবের সঙ্গে। এর ফাঁকেই একে একে রাজ্যপালরা আসা শুরু করলেন। কেরল, মহারাষ্ট্র, জম্মু-কাশ্মীরের।
নিজের ঘরে বড় টেলিভিশনের পর্দায় একসঙ্গে চারটি খবরের চ্যানেল চলছে। সেখানেই চোখে পড়েছে, তাঁরই মন্ত্রকে বসে প্রতিমন্ত্রী কিষাণ রেড্ডি হায়দরাবাদকে সন্ত্রাসের ‘স্বর্গরাজ্য’ বলেছেন। কারণ, সেখানে আইএস সন্দেহে গ্রেফতার হচ্ছে। আর তা নিয়ে চলছে হল্লা। আসাদুদ্দিন ওয়াইসি- বলছেন, উত্তরপ্রদেশে আইএস ধরা পড়ছে না? নিজের ছোট মন্ত্রীকে ডেকে পাঠালেন অমিত। ধমক দিলেন। কাচুমাচু মুখে বেরিয়ে এসে রেড্ডি বললেন, ‘‘আমি তো ধর্মের নামে কিছু বলিনি। শুধু সন্ত্রাস নিয়ে বলছিলাম!’’
প্রথম দিন মন্ত্রকের কাজ সেরে অমিত যান বিজেপি দফতরে। সভাপতির দায়িত্ব পালনে।