এনডিএ-র কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দেওয়া হল লালকৃষ্ণ আডবাণীকে। তবে এই ‘অপারেশন’ নিয়ে একটি শব্দও খরচ না-করার কৌশল নিয়েছেন বিজেপির বর্তমান নেতৃত্ব।
ক্ষমতায় আসার পর সোমবারই প্রথম এনডিএ-র বৈঠক ডেকেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। নিজের বাসভবনে এই বৈঠকের ঠিক আগে ডাকা হয়েছিল বিজেপির সংসদীয় দলের বৈঠক। আডবাণীকে সে বৈঠকে আমন্ত্রণ জানানো হলেও এনডিএ-র বৈঠকে থাকার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এমনকী সংসদীয় দলের বৈঠক শেষে চলে যাওয়ার সময়েও আডবাণীকে থেকে যাওয়ার অনুরোধ করেননি কেউ।
অথচ অমিত শাহ দলের সভাপতি হওয়ার পর এখনও এনডিএ নেতৃত্ব ঢেলে সাজা হয়নি। খাতায় কলমে এনডিএ-র চেয়ারম্যান হিসেবে এখনও রয়েছেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী। তাঁর অসুস্থতার পর থেকে আডবাণীই বরাবর কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করে এসেছেন। বিরোধী দলে থাকার সময় আডবাণীর বাড়িতেই হতো এনডিএ-র বৈঠক। সংসদ ভবনে যে ঘরটিতে আডবাণী বসেন, সেটি এনডিএ-র চেয়ারম্যান হিসেবে বাজপেয়ীরই বরাদ্দ। মোদী ক্ষমতায় আসার পর আডবাণী বুঝতে পেরেছিলেন এনডিএ-র কার্যনির্বাহী চেয়ারম্যান হিসেবে তিনি আর বেশি দিন থাকতে পারবেন না। তাই সেই ঘরের নেমপ্লেট খুলে নিজে সেখানে বসাও বন্ধ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু তা নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ায় দল তাঁকে সেখানে বসবার অনুরোধ করে। কিন্তু গত কাল যা ঘটল তাতে স্পষ্ট— এনডিএ-র কাঠামো বদল হোক বা না-হোক, এই মঞ্চে আডবাণীকে আর ঠাঁই দিচ্ছেন না মোদী-অমিত শাহেরা। বিজেপি নেতারা অবশ্য এ নিয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছেন। কিন্তু আডবাণী-ঘনিষ্ঠ এক নেতার মতে, ‘‘মোদী ক্ষমতায় আসার পর আডবাণীকে যে ভাবে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছে, কালকের ঘটনা তার অঙ্গমাত্র। কোনও ঘোষণা ছাড়াই তাঁর দায়িত্ব ছেঁটে দেওয়া হল। বিজেপিতে প্রবীণদের এমনিতেই অবজ্ঞা করা হচ্ছে। আডবাণী, জোশীদের নিয়ে যে পথপ্রদর্শক কমিটি গঠন করা হয়েছিল— আজ পর্যন্ত তার একটি বৈঠকও ডাকা হয়নি।’’
প্রবীণদের আমল না-দিলেও মাঝে মাঝেই তাঁদের ভিন্নসুরে বিপাকে পড়ছেন বিজেপি নেতৃত্ব। হিমাচলপ্রদেশের নেতা শান্তা কুমার যেমন দলের সভাপতি অমিত শাহকে চিঠি লিখে বলেছেন— ‘যে ভাবে ব্যপম কাণ্ড হয়েছে, তাতে দলের মাথা হেঁট হয়ে গিয়েছে। দলে এ ধরনের দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণে লোকপাল গড়া হোক।’ তাঁর এই প্রস্তাব দলের ‘এথিক্স কমিটি’তে পাঠানো দরকার বলেও মন্তব্য করেছেন শান্তা কুমার। সংসদের প্রথম দিনে ললিত মোদী কাণ্ডে বিরোধীরা যখন সরব, সেই সময়ে দলের এক প্রবীণ নেতার তরফে এমন একটি পত্রবোমা প্রকাশ্যে আনায় বিজেপি নেতৃত্ব আজ সকাল থেকেই শান্তা কুমারের মুণ্ডপাত করতে শুরু করেন। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী রবিশঙ্কর প্রসাদ বলেন, ‘‘কংগ্রেসের অপপ্রচারের ফাঁদে পড়েছেন শান্তা কুমার। ভাল হতো তিনি যদি তাঁর রাজ্যের কংগ্রেস নেতা বীরভদ্র সিংহের দুর্নীতি নিয়ে সরব হতেন। তবে তিনি তো অমিত শাহকে চিঠি লিখেছেন, তিনিই এর জবাব দেবেন!’’ ইতিমধ্যেই হিমাচলের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জয়প্রকাশ নাড্ডাকে দিয়ে শান্তা কুমারকে শান্ত করার চেষ্টা শুরু হয়েছে। কিন্তু শান্ত হচ্ছেন না শান্তা। সন্ধ্যায়ও তিনি বলেন, ‘‘চিঠিতে লেখা সব বিষয়ের সঙ্গে আমি এখনও একমত।’’