কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। —ফাইল ছবি।
হরিয়ানার ক্ষুব্ধ কৃষক সমাজের মন পেতে বছরে ছ’হাজারের পরিবর্তে দশ হাজার টাকা সাহায্যের প্রতিশ্রুতি দিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। ভোটের ঠিক এক সপ্তাহ আগে আদর্শ আচরণবিধি জারি থাকা সত্ত্বেও অমিত শাহ কী ভাবে কোনও কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দিতে পারেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নির্বাচন কমিশনের দ্বারস্থ হওয়ার কথা ভাবছে বিরোধী দল কংগ্রেস।
বর্তমানে হরিয়ানায় ক্ষমতা ধরে রাখার প্রশ্নে বিজেপির কাছে প্রধান অন্তরায় কৃষক বিক্ষোভ। লোকসভা ভোটেই যার প্রমাণ পেয়েছে নরেন্দ্র মোদীর দল। গত দু’টি লোকসভায় বিজেপি হরিয়ানার দশটির মধ্যে দশটি আসনেই জিতলেও, এ বারে পাঁচটি করে আসন ভাগাভাগি করে নিয়েছে কংগ্রেস ও বিজেপি। চাকা ঘোরাতে আজ তাই ‘প্রধানমন্ত্রী কিসান সম্মান নিধি’ প্রকল্প (পিএম কিসান)-এ টাকা বাড়ানোর ঘোষণা করে অমিত শাহ বলেন, ‘‘ছ’হাজারের পরিবর্তে আগামী দিনে কৃষকদের দশ হাজার টাকা দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।’’ ভোট প্রচারের মঞ্চ থেকে কী ভাবে সরকারি প্রকল্পের সাহায্যের পরিমাণ বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি শাসক দলের নেতা দিতে পারেন, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বিরোধীরা।
কৃষি বিক্ষোভ ছাড়াও লোকসভা ভোট থেকে স্পষ্ট, বিজেপির পিছন থেকে সরে গিয়েছে তরুণ ও মহিলারা। বিশেষ করে ব্রিজভূষণ শরণ সিংহের মতো বিজেপি নেতাদের মহিলা কুস্তিগিরদের সঙ্গে অশালীন ব্যবহারের অভিযোগ আদৌ ভাল ভাবে নেননি রাজ্যের মহিলারা। আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণকারী মহিলা কুস্তিগীরদের প্রতি সরকারের বিদ্বেষমূলক আচরণের প্রভাব পড়েছে মহিলা সমাজে। বিশেষ করে তরুণী ভোটরেরা লোকসভায় কংগ্রেসকে প্রবল ভাবে সমর্থন করেছেন বলে বিশ্লেষণ করে দেখেছে গেরুয়া শিবির। চাপের মুখে ব্রিজভূষণকে কুস্তি সংস্থার প্রধানের পদ থেকে সরালেও মহিলাদের গেরুয়া শিবিরের প্রতি ক্ষোভ যে এখনও রয়ে গিয়েছে, তা নির্বাচনী দঙ্গলে নামা মাত্রই বুঝতে পারছেন বিজেপি নেতারা।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মহিলাদের আন্তর্জাতিক পদকপ্রাপ্তির প্রশ্নে কিংবা তরুণদের সেনায় যোগদানের প্রশ্নে যে রাজ্য কার্যত শীর্ষে রয়েছে, তা হল হরিয়ানা। তাই অগ্নিবীর প্রকল্প চালু করে সেনায় পাকা চাকরিতে যোগদানের সুযোগ কেড়ে নেওয়ায় প্রবল ক্ষুব্ধ রাজ্যের গ্রামীণ যুব সমাজের একাংশও। সেনায় পাকা চাকরি ও চাকরি শেষে পেনশনের সুযোগ কেড়ে নেওয়ায় রাজ্যের যুব সম্প্রদায়ের কাছে বিজেপি যে গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে, তা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে জানিয়েছেন হরিয়ানা ফেরৎ পদ্ম শিবিরের নেতারা। সেই কারণে আজ হরিয়ানার রেয়াড়ি-তে একটি জনসভায় শাহের প্রতিশ্রুতি, ‘‘অগ্নিবীরদের পরবর্তী ধাপে এমন চাকরির সুযোগ করে দেওয়া হবে, যাতে পেনশনের সুবিধা রয়েছে।’’ শাহ ওই দাবি করলেও কংগ্রেস অগ্নিবীর প্রকল্প তুলে দেওয়ার দাবি করে যে প্রচার চালাচ্ছে, তা অনেক বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে হরিয়ানার যুব সমাজের কাছে।
হরিয়ানায় বিজেপির আর একটি মাথাব্যথার কারণ হল জাঠ সমাজ। গত প্রায় দশ বছর ধরে মুখ্যমন্ত্রী পদে কোনও জাঠ সমাজের নেতাকে বসায়নি বিজেপি। যাতে প্রবল ক্ষুব্ধ স্থানীয় জাঠ নেতারা। মনোহরলাল খট্টরের বিরুদ্ধে প্রতিষ্ঠান-বিরোধী হাওয়ার কারণে তাঁর পরিবর্তে জাঠ সমাজের কোনও নেতা ক্ষমতায় বসতে চলেছেন বলে আশা করেছিলেন বিজেপির জাঠ নেতারা। কিন্তু পরিবর্তে ওবিসি নেতা নায়েব সিংহ সাইনিকে মুখ্যমন্ত্রী করার সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তাতে নতুন করে ক্ষেপে ওঠেন স্থানীয় জাঠ নেতারা। যার নেতিবাচক প্রভাব লোকসভার মতো বিধানসভা নির্বাচনেও পড়তে পারে বলে আশঙ্কায় রয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। জাঠ ক্ষোভ ঠেকাতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বংশীলালের পুত্রবধূ কিরণ চৌধরিকে সম্প্রতি রাজ্যসভার সাংসদ করেছে বিজেপি। কিরণের মেয়েকে বিধানসভার টিকিট দিয়েছে দল। টিকিট প্রাপ্তির নিরিখে আগের চেয়ে অনেক বেশি জাঠ প্রার্থীকে প্রাধান্য দেওয়া হলেও তাতে আখেরে কতটা লাভ হবে, তা নিয়ে দলের মধ্যেই সংশয় রয়েছে।
টানা দশ বছর ক্ষমতায় থাকায় হরিয়ানায় বিজেপির বিরুদ্ধে হাওয়া যে প্রবল, তা লোকসভা ভোটের পর থেকে স্বীকার করে নিতে বাধ্য হয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। নেতিবাচক সেই হাওয়ার মোড় ঘোরাতে মুখ্যমন্ত্রী পাল্টানোর পাশাপাশি গত বার জয়ী পনেরো জন বিধায়ককে এ বারে টিকিট দেয়নি দল। কেন্দ্র বদল হয়েছে তিন জন বিধায়কের। প্রায় এক ডজনের বেশি আসনে নতুন মুখকে টিকিট দিয়েছে দল। কিন্তু তাতেও কাঙ্খিত সাফল্য আসবে কি না, তা নিয়ে রীতিমতো চিন্তায় কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। দলের কেন্দ্রীয় স্তরের এক নেতার প্রতিক্রিয়া, ‘‘পরিস্থিতি সত্যিই প্রতিকূল। প্রধানমন্ত্রীর টানা প্রচারে কিছুটা হলেও পরিস্থিতি ইতিবাচক হয়েছে।’’ ওই নেতার বিশ্লেষণ, ‘‘দু’সপ্তাহ আগেও কংগ্রেস অন্তত ষাট শতাংশ আসনে এগিয়ে ছিল। সেই ব্যবধান কিছুটা কমেছে। আগামী সাত দিনে আরও ব্যবধান কমবে। ফলে লড়াই হবে সেয়ানে-সেয়ানে।’’