জেপি নড্ডা ও অমিত শাহ। সঙ্গে অমিতের সেই টুইট।
বিজেপি সভাপতি জেপি নড্ডার গাড়ির উপর হামলার ঘটনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজ্যের কাছে রিপোর্ট তলব করলেন। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং রাজ্যপালের কাছে ওই ঘটনার পৃথক দু’টি রিপোর্ট তলব করল স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সূত্রের খবর, বলা হয়েছে ১২ ঘণ্টার মধ্যে ওই রিপোর্ট জমা দিতে হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একটি রিপোর্টে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, ‘কেন নড্ডার নিরাপত্তায় এই গাফিলতি’?
বৃহস্পতিবার সকালে ডায়মন্ড হারবারে যাওয়ার পথে দক্ষিণ ২৪ পরগনার শিরাকোল-সহ বেশ কিছু এলাকায় নড্ডা, কৈলাস বিজয়বর্গীয়দের কনভয়ে ইটবৃষ্টি হয়। বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের অভিযোগ, তৃণমূলের তরফে পরিকল্পনামাফিক এই হামলা করা হয়েছে। ঘটনাচক্রে, ডায়মন্ড হারবার পরিচিত সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের লোকসভা কেন্দ্র। যদিও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তৃণমূল নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ একাধিক মন্ত্রী ও নেতা বলেছেন, শিরাকোলে তেমন কিছু ঘটেনি। মমতার কটাক্ষ, ‘‘গতকাল প্রচার পাননি, গুন্ডা নিয়ে জনসংযোগে গেছিলেন? কোথাও কোনও অশান্তি হয়নি, শুধু মিথ্যে বলছে বিজেপি।’’
ওই ঘটনার পরই কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহর সঙ্গে কথা হয় নড্ডার। তার পর বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব একের পর এক টুইটে এই ঘটনার প্রতি তাঁদের কড়া মনোভাব ব্যক্ত করেন। টুইটে অমিত শাহ লেখেন, ‘আজ বাংলায় বিজেপি-র সভাপতি জেপি নড্ডাজির উপর আক্রমণ খুব নিন্দনীয়। কেন্দ্রীয় সরকার এই ঘটনা অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। এই হিংসার জন্য বাংলার সরকারকে রাজ্যের শান্তিকামী মানুষদের জবাব দিতে হবে’। এর কিছু পরেই সরাসরি রাজ্য সরকারকে বিঁধে তাঁর টুইট, ‘তৃণমূল শাসনের অধীনে বাংলা অত্যাচার, অরাজকতা ও অন্ধকারের যুগে পরিণত হয়েছে। টিএমসি-র অধীনে বর্তমানে বাংলায় যে ভাবে রাজনৈতিক হিংসা প্রাতিষ্ঠানিক ভাবে স্বীকৃতি পাচ্ছে এবং চরম আকার নিচ্ছে তা, গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে বিশ্বাসী সব মানুষের কাছেই দুঃখজনক ও উদ্বেগজনক’। এই টুইটের পর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তরফে ঘটনার রিপোর্ট তলব নিছক সময়ের অপেক্ষা ছিল বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
নড্ডার সঙ্গে কথা বলার পর কেন্দ্রীয় প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংহ টুইট করেন, ‘কনভয়ে হামলার পরে নড্ডাজির সঙ্গে আমি ফোনে কথা বলেছি এবং তার কাছ থেকে তথ্য পেয়েছি। এই ঘটনা আসলে পশ্চিমবঙ্গে ক্রমহ্রাসমান আইনশৃঙ্খলার প্রতিচ্ছবি’। রাজনাথের পরের টুইট, ‘গণতান্ত্রিক দেশে রাজনৈতিক নেতাদের এ ভাবে লক্ষ্য করা খুব চিন্তার বিষয়। এই ঘটনার পূর্ণাঙ্গ তদন্ত হওয়া উচিত। কে বা কারা এই ঘটনা ঘটাল, তা খুঁজে বার করতে হবে’।
আরও পড়ুন: ‘গুন্ডারাজ’ চলছে, মমতাকে ছুটি দিন, তোপ নড্ডার, পাল্টা তোপ তৃণমূলেরও
নড্ডার কনভয়ে যে হামলা হতে পারে, তা আগাম জানিয়ে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠি দিয়েছিলেন রাজ্য বিজেপি-র সভাপতি দিলীপ ঘোষ। এর পর কনভয়ে ইটবৃষ্টির ফলে কেন্দ্রের কাছে যে ‘স্পষ্ট বার্তা’ গিয়েছে, তা মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। কেন্দ্রীয় রেল মন্ত্রী পীযূষ গয়ালও বৃহস্পতিবার ঘটনার তীব্র নিন্দা করে বলেন, ‘‘খুব খারাপ ঘটনা। রাজ্যে বিজেপি-র জনপ্রিয়তা বাড়ছে এবং তাতে শাসকদল যে অস্বস্তিতে, এই ঘটনা সেটাই প্রমাণ করল। বাংলায় গণতন্ত্রের অপমান করা হচ্ছে।’’ সঙ্গে যোগ করেছেন, ‘‘বিজেপির সভাপতিকে যে সব গুন্ডা আক্রমণ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু নড্ডাজির উপর আক্রমণ এটা নয়। আসলে এই ঘটনা দেশের গণতান্ত্রিক কাঠামোর প্রতি আক্রমণ। আমরা এর কঠোর সমালোচনা করছি।’’
বৃহস্পতিবার নড্ডার গাড়ির উপর হামলার ঘটনায় সরকার তদন্ত করে কাউকে দোষী পেলে শাস্তি দেবে বলে জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কলকাতার মেয়ো রোডের এক জনসভায় তিনি মন্তব্য করেন, ‘‘আমি পুলিশকে বলেছি, তদন্ত করে দেখতে। জানি না, কোথায় কী হয়েছে। তবে এটা জানি, সম্মান পেতে হলে, সম্মান দিতে হয়।’’ এর পরেই তিনি বলেন, ‘‘এত নিরাপত্তা থাকা সত্ত্বেও ঢিল মারে কী করে? রাজ্য সরকার সকলকে নিরাপত্তা দেয়।’’