কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ফাইল চিত্র।
গঙ্গায় অসংখ্য শবদেহ ভেসে যাওয়ার এখনও ছ’মাসও কাটেনি। অক্সিজেনের অভাবে সেই সময়ে ভারতে কোভিড রোগীর মৃত্যুর সংখ্যা আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের শিরোনাম হয়েছিল। সেই স্মৃতি মলিন হওয়ার আগেই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ তাঁর সরকারের কোভিড মোকাবিলার প্রশংসায় সরব হলেন।
শাহ আজ বলেছেন, “কোনও নিরপেক্ষ এজেন্সিকে দিয়ে পরিস্থিতির মূল্যায়ন করানো হলে অনিবার্য ভাবে এটাই প্রমাণিত হবে যে, অতিমারির মোকাবিলায় এবং মৃত্যুর হার কমানোয় দেশ দুর্দান্ত কাজ করেছে। সীমাবদ্ধ সঙ্গতির মধ্যেও বিশ্বের সমস্ত দেশের মধ্যে সবচেয়ে ভাল ভাবে সামলানো হয়েছে ভারতের পরিস্থিতি।” বিরোধীদের মতে, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের দ্বিতীয় গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি শাহ এই কথার মাধ্যমে ইঙ্গিত করেছেন যে, কোভিড মোকাবিলায় কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ওঠা ব্যর্থতার অভিযোগ আসলে ছিল সংবাদমাধ্যম এবং বিরোধী রাজনীতির প্রচার মাত্র! এর পাশাপাশি শাহের দাবি, অতিমারির মধ্যে আসা ঘূর্ণিঝড় আমপানের মোকাবিলাও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ‘দুর্দান্ত ভাবে’ করা হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ থেকে উত্তর চব্বিশ পরগনা লন্ডভন্ড করে দেওয়া ওই ঝড় প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য, “এত ভাল প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল যে, একটি অক্সিজেন প্লান্টও ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি। কোনও হাসপাতালে বিদ্যুৎ সরবরাহের সমস্যা হয়নি। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে আমরা দুর্দান্ত প্রস্তুতি নিয়েছিলাম।”
রাজনৈতিক শিবিরের মতে, উত্তরপ্রদেশের ভোটে বিজেপি যতই মেরুকরণের রাজনীতি করুক অথবা বিরোধী দলগুলি জোট বাঁধতে না পারুক— অতিমারি অবশ্যই হয়ে উঠতে চলেছে রাজ্য জুড়ে একটি নির্বাচনী বিষয়। যাঁদের পরিবারের সদস্যেরা কার্যত বিনা চিকিৎসায় মারা গিয়েছেন, তাঁরা কখনও আর জাতপাত নির্বিশেষে যোগী আদিত্যনাথ সরকারকে ভোট দেবেন কি না, সেই প্রশ্ন উঠছে। রাজ্যে ভোটের আগে অতিমারির তৃতীয় ঢেউ আসার আশঙ্কাও রয়েছে। কোভিড মোকাবিলায় যোগী প্রশাসনের ব্যর্থতার অভিযোগ শুধুমাত্র বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি থেকে নয়, রাজ্য বিজেপির অন্দরমহল থেকেও উঠেছিল। যোগীর বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শোনা যাচ্ছিল তাঁর সরকার এবং রাজ্য বিজেপির বেশ কিছু নেতাকে। প্রধানমন্ত্রী এবং অমিত শাহ যোগীকে দিল্লিতে ডেকে পাঠিয়ে বিষয়টির মীমাংসা করেন। যোগীকেও বলা হয় মানুষের ক্ষোভ নিরসন করতে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতে মাঠে নামতে। সেটা যোগী করছেনও।
এই পরিস্থিতিতে কোভিড মোকাবিলায় বিশ্বসভায় সেরার তকমাটি কার্যত নিজেই মাথায় পরে নিয়েছে মোদী সরকার। বিষয়টিকে ভোটের প্রচারের অঙ্গ হিসাবেই দেখছে স্থানীয় রাজনৈতিক মহল। আজ ‘ন্যাশনাল ডিজ়াস্টার ম্যানেজমেন্ট অথরিটি’ (এনডিএমএ)-এর প্রতিষ্ঠা দিবসে নিজের বক্তৃতায় কোভিড-যুদ্ধ নিয়ে সরব হওয়ার পাশাপাশি ‘আপদ মিত্র’ নামে একটি প্রকল্পের কথাও ঘোষণা করেছেন শাহ। দেশের ৩৫০টি জেলায় এই প্রকল্প পরীক্ষামূলক ভাবে চালু হবে। এর উদ্দেশ্য, বিপর্যয়ের মুখে নাগরিকদের প্রাথমিক তা প্রাথমিক ভাবে মোকাবিলার প্রশিক্ষণ দেওয়া।