অমিত শাহ। ছবি: পিটিআই।
বিরোধী জোট যখন পটনায় শক্তি প্রদর্শনের প্রস্তুতি নিচ্ছে, তখন পাল্টা পদক্ষেপে লোকসভা নির্বাচনের জোট গঠনের প্রস্তুতি শুরু করে দিলেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা। গত দু’দিনে প্রথমে তেলুগু দেশম পার্টির প্রধান চন্দ্রবাবু নায়ডু ও মহারাষ্ট্রের শিবসেনার একাংশের নেতা একনাথ শিন্দের সঙ্গে বৈঠক করেন অমিত শাহ। কাছে টানার চেষ্টা করা হচ্ছে পুরনো শরিক শিরোমণি অকালি দলকেও।
সূত্রের খবর, গত কালের বৈঠকে একনাথ শিন্দের শিবসেনা ও বিজেপি জোট বেঁধে মহারাষ্ট্রের নির্বাচনে লড়তে সম্মত হয়েছে। উদ্ধব ঠাকরের গোষ্ঠী ভেঙে শিন্দে শিবির বেরিয়ে আসার পরে মহারাষ্ট্রে গত ১১ মাস ধরে জোট সরকার চালাচ্ছে শিবসেনা-বিজেপি। বর্তমানে ওই রাজ্যের যে রাজনৈতিক সমীকরণ, তাতে শিন্দে শিবিরের সঙ্গে হাত মেলানো ছাড়া বিশেষ বিকল্পও নেই বিজেপির কাছে।
মহারাষ্ট্র বিজেপির একাংশ উদ্ধব গোষ্ঠীর সঙ্গে মীমাংসা করে ফেলার পক্ষপাতী হলেও, উদ্ধব ঠাকরে তাতে রাজি নন। এই আবহে আগামী নির্বাচন বিশেষ করে লোকসভার প্রস্তুতির কথা মাথায় রেখে গত কাল লোকসভায় জোট গঠনের বিষয়টি এগিয়ে রাখেন শাহ। গত কাল ওই বৈঠকের পরে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী শিন্দে আজ জানিয়েছেন, আগামী দিনে পুরসভা থেকে বিধানসভা-লোকসভা, সব নির্বাচন বিজেপির সঙ্গে জোট বেঁধে লড়বেন তাঁরা।
আবার অন্ধপ্রদেশে বিজেপির সঙ্গে জোট করার প্রশ্নে ফের আগ্রহ দেখিয়েছেন টিডিপি নেতা চন্দ্রবাবু নায়ডু। বর্তমানে অন্ধ্রপ্রদেশে জন সেনা পার্টির সঙ্গে জোট রয়েছে বিজেপি। ওই দলের পক্ষ থেকে বিজেপিকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, অন্ধ্রপ্রদেশে ক্ষমতাসীন জগন্মোহন সরকারের বিরোধী ভোট ভাগ হলে শাসক শিবিরের সুবিধে হবে। ওই ভোট রুখতে ওই রাজ্যে তিন বিরোধী দলের জোট হওয়া প্রয়োজন। লোকসভা তো বটেই, লোকসভার আগে এ বছরের শেষে হতে যাওয়া পার্শ্ববর্তী তেলঙ্গানা রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে তিন দলীয় জোট ভোটে লড়লে ভাল ফল হওয়ার আশা রয়েছে। সূত্রের মতে, গত শনিবারের বৈঠকে তেলঙ্গানার বিধানসভা নির্বাচন ও লোকসভা ভোটে জোট করে লড়ার প্রশ্নে প্রাথমিক ভাবে সম্মত হয়েছে টিডিপি ও বিজেপি।
এনডিএ-র অন্যতম পুরনো শরিক হলেন চন্দ্রবাবু নায়ডু। কিন্তু ২০১৯ সালের লোকসভার আগে অন্ধ্রপ্রদেশের জন্য বিশেষ মর্যদার দাবি করে এনডিএ ছেড়ে বেরিয়ে যায় তাঁর দল। কিন্তু সম্প্রতি কাছে আসার বার্তা দিতে শুরু করেছিল দু’দলই। রাষ্ট্রপতি পদে দ্রৌপদী মুর্মুকে সমর্থনের পাশাপাশি সম্প্রতি টিভি চ্যানেলের একটি অনুষ্ঠানে নরেন্দ্র মোদীর কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন নায়ডু। অন্য দিকে গত মাসে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানে টিডিপি দলের প্রতিষ্ঠাতা এন টি রামা রাওয়ের ভূমিকা স্মরণ করেন নরেন্দ্র মোদী। সম্প্রতি পোর্ট ব্লেয়ারে হওয়া পুর ভোটেও তলে তলে জোট করে নির্বাচনে লড়ে ওই দুই দল। সূত্রের মতে, পরবর্তী ধাপে নতুন সংসদের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকা পঞ্জাবের শিরোমণি অকালি দলের সঙ্গে জোট করার বিষয়ে এগোতে চলেছেন অমিত শাহেরা। এনডিএ-র ওই প্রাক্তন শরিক বিতর্কিত কৃষি আইন রূপায়ণের প্রতিবাদ জানিয়ে সরকার ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিলেন। লোকসভার আগে অন্য পুরনো শরিকদের মতোই তাঁদের ফের কাছে টানার প্রক্রিয়া শুরু করতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
আজ দুপুরে সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের সময়ের সেনাপ্রধান দলবীর সিংহ সুহাগের সঙ্গে হরিয়ানার গুরুগ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা করেন বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি জে পি নড্ডা। লোকসভা ভোটের পরেই হরিয়ানার বিধানসভা নির্বাচন। বিজেপি সূত্রের মতে, আসন্ন হরিয়ানা নির্বাচনের কথা মাথায় রেখে সুহাগকে দলে নিতে চায় বিজেপি।