কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ফাইল চিত্র।
দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করতে রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠক ডেকেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। আগামিকাল ও পরশু হরিয়ানার সুরজকুণ্ডে দু’দিনের ওই বৈঠক হতে চলেছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজ্যের স্বরাষ্ট্র দফতর নিজের কাছে রেখেছেন। তাই তাঁর কাছে আমন্ত্রণ গেলেও, উৎসবের মরসুমের কারণে তিনি ওই বৈঠকে থাকছেন না। পরিবর্তে রাজ্য পুলিশের এডিজি (হোমগার্ড) নীরজ কুমার সিংহের আগামিকালের সম্মেলনে থাকার কথা রয়েছে। তবে কালকের বৈঠকে দেখা না হলেও, আগামী ৫ নভেম্বর কলকাতায় পূর্বাঞ্চল পরিষদের বৈঠকে দেখা হওয়ার কথা অমিত শাহ ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিরুদ্ধে অধিকাংশ বিরোধী রাজ্য যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় হস্তক্ষেপের দাবি তুলে দীর্ঘ দিন ধরে সরব। বিশেষ করে বিএসএফের কর্তৃত্বের সীমানা বাড়ানোর প্রশ্নে গোড়া থেকেই আপত্তি জানিয়ে এসেছে পশ্চিমবঙ্গ, পঞ্জাবের মতো বিরোধী রাজ্যগুলি। এ ছাড়া, বিরোধী দলগুলিকে দমন করতে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলির অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে সরব বিরোধী দলের নেতারা। অধিকাংশ বিরোধী দলের অভিযোগ, এই সরকার গোড়া থেকেই আলোচনা না করে সব সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার নীতি নিয়েছে। যা যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোর পরিপন্থী। এতে কেন্দ্র ও রাজ্যের সম্পর্কের অবনতি হচ্ছে। যার প্রভাব পড়ছে অপরাধ দমনের ক্ষেত্রে। তাই অপরাধ দমনে সমন্বয়ের লক্ষ্যে চিন্তন শিবিরের আয়োজন করেছে নরেন্দ্র মোদী সরকার।
সূত্রের মতে, সম্প্রতি মুসলিম মৌলবাদী সংগঠন পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়া (পিএফআই)-কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে কেন্দ্র। বিভিন্ন রাজ্যে ধরপাকড় চালিয়ে বেশ কিছু পিএফআই সমর্থককে গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু গোয়েন্দাদের মতে, এখন ওই মৌলবাদী সংগঠনের একাধিক বড় চাঁই বিভিন্ন রাজ্যে লুকিয়ে থেকে ভারত-বিরোধী কার্যকলাপে সক্রিয় রয়েছে। এই মৌলবাদী মাথাগুলিকে কী ভাবে চিহ্নিত করা সম্ভব, তা নিয়েও বৈঠকে আলোচনা হওয়ারকথা রয়েছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের সূত্রের দাবি, পশ্চিমবঙ্গ-সহ উত্তর-পূর্ব ভারতে অনুপ্রবেশের কারণে সীমান্ত এলাকায় জনবিন্যাস পাল্টে যাচ্ছে এবং দেশের সুরক্ষার প্রশ্নে বিষয়টি উদ্বেগের। তা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সরকারি ভাবে জানিয়েছে, পুলিশবাহিনীর আধুনিকীকরণের উপরে আলোচনা হবে। বিশেষ করে অপরাধীদের গ্রেফতার ও তাদের অপরাধ প্রমাণে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার আলোচ্যসূচিতে রয়েছে। সাইবার ক্রাইমকে দেশের অভ্যন্তরীণ সুরক্ষার ক্ষেত্রে বড়সড় বিপদ হিসাবে চিহ্নিত করেছে কেন্দ্র। যা রুখতে বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে সহযোগিতা প্রয়োজন। বৈঠকে তা নিয়েও আলোচনা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র কর্তারা। এ ছাড়া সীমান্ত দিয়ে অনুপ্রবেশ, উপকূল নিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা কী ভাবে ঢেলে সাজানো সম্ভব, তা নিয়েও আলোচনা হবে। নিরাপত্তাবাহিনীতে মেয়েদের আরও বেশি করে কী ভাবে অন্তর্ভুক্ত করা যায়, তা নিয়েও রাজ্যগুলির মতামত চাওয়া হবে।
আগামিকাল বৈঠকের উদ্বোধন করবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। দ্বিতীয় দিন অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা প্রসঙ্গে বক্তৃতা দেওয়ার কথা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানিয়েছে, দেশের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার প্রধান, আধাসামরিক বাহিনীর ডিজি, বিভিন্ন রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, মুখ্যসচিব ও ডিজিপিদের উপস্থিতিতে এ ধরনের বৈঠক দেশে প্রথম। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ, অসমের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্বশর্মা, রাজস্থানের অশৌক গহলৌতের মতো মুখ্যমন্ত্রীরা পদাধিকার বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ায় কালকের বৈঠকে হাজির থাকবেন বলে জানা গিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে মমতাও রাজ্যের স্বরাষ্ট্র্মন্ত্রী। কিন্তু আগামিকাল ভাইফোঁটা ও তার ঠিক পরেই ছট পুজো থাকায় তিনি যে ওই বৈঠকে থাকতে পারবেন না তা আগেই কেন্দ্রকে জানিয়ে দিয়েছে নবান্ন। আসছেন না পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যসচিব বা ডিজিপিও।