রাজীব জৈন (বাঁ দিকে) ও রাজীব গওবার সঙ্গে অমিত শাহ। পিটিআই
নর্থ ব্লকের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে প্রথম বার দায়িত্ব নিতে যাবেন অমিত শাহ। সার সার ক্যামেরা। তাদের সামনেই স্বাগত জানাচ্ছেন স্বরাষ্ট্রসচিব রাজীব গওবা ও ইন্টেলিজেন্স বুরো (আইবি)-র প্রধান রাজীব জৈন।
দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রতিমন্ত্রীদের সঙ্গে কিছু ক্ষণ কথা সেরেই একান্ত বৈঠক এই দুই রাজীবের সঙ্গেই।
তার কিছু ক্ষণ পরে সব যুগ্মসচিবের সঙ্গে বৈঠক। সেখানেও এক পাশে স্বরাষ্ট্রসচিব, অন্য পাশে গোয়েন্দা-প্রধান। যে ছবি প্রকাশ করেছে বিজেপি।
পর দিন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হয়ে প্রথম প্রকাশ্য অনুষ্ঠান ‘জাতীয় পুলিশ স্মারক’-এ শ্রদ্ধাঞ্জলি। সেখানেও দুই পাশে দুই রাজীব।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে স্বরাষ্ট্রসচিব থাকবেন, সেটা স্বাভাবিক ব্যাপার। কিন্তু গোয়েন্দা-প্রধানও ঘুরবেন সঙ্গে সঙ্গে! এ ঘটনাই কৌতূহল বাড়াচ্ছে দিল্লির। এমনকি বিজেপি শিবিরেরও। কারণ, গোয়েন্দা বিভাগের কোনও কর্তা বা কর্মীকে যতটা সম্ভব লোকচক্ষুর আড়ালেই রাখা হয়। দশকের পর দশক ধরে গোয়েন্দা-প্রধানের কাজ প্রতি দিন প্রধানমন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বিভিন্ন ঘটনা ও পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল করানো। কিন্তু যে ভাবে নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তাঁকে সঙ্গে রেখে গুরুত্ব বাড়াচ্ছেন, সেখানেই খটকা লাগছে অনেকের।
বিজেপি শিবিরে তো এমনও আলোচনা চলছে, আসলে গোয়েন্দা বিভাগের রাশ পুরোটা নিজেদের হাতে রাখতেই প্রধানমন্ত্রী অমিত শাহকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের ভার দিয়েছেন। পাঁচ বছর টানা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী থাকার পর রাজনাথ সিংহ যদি আরও কয়েকটি বছর এই মন্ত্রকে থেকে যেতেন, তা হলে গোয়েন্দা বিভাগের আনুগত্যও অনেকটা আদায় করে নিতেন। সে কারণেই রাজনাথ সিংহকে স্বরাষ্ট্র থেকে সরিয়ে প্রতিরক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্র থেকে সরিয়ে দেওয়ায় রাজনাথ যে খুব একটি খুশি নন, সেটা তাঁর ঘনিষ্ঠরাই বলছেন।
১৯৮০ সালের ঝাড়খণ্ড ক্যাডারের আইপিএস অফিসার রাজীব জৈন গোয়েন্দা বিভাগে যোগ দিয়েছেন তিরিশ বছর আগে। কাশ্মীর-সহ বিভিন্ন দায়িত্ব সামলে এসেছেন। পূর্বতন এনডিএ সরকারের আমলে কাশ্মীর নিয়ে মধ্যস্থতাকারীদের উপদেষ্টার ভূমিকাতেও কাজ করেছেন। গত ডিসেম্বরেই তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মোদী সরকার আরও ছ’মাস মেয়াদ বাড়িয়ে দেয়। যেটি শেষ হচ্ছে চলতি মাসেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক কর্তার কথায়, ‘‘নতুন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যেখানে যেখানে গোয়েন্দা-প্রধানকে নিয়ে যাচ্ছেন বা বৈঠক করছেন, সেটি নিছক প্রোটোকল মেনেই।’’
কিন্তু অনেক পর্যবেক্ষকই সেটি মানতে নারাজ। তাঁদের অনেকের মত, গোয়েন্দা-প্রধানকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়ে আসলে বার্তা দিচ্ছেন অমিত শাহ। গুজরাতেও মোদী-শাহ জুটি ঠিক এই ভাবেই কাজ করতেন। গুজরাতে কংগ্রেসের মতো বিরোধী দলের নেতারা আজও বলেন, ‘‘সেই জমানায় গুজরাতে গোয়েন্দাদের বাড়বাড়ন্ত ছিল মাত্রাছাড়া! এক-এক জন বিরোধী নেতার পিছনে ৬-৭ জন করে গোয়েন্দা নজরদারি করতেন। এ বারে গোটা দেশেই গোয়েন্দাদের গুরুত্ব বাড়তে চলেছে। ঠিক যেমন আর এক প্রাক্তন গোয়েন্দা-প্রধান অজিত ডোভাল বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছেন।’’
ডোভালকে পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে তাঁকে আগামী পাঁচ বছরের জন্য জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা পদে পুনর্বহাল করেছেন প্রধানমন্ত্রী। যা দেখে অটল জমানার মন্ত্রী যশবন্ত সিন্হার কটাক্ষ, ‘‘ডোভালের বয়স এখনই ৭৪। তা-ও পূর্ণমন্ত্রীর মর্যাদা দিয়ে আরও ৫ বছরের জন্য নিয়োগ করা হল, যেটি বিজেপির অন্য সাংসদ, মন্ত্রীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। বেচারা সুমিত্রা মহাজন!’’