ফাইল চিত্র।
বঙ্গের ভোটে তারা বাংলার মনীষীদের শরণে। অসমের ভোটে বিজেপি স্মরণ করছে বৈষ্ণব ধর্মগুরু শ্রীমন্ত শঙ্করদেবকে।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ অসমে এসে আসন্ন বিধানসভা ভোটের রণদামামা বাজিয়ে, শঙ্করদেবের শ্লোক আওড়ে আজ ঘোষণা করলেন, অসমকে দেশ তথা বিশ্ব পর্যায়ে তুলে নিয়ে এসেছিলেন শঙ্করদেব।
ভারতে ভক্তি আন্দোলনের ইতিহাসে বরাবরই ব্রাত্য থেকেছেন অসমের এই বৈষ্ণব ধর্মগুরু। ছয় শতাব্দী পরেও অসমের বর্তমান সমাজে তাঁর ভাবাদর্শের প্রভাব রয়েছে। যদিও বৈষ্ণব ধর্ম প্রচারের পাঠ্য ইতিহাসে চৈতন্যদেব যতটা আলোচিত ও পঠিত, ধারেকাছে নেই শঙ্করদেব। রাজ্য থেকে বারবার অনুরোধের পরেও সর্বভারতীয় পাঠ্যসূচিতে অসমের শঙ্করী অধ্যায় অন্তর্ভুক্ত হয়নি। কিন্তু ভোটের মুখে বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি আজ গুয়াহাটিতে শোনালেন, “শঙ্করদেবের বার্তা ভারতে ছড়িয়ে পড়ার পরেই দেশে ভক্তি আন্দোলনের সূত্রপাত!” ১৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে শ্রীমন্ত শঙ্করদেবের জন্মস্থান বটদ্রবাকে ঢেলে সাজিয়ে পর্যটন ও সংস্কৃতি কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তুলছে অসম সরকার। সেই প্রকল্পের সূচনা করে অমিত বলেন, “অসমের সঙ্গীত, নাট্য, সাহিত্য-সংস্কৃতি ভারতের সংস্কৃতির গহনা। তার আদিপুরুষ শঙ্করদেবের আদর্শকে বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।” রাজ্যের আট হাজার নামঘরকে আড়াই লক্ষ টাকা করে সাহায্যদানের কথা ঘোষণা করে শাহ বলেন, “বৈষ্ণব আদর্শে ভিত্তি করেই বরাবরের জন্য অসম থেকে হিংসা ও একে-৪৭-এর সংস্কৃতি বিদায় নেবে। জায়গা নেবে সাহিত্য-কলার সংস্কৃতি।” শাহ মনে করিয়ে দেন, বিজেপি জমানাতেই ভূপেন হাজরিকাকে ভারতরত্ন দেওয়া হয়েছে।
এক দিকে অসমের ছাত্র আন্দোলনকে সম্মান করে, অসম চুক্তি অক্ষরে অক্ষরে রূপায়ণের জন্য উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গড়ে দিয়েছেন শাহ। আবার আজ সেই ছাত্র আন্দোলনকেই জঙ্গি আন্দোলনের সঙ্গে মিলিয়ে তীব্র সমালোচনা করলেন তিনি। আসুর তৈরি রাজনৈতিক দলকে কটাক্ষ করে বললেন, “এক সময় যারা আন্দোলন করে অসম অস্থির করে রেখেছিল, তারাই আবার রাজনৈতিক দল গড়েছে, যাতে বিজেপির ভোট নষ্ট করা যায়। যে কংগ্রেস গুলি করে ৮৫৫ জন অসমের যুবককে ‘শহিদ’ করেছে তাদেরই ভোটে সুবিধে করে দিতে এই দল তৈরি হয়েছে।”
শাহের দাবি, “উত্তর-পূর্বের যুবকরা অস্ত্র-আন্দোলন ছেড়ে দেশের উন্নয়নের সঙ্গী হয়েছেন। কিন্তু বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ফের ছদ্মবেশে মাঠে নেমেছে। তারা রাজ্য অশান্ত করতে আন্দোলনে উস্কানি দেবে। কিন্তু আন্দোলন করে বিকাশ, চাকরি, শিল্প কিছুই হয়নি।” তাঁর মতে, রাজ্যের মূল সমস্যা অনুপ্রবেশ ও বন্যা। কংগ্রেস বা এই সব ভুঁইফোড় দলের ক্ষমতা নেই অনুপ্রবেশ বা বন্যা রোখার। বিজেপি তা করে দেখিয়েছে। সত্র,
কাজিরাঙার জমি জবরদখল-মুক্ত করেছে। গন্ডার শিকার, অনুপ্রবেশ বন্ধ করেছে। করোনা নিয়ন্ত্রণ ও মানুষকে সাহায্যের ক্ষেত্রে অসম দেশের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে। ৭ লক্ষ ২০ হাজার চা শ্রমিকের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলে দেওয়া হয়েছে। শাহ এ দিন গুয়াহাটিতে নির্মীয়মাণ ভারতের সর্ববৃহৎ মেডিক্যাল কলেজ ও সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতাল ও ১০টি নতুন আইন কলেজের শিলাল্যাস করেন। বড়ো শান্তি চুক্তির সাফল্য ও বড়োভূমিতে বিজেপি জোটের পরিষদ গঠনের কথা তুলে ধরে শাহ বলেন, “বিনা রক্তপাতে, ৮০ শতাংশ ভোটিংয়ে সেমিফাইনাল জিতেছি। বড়ো চুক্তির সব শর্তের
রূপায়ণ চলছে। এ বার ফাইনাল লড়াইয়েও আমরাই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাব।”