স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। —ফাইল চিত্র।
দেশের সর্বোচ্চ আদালত গণপিটুনির ঘটনা রুখতে সংসদকে নতুন আইন তৈরি করার কথা বিবেচনা করার পরামর্শ দিলেও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বিষয়টিকে ততটা গুরুত্ব দিতে রাজি নন। বিজেপি জমানায় দেশে গণপিটুনির জেরে হত্যা বাড়ছে, এই দাবিকে নস্যাৎ করে অমিত বলছেন, এই মুহূর্তে গণপিটুনি আটকাতে আলাদা করে আইন প্রণয়নেরও কোনও প্রয়োজনীয়তা নেই। বরং নানা সময়ে এই ধরনের ইস্যুকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে বলে দাবি তাঁর।
বুধবার সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যম ‘নিউজ এইট্টিন’কে সাক্ষাৎকার দেন অমিত শাহ। সেখানেই তিনি বলেন, ‘‘যদি কোনও ব্যক্তিকে হত্যা করা হয় তবে তার বিচারের জন্যে ৩০২ ধারা রয়েছে। এটা দেশের সর্বত্র প্রযোজ্য। বিজেপি সরকার এমন ঘটনা সামনে এলেই তদন্ত করেছে, অভিযুক্তের বিরুদ্ধে চার্জশিটও গঠন করা হয়েছে।’’ কিন্তু বিরোধীরা রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে এই ধরনের বিষয়কে হাতিয়ার করেছে, মত শাহের। তাঁর কথায়, ‘‘এই ধরনের ঘটনায় রাজনীতির রং লাগানো অনুচিত। আবার কেউ যদি একে সামাজিক অন্যায় বলে দাগিয়ে দেন,তবে সমাজই অন্যায় প্রতিকারের পথ খুঁজে নেবে।’’
কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই গণপিটুনির শিকার হওয়া ব্যক্তি কেন একজন মুসলিম? প্রশ্নের উত্তরে অমিত শাহর দাবি, ‘‘প্রহৃত ব্যক্তি সবসময়ে মুসলমান এইভাবে চিহ্নিত করা ঠিক নয়, বিশ্লেষণ করলে দেখা যাবে এই ধরনের ঘটনা শিকার যাঁরা হন, তাঁরা দরিদ্র।’’
আরও পড়ুন:দূষণে নাভিশ্বাস, সরকারি দফতরের সময় বদলাতে চলেছে দিল্লি
আরও পড়ুন:‘ডুবে মরো’, বিরোধীদের কটাক্ষ প্রধানমন্ত্রীর
গত কয়েক বছরে গোটা দেশে অজস্র গণপিটুনির ঘটনা সামনে এসেছে। ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে অনেককে। বাড়িতে গো মাংস রাখা রয়েছে সন্দেহে বা গো-মাংস নিয়ে যাওয়ার জন্যেও উন্মত্ত জনতা রাস্তায় ফেলে পিটিয়েছে দেশের নাগরিককেই। উন্মত্ত জনতার মুখে শোনা গিয়েছে জয় শ্রীরাম ধ্বনি। এই আবহে সুপ্রিম কোর্ট গত বছরই সরকারকে পরামর্শ দেয়, গণপিটুনি আটকাতে নতুন আইন আনার জন্যে। এক বছর পেরিয়ে গেলেও সে ব্যাপারে কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি সরকারের তরফে। এই বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে, এদিন অমিত বলেন, ‘‘আইন তো রয়েছেই, দরকার এই বিষয়গুলিতে আইন মেনে তদন্ত। এই তদন্ত যাতে সুষ্ঠুভাবে হয় তার জন্যে অ্যাডভাইসরিও জারি করা হয়েছে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের তরফে।’’
সম্প্রতি গণপিটুনি আটকাতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠিও দেন ৪৯ জন বিশিষ্টজন। তার দিনকয়েক পরে নাগপুরে বিজয়া দশমীর সভায় রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘপ্রধান মোহন ভাগবত বলেছিলেন, ‘লিঞ্চিং’ একটি পশ্চিমী ধারণা। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীও এদিন স্পষ্টই দাবি করলেন, বিজেপি জামানায় গণপিটুনির ঘটনা বেড়ে গিয়েছে এই তথ্য ঠিক নয়। দেখা যাচ্ছে গ্রামে চুরি হয়েছে, চোরকে গ্রামবাসী প্রহার করেছে,এমন ঘটনাতেও রাজনৈতিক রং লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’’