জঙ্গিদের হাতে নিহত পুলিশ ইনস্পেক্টর পারভেজ আহমেদের বাড়ি গিয়ে তাঁর স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করলেন অমিত শাহ। শনিবার কাশ্মীরের নওগামে। ছবি: পিটিআই।
জম্মু-কাশ্মীর পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফিরে পাবে বলে আশ্বাস দিয়ে তার ‘ক্রোনোলজি’ পেশ করলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। জম্মু-কাশ্মীরে ৩৭০ ধারা রদ হওয়ার পরে এই প্রথম সেখানে গেলেন তিনি। শনিবার শ্রীনগরে তিনি বলেন, ‘‘ডিলিমিটেশন (আসন পুনর্বিন্যাস) আমরা থামাব কেন? ডিলিমিটেশন হবে, তার পর নির্বাচন হবে। তার পর পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফিরবে।’’ যুবসমাজ এগিয়ে না এলে সরকারের একার পক্ষে সন্ত্রাস নির্মূল করা সম্ভব নয় বলেও স্বীকার করেন তিনি।
তিন দিনের সফরে শ্রীনগর এসেছেন অমিত। ঘটনাচক্রে চলতি মাসেই ১১ জন নাগরিক খুন হয়েছেন কাশ্মীরে। পুঞ্চে ১৩ দিন ধরে চলছে সেনা-জঙ্গি লড়াই। উচ্চ পর্যায়ের নিরাপত্তা-বৈঠকে আজ অমিত পরিস্থিতি নিয়ে তাঁর উদ্বেগ গোপন করেননি। সন্ধেয় শ্রীনগরে ইউথ ক্লাবের অনুষ্ঠানে তিনি নিজেই স্বীকার করেন, সরকারের একার পক্ষে সন্ত্রাস উপড়ে ফেলা সম্ভব নয়। তাঁর কথায়, ‘‘কে সন্ত্রাসের মূলোৎপাটন করবে? সরকার পারবে? না ভাই না। সরকার শুধু চেষ্টা করতে পারে। সন্ত্রাস রুখতে হবে ইউথ ক্লাবের এই ৪৫ হাজার সদস্যকেই।’’
আড়াই বছর পরে শ্রীনগরে এসে স্থানীয় যুবকদের প্রতি ‘বন্ধুত্বের’ বার্তা দিতে বিশেষ সচেষ্ট ছিলেন অমিত। বস্তুত স্থানীয় অধিবাসীদের কাছে না টানলে যে শান্তি ফেরানো যাবে না, সেটা সরকার বুঝতে শুরু করেছে বলেই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। বিশেষ করে গত কয়েক দিনে বেছে বেছে ভিনরাজ্য থেকে আসা নিরীহ নাগরিকদের হত্যা সরকারকে প্রবল চাপে ফেলেছে। সেই আবহেই অমিতের শ্রীনগর আসা। অমিত আজ তাঁর বক্তৃতায় মেনেই নেন, ২০১৯-এ ৩৭০ ধারা রদ করার পরে সরকার ‘কার্ফু’ জারি করেছিল এবং তা অনেকের মনে ‘আঘাত’ দিয়ে থাকতে পারে। তবে একই সঙ্গে সেই সিদ্ধান্তের সমর্থনে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, ‘‘লোকে ইন্টারনেট বন্ধ, কার্ফু নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। আমি জানি না, ওগুলো না করলে কত জনের প্রাণ যেত। কাশ্মীরের যুবকরা প্রাণে বেঁচেছেন ইন্টারনেট বন্ধ করে কার্ফু চালু করা হয়েছিল বলে।’’ ইউথ ক্লাবের ওই অনুষ্ঠানেই তাঁর দাবি, ‘‘২০১৯-এর ৫ অগস্ট দিনটা (৩৭০ রদ হওয়ার দিন) ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। ওটা সন্ত্রাস, স্বজনপোষণ আর দুর্নীতি শেষ হওয়ার দিন। গণতন্ত্র এখন তৃণমূল স্তরে পৌঁছেছে।’’
