আনন্দীবেনকে উপেক্ষা, ক্ষমতা অমিত-ঘনিষ্ঠকে

এক জন নরেন্দ্র মোদীর সেনাপতি। অন্য জন বিশেষ আস্থাভাজন, দিল্লিতে আসার আগে যাঁর হাতে ছেড়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি। তবু নিজ রাজ্যের দলের কান্ডারি কে হবেন, এই প্রশ্নে প্রথম জনই বললেন শেষ কথা।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২০ ফেব্রুয়ারি ২০১৬ ০৩:১৬
Share:

এক জন নরেন্দ্র মোদীর সেনাপতি। অন্য জন বিশেষ আস্থাভাজন, দিল্লিতে আসার আগে যাঁর হাতে ছেড়ে এসেছেন মুখ্যমন্ত্রীর কুর্সি। তবু নিজ রাজ্যের দলের কান্ডারি কে হবেন, এই প্রশ্নে প্রথম জনই বললেন শেষ কথা।

Advertisement

মোদীর দীর্ঘদিনের আস্থাভাজন আনন্দীবেন পটেল চেয়েছিলেন নিজের পছন্দের ভূপেন্দ্রসিংহ চূড়াস্মাকে ওই পদে বসাতে। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ নেতাকে উপেক্ষা করে নিজের পছন্দের ব্যক্তিকেই গুজরাতে দলের সভাপতি বানালেন সংগঠনে মোদীর সেনাপতি অমিত শাহ। গুজরাতে দলের সভাপতি হিসেবে আজ বিজয় রূপাণির নামই ঘোষণা করা হল। বিজেপি সভাপতি অমিত ও মুখ্যমন্ত্রী আনন্দীবেনের মতপার্থক্যের জেরেই এত দিন আটকে ছিল এই সিদ্ধান্ত। শেষ পর্যন্ত জোর খাটল অমিতেরই।

বিজেপির সর্বভারতীয় সভাপতি পদে নির্বাচনের আগে দিল্লিতে গুঞ্জন শুরু হয়েছিল, আনন্দীবেনকে সরিয়ে অমিতকেই গুজরাতের মুখ্যমন্ত্রী করা হতে পারে। এমন জল্পনায় ইন্ধন জুগিয়েছে গুজরাতের বেশ কয়েকটি ঘটনা। যেমন, কিছু দিন আগেই হার্দিক পটেলের সংরক্ষণ আন্দোলন ‘বিজেপির সুশাসন’ তথা ‘মোদীর গুজরাত মডেলের সাফল্য’ নিয়ে যে রকম প্রশ্ন তুলে দিয়েছিল, সেটা মোটেই স্বস্তিকর হয়নি দলের পক্ষে। এর পরে রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচনেও ভরাডুবি হয়েছে দলের। হালে আবার আনন্দীবেনের মেয়ের বিরুদ্ধে উঠে এসেছে বড়সড় জমি-কেলেঙ্কারির অভিযোগ। এ সবের পরে গুঞ্জন প্রবল হয় যে, মোদী এমন এক জনকে গুজরাতে দলের সভাপতি করতে চাইছেন, যাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা আছে। রাজ্যে দলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামাল দিতে পারবেন। এবং অবশ্যই যাঁকে ভার দিলে দিল্লিতে বসেই মোদী-শাহ জুটি নিজেদের রাজ্যকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। আগামী বছর গুজরাত বিধানসভার নির্বাচনে যাতে মোদীকে মুখ না পোড়াতে হয়।

Advertisement

তবে কী আনন্দীবেনে আর আস্থা রাখছেন না মোদী?

দলের কোনও নেতা সরাসরি সে কথা বলছেন না। বিজেপির এক শীর্ষ নেতা যেমন এই প্রশ্নে বললেন, ‘‘ভোটের আগে আনন্দীবেনকে সরানোর কোনও প্রস্তাব এখনও নেই। কিন্তু দলকে সামাল দিতে এখন রূপাণির মতোই এক জনকে দরকার, যিনি বিধানসভা ভোটে মোদীর মান রাখতে পারেন।’’ এ ব্যাপারে দলের ওই নেতাটির বিশ্লেষণটি এই রকম— প্রায় সব রাজ্যেই বিজেপি সভাপতি বদল হচ্ছে। কিন্তু বর্তমান নেতৃত্বের কাছে গুজরাত সব সময়ই দলের ইজ্জতের বিষয়। কারণ, গুজরাত বিজেপির বড় দুই মাথাই দিল্লিতে।

প্রশ্ন হল, রূপাণিকে কেন বেছে নিলেন অমিত? সেটা কি শুধুই তাঁর সাংগঠনিক দক্ষতা ও বিশ্বস্ততার কারণে? দলের অনেকে কিন্তু একটা ভারসাম্যের খেলাও দেখতে পাচ্ছেন এর মধ্যে। রাজ্যে পটেল ও ক্ষত্রিয়, দু’টি সম্প্রদায়ই বেশ প্রভাবশালী। হার্দিক পটেলের তোলা ঝড় দেখার পরে সতর্ক বিজেপি নেতৃত্ব এখন পটেল বা ক্ষত্রিয়— কোনও পক্ষেই ঝুঁকে থাকার ঝুঁকি নিতে চাইছেন না। এবং সে কারণেই মোদী ও অমিত শাহ বণিক সম্প্রদায়ের রূপাণিকে বেছে নিয়েছেন। গুজরাতে যাদের সম্প্রদায়গত ভাবে দর কষাকষির ক্ষমতা ও শত্রু তুলনায় কম। রূপাণীকে বেছে নেওয়ায় পটেল বা ক্ষত্রিয়দের মতো প্রভাবশালী কোনও এক সম্প্রদায়ের দিকে ঝুঁকে থাকার খেসারত দিতে হবে না দলকে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement