ফাইল ছবি ছবি: পিটিআই
ঠিক সময়েই জম্মু ও কাশ্মীরকে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে। লোকসভায় শনিবার মন্তব্য করলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ।
সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপ ও পূর্বতন জন্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের মর্যাদা কেড়ে নেওয়া নিয়ে লোকসভায় বিরোধীদের প্রশ্নের জবাব দিলেন অমিত। বললেন, ‘‘যখন কাশ্মীর বিভক্ত করা হয়েছিল, তখন কোথাও লেখা ছিল না যে ভূস্বর্গ রাজ্যের মর্যাদা ফিরে পাবে না। সঠিক সময়ে রাজ্যের মর্যাদা ফিরিয়ে দেওয়া হবে জম্মু ও কাশ্মীরকে।’’ এর পর রেগে গিয়ে তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমি বিল এনেছি। এই বিল পেশ করেছি। কী জন্য এই সংশোধনী বিল আনা হয়েছে, তা আপনাদের ব্যাখ্যা করে বলেছি। আপনারা ভুয়ো সংবাদ ছড়ানো বন্ধ করুন। অতীতে কি কোনও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়নি? অতীতে কি কখনও কোনও সীমান্তবর্তী অঞ্চলকে রাজ্যের মর্যাদা দেওয়া হয়নি? তা হলে জম্মু ও কাশ্মীর এ সবের থেকে আলাদা হবে কী করে?’’
১৭ মাস আগে কেন্দ্রীয় সরকার ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের পাশাপাশি জন্মু ও কাশ্মীরকে দু’ভাগে বিভক্ত করে। কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল হিসাবে জন্ম নেয় জম্মু ও কাশ্মীর এবং লাদাখ। কাশ্মীরের নেতা ওমর আবদুল্লা, মেহবুবা মুফতিরা ক্রমাগত কেন্দ্রীয় পদক্ষেপের বিরোধিতা করতে থাকেন। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী যে কাশ্মীরি নেতার জন্য রাজ্যসভায় চোখের জল ফেলেছেন, ভূস্বর্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সেই গুলাম নবি আজাদও সেই সময় সরব হয়েছিলেন কেন্দ্রের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে।
সেই সূ্ত্রেই লোকসভায় কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে বিরোধীরা শনিবার জানতে চান, রাজ্য ভাগ ও ৩৭০ অনুচ্ছেদ বিলোপের পর কী এমন উন্নতি হয়েছে ভারতের সীমান্ত রাজ্যের? কাশ্মীরি পণ্ডিতদের বিষয় তুলে শাহকে আক্রমণ করেন কংগ্রেসের বহরমপুরের সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরী। বলেন, ‘‘এতদিন হয়ে গেল, তারপরেও কাশ্মীরের পণ্ডিতদের ২০০-৩০০ একর জমি ফিরিয়ে দিতে পারেনি কেন্দ্রীয় সরকার। কেন নির্বাচনী ইস্তাহারে বিজেপি কাশ্মীর থেকে প্রতারিত ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদের ফেরানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল? তাহলে কি নির্বাচন মেটার সঙ্গে সঙ্গে প্রতিশ্রুতিও হাওয়া মিলিয়ে গিয়েছে বিজেপির?’’ কাশ্মীরের বাণিজ্য পরিস্থিতি থেকে শুরু করে অন্য একাধিক বিষয়েও প্রশ্ন করেন অধীর।
জবাবে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘‘মাত্র ১৭ মাস হয়েছে রাজ্য বিভক্ত হয়েছে। এর মধ্যে এত প্রশ্নের অর্থ কী? প্রশ্ন তো তাঁদের করা উচিত, যাঁরা প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে কাশ্মীরে শাসনভার সামলেছেন। ৭০ বছরে কতটুকু উন্নতি হয়েছে? আমি কাশ্মীরের উন্নতির খতিয়ান দিতে দায়বদ্ধ। কিন্তু যাঁরা প্রশ্ন তুলছেন, তাঁরা নিজেদের একবার প্রশ্ন করে দেখতে পারেন, তা হলেই পাল্টা প্রশ্নের গ্রহণযোগ্যতা স্পষ্ট হবে।’’
শনিবার লোকসভায় সংখ্যালঘু উন্নয়নের বিষয় থেকে আলোচনা পরিবর্তিত হয়ে চলে যায় কাশ্মীর বিষয়ে। কেরলের সাংসদ এনকে প্রেমচন্দ্রন রাজ্যের আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের বিবৃতি দাবি করেন। তিনি কাশ্মীরে সর্বদলীয় প্রতিনিধি দল পাঠানোর বিষয়েও দাবি করতে থাকেন। তার উত্তরেই অমিত শাহ প্রথমেই সমস্ত রাজনৈতিক দলকে অনুরোধ করেন, কাশ্মীরের ইস্যুকে রাজনৈতিক চেহারা না দিতে। পাশাপাশি তিনি আক্রমণ করেন কংগ্রেস সাংসদ মণীশ তিওয়ারিকে। তিনি বলেন, ‘‘মণীশজি, আমি কাশ্মীরের সেই অশান্ত দিনগুলির কথা মনে করতে চাই না। যেখানে রোজ হত্যা, অশান্তি, কারফিউ লেগেই থাকত। এখন সেখানে শান্তি ফিরেছে। কাশ্মীরের শান্তি অনেক বড় বিষয়। আমাদের সরকারে সেই দিনগুলিকে আর ফিরিয়ে আনতে দেওয়া হবে না।’’
এই বিতর্কের মধ্যেই শনিবার লোকসভায় পাশ হয়ে গেল জম্মু ও কাশ্মীর পূনর্গঠন বিল (২০২১)। অরুণাচল প্রদেশ, গোয়া ও মিজোরামের সিভিল সার্ভিস আধিকারিকদের সঙ্গে জম্মু ও কাশ্মীরের আধিকারিকদের মিলিতভাবে দেখার আইনটির পরিবর্তে এই নতুন বিলটি আনল কেন্দ্রীয় সরকার।