সরকারি সিদ্ধান্তের এমন জয়গানের পাশাপাশিই পূর্ণ রাজ্যের মর্যাদা ফেরানোর আশ্বাস দিয়ে রেখেছেন অমিত। এক সময় যে ভাবে সিএএ-এনআরসির ‘ক্রোনোলজি’ বুঝিয়েছিলেন, নিরাপত্তা বৈঠক সারার পরে আজ অনেকটা সেই ঢঙেই পূর্ণ রাজ্যে ফেরার ধাপগুলো তুলে ধরেছেন তিনি। যার মধ্যে প্রথমেই থাকছে ডিলিমিটেশন, অর্থাৎ আসন পুনর্বিন্যাস। তার পরে নির্বাচন এবং শেষ ধাপে পূর্ণ রাজ্যের তকমা। অনেকেরই অভিযোগ, উপত্যকার জনচরিত্র বদলে দেওয়াই ডিলিমিটেশনের উদ্দেশ্য। এক দিকে ডিলিমিটেশন, অন্য দিকে উপত্যকার মন জয়ের চেষ্টা— এ দু’টোও একসঙ্গে হতে পারে কি না, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে রাজনীতির মহলে।
ইউথ ক্লাবের অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়ার আগে আজ অমিত শ্রীনগরের রাজভবনে নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানে প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের পাশাপাশি সেনা-সিআরপিএফ-বিএসএফ-এনএসজি-পুলিশের উচ্চপদস্থ আধিকারিকরা উপস্থিত ছিলেন। ছিলেন লেফটেনান্ট গভর্নর মনোজ সিনহাও। কেন সেনা-পুলিশের জোরালো উপস্থিতি এবং প্রশাসনিক তৎপরতার পরেও সন্ত্রাস বাড়ছে, অমিত জানতে চান। বৈঠকে উপস্থিত এক অফিসারের কথায়, ‘‘অমিত বৈঠকে বলেন, নিরাপত্তার এত আয়োজন সত্ত্বেও যে ভাবে হত্যা আর অনুপ্রবেশ বাড়ছে, সেটা খুবই উদ্বেগের বিষয়। সন্ত্রাস রুখতে সর্বশক্তি প্রয়োগ করুন।’’ পুঞ্চের লড়াই শেষ করতে কেন এত দিন লাগছে, প্রশ্ন করেন অমিত। সেই সঙ্গে যুবকদের মধ্যে জেহাদি মনোভাবে রাশ টানার বিষয়টিতেও নজর দিতে বলেন পুলিশকে। তবে প্রকাশ্যে দাবি করেন, কাশ্মীরে সন্ত্রাস কমেছে। পাথর ছোড়া বন্ধ হয়েছে।
ভূস্বর্গে পা দিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আজ প্রথমেই নিহত পুলিশ অফিসার পারভেজ আহমদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করতে যান। পারভেজ খুন হন ২২ জুন। নওগাম এলাকায় তাঁর বাড়ি। অমিত আজ পারভেজের স্ত্রী ফতিমা আখতারের হাতে তুলে দেন সরকারি চাকরির নিয়োগপত্র। অমিতের সঙ্গে ছিলেন লেফটেনান্ট গভর্নর, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জিতেন্দ্র সিংহ এবং ডিজিপি দিলবাগ সিংহ। এর আগে ২০১৯ সালে যখন অমিত কাশ্মীরে এসেছিলেন, তখনও তিনি এক জন নিহত পুলিশ অফিসারের বাড়িতে গিয়েছিলেন। অমিতের সফর উপলক্ষে নিরাপত্তায় মুড়ে ফেলা হয় কাশ্মীরকে। ৫০ কোম্পানি বাড়তি আধাসামরিক বাহিনী, ৫০০০ ট্রুপার মোতায়েন হয়েছে। বহাল রয়েছে স্নাইপার, ড্রোন, শার্পশুটার। আজ শ্রীনগর-শারজা উড়ান অনলাইন উদ্বোধন করেন অমিত। আবহাওয়া ভাল থাকলে রবিবার তিনি জম্মুতে একটি সমাবেশে যোগ দেবেন। সোমবার কাশ্মীরের সরপঞ্চদের সঙ্গে দেখা করার কথা তাঁর।