প্রতীকী ছবি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন অমিত শাহ। মমতার চ্যালেঞ্জ, কেন্দ্র গোটা দেশের জন্য এনআরসি তৈরির কথা বললেও পশ্চিমবঙ্গে তা করতে দেবেন না। এবং নাগরিকত্ব আইন সংশোধন হলেও বাংলায় তার প্রয়োগ রুখবেন। রাজ্যসভায় আজ নাগরিকত্ব বিল পাশের ঠিক আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ফের স্পষ্ট করে দেন, কোনও রাজ্য বাদ যাবে না। পশ্চিমবঙ্গ-সহ গোটা দেশে এই আইন প্রয়োগ হবে। রাজ্যসভায় বিজেপি সমর্থিত সাংসদ স্বপন দাশগুপ্তের এক প্রশ্নের উত্তরে এ কথা জানান তিনি।
রাজ্যসভায় আজ দিনভরই নানা প্রসঙ্গে উঠে আসে পশ্চিমবঙ্গ। বিজেপি নেতৃত্বের বিশ্বাস, নয়া নাগরিকত্ব আইনে তাঁদের সবচেয়ে বেশি ফায়দা হবে পশ্চিমবঙ্গে। তাই লোকসভায় বিলটি নিয়ে বিতর্কের দিন থেকেই রাজ্যবাসীকে বার্তা দিতে সক্রিয় রয়েছেন তাঁরা। অমিত আজ টেনে আনেন পশ্চিমবঙ্গে অনুপ্রবেশকারীদের উপস্থিতি নিয়ে মমতার ২০০৫ সালের এক মন্তব্য। এ ছাড়া রাজ্যসভায় বিলটি পেশ করা নিয়ে বিতর্কে পশ্চিমবঙ্গকে এ দিন ‘আমার পশ্চিমবঙ্গ’ বলে উল্লেখ করেন শাহ। গুজরাতি নেতার এই বঙ্গপ্রেমকে কটাক্ষ করে রাজ্যসভায় তৃণমূলের নেতা ডেরেক ও’ব্রায়েন বলেন, ‘‘আজকাল অনেকেই দেখছি নিজেদের বাঙালি-প্রেমী প্রমাণ করতে চান। অথচ তাঁরাই একটি ভারত-বিরোধী, বাঙালি বিরোধী বিল নিয়ে এলেন আজ। কেউ যেন বাঙালিকে দেশপ্রেম শেখাতে না আসেন।’’
এনআরসি ও নাগরিকত্ব সংশোধনী বিলের বিরুদ্ধে শুরু থেকেই রাজনৈতিক ভাবে সরব রয়েছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা। রাজ্যসভায় নাগরিকত্ব সংশোধনী বিল পাশের দিন শিল্প সম্মেলনের মঞ্চে আবারও একতার বার্তা দিয়েছেন তিনি। বুধবার দিঘা বিজনেস কনক্লেভের উদ্বোধনী বক্তৃতায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘‘একতাই আমাদের সবচেয়ে বড় সৌন্দর্য। আমরা মানুষকে ভাগ করি না। ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে আমরা সব সময় সবাই এক। অনেকে অনেক জায়গায় থাকতে পারেন। কিন্তু আমাদের পরিবার একটাই। দেশের বুনিয়াদ একতা এবং বৈচিত্রে। কত ধর্ম, বর্ণ, ভাষা, গোষ্ঠী রয়েছে। কিন্তু বাংলায় এক জনও বলতে পারবেন না, এখানে তিনি বঞ্চিত হচ্ছেন। গোটা দেশকে দিশা দেখায় এ রাজ্য। আমাদের সব জায়গা মিশ্র সংস্কৃতির (কসমোপলিটান)। কেউ ভেদাভেদ করে না। কোনও বিভাজন নীতি নেই আমাদের ।’’
একই দিনে মমতারই ২০০৫-এর এক মন্তব্যকে তাঁর বিরুদ্ধে হাতিয়ার করেন অমিত। তাঁর কথায়, ‘‘লোকসভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ভোটার তালিকায় ভারতীয় নাগরিকের সঙ্গে বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের নাম পাওয়া যাবে।’’ বিজেপির প্রশ্ন, মমতা তখন অনুপ্রবেশের বিরুদ্ধে প্রশ্নে সরব ছিলেন। কিন্তু এখন কেন বিরোধিতা করছেন? সভার সদস্য নন, উপস্থিতও নন— তবু কেন মমতার নাম তোলা হচ্ছে তা নিয়ে চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নায়ডুর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তৃণমূলের সুখেন্দুশেখর রায় ও ডেরেক। নায়ডু পর্যবেক্ষণে জানান, ‘‘স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে বলা কথাই উল্লেখ করেছেন। যা রেকর্ডে ছিল তা-ই বলেছেন।’’ খোঁচা খাওয়া তৃণমূলকে ফের বেঁধেন শাহ। বলেন, ‘‘এঁদের এত রাগ কেন, তা বোঝাই যাচ্ছে!’’
মমতা বলে আসছেন, নয়া নাগরিকত্ব আইন বাংলায় প্রয়োগ করতে দেবেন না। বিজেপি সমর্থিত সদস্য স্বপন দাশগুপ্ত রাজ্যসভায় জানতে চান, কোনও রাজ্য চাইলেই কি এটা করতে পারে? শাহ জানান, ‘‘পশ্চিমবঙ্গ-সহ সব রাজ্যে ওই আইন প্রয়োগ হবে। কেউ বাদ পড়বে না।’’
বিজেপির ধারণা, নয়া নাগরিকত্ব আইন ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে দলের ভোট ব্যাঙ্কে। অসমের এনআরসিতে বিস্তর হিন্দু বাদ পড়ায় সে রাজ্যে বিজেপির সমর্থনে যে ধস নামছে তা রোখা যাবে। বিজেপির হিসেবে, নয়া নাগরিকত্ব আইনে অন্তত দেড় কোটি হিন্দু নাগরিকত্ব পাবেন। যাদের অর্ধেকের বেশি বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে এসে পশ্চিমবঙ্গে বসবাস করছেন। সে কারণে লোকসভার মতোই রাজ্যসভাতেও নাগরিকত্ব বিলের সুফল বাংলার মানুষকে পৌঁছে দেওয়ার বার্তা দিতে বিশেষ তৎপর ছিলেন অমিত। শাহ বলেন, ‘‘মেরে বঙ্গালমে (আমার পশ্চিমবঙ্গে) অনেক শরণার্থী এসেছেন। কেউ ১৯৫৫, কেউ ছয়, সাত, আট বা নয়ের দশকে এসেছেন। সকলে নির্ভয়ে আবেদন করতে পারবেন নাগরিকত্বের জন্য। যাঁরা যে দিনে এসেছেন, তাঁদের সে দিন থেকে নাগরিকত্ব দেওয়া হবে। কোনও অবৈধ অ-মুসলিম
শরণার্থীকে গ্রেফতার করা হবে না। অনুপ্রবেশ বা অবৈধ ভাবে বসবাসের মামলা চললেও নয়া আইনে তা খারিজ হয়ে যাবে।’’
শাহ বাঙালি হিন্দুদের পাশে থাকার বার্তা দিতে মরিয়া হলেও তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েনের মতে, ‘‘এই বিজেপি সরকার বাঙালি হিন্দু বিরোধী।’’ অসমের ডিটেনশন শিবিরের সঙ্গে নাৎসি জার্মানির কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের সঙ্গে তুলনা করে ডেরেক বলেন, ‘‘ওই শিবিরগুলিতে যাঁরা রয়েছেন
তাঁদের ৬০ শতাংশ হিন্দু বাঙালি।’’ বক্তব্যের শেষে ডেরেক দলনেত্রীর সুরেই দাবি করেন, ‘‘এনআরসি বা নাগরিকত্ব আইনের সংশোধনী— কোনওটাই রাজ্যে প্রয়োগ হবে করতে দেওয়া হবে না।’’