প্রতীকী ছবি।
সংঘর্ষ-বিরতি লঙ্ঘন করতে গিয়ে গুলিযুদ্ধে নিহত দুই সহকর্মীর দেহ সাদা পতাকা দেখিয়ে শুক্রবার ফেরত নিয়ে গিয়েছিল পাক সেনা। আর তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ফের সংঘর্ষ-বিরতি লঙ্ঘন করে হামলা চালাল তারা। প্রথমটি কাশ্মীরের হাজিপুর সেক্টরের ঘটনা। দ্বিতীয়টি ঘটেছে পুঞ্চের বালাকোটে। শনিবার সকালের এই ঘটনায় বালাকোটের ছ’টি স্কুলে আটকে পড়ে ছাত্রছাত্রীরা। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে পড়ুয়া এবং শিক্ষকদের মধ্যে।
১০-১১ সেপ্টেম্বরে হাজিপুর সেক্টরে সংঘর্ষ-বিরতি লঙ্ঘন করে পাক রেঞ্জার্স। জবাব দেয় ভারতও। দু’পক্ষের গুলিযুদ্ধে নিহত পাক জওয়ান গুলাম রসুল। তিনি পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের বাহাওয়ালনগরের বাসিন্দা। এর পরে গোলাগুলি চালিয়ে গুলামের দেহ উদ্ধারের চেষ্টা করে পাক বাহিনী। কিন্তু তাতে ফল হয় উল্টো। ভারতীয় জওয়ানদের গুলিতে নিহত হন আরও এক পাক জওয়ান। তার পরেও গত দু’দিন ধরে ‘কভার ফায়ার’ চালিয়ে বহু বার দেহ দু’টি উদ্ধারের চেষ্টা চালায় তারা। কিন্তু ভারতীয় জওয়ানদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে সেই চেষ্টাও ব্যর্থ হয়। তার পরেই গত কাল ভারতীয় জওয়ানদের উদ্দেশে সাদা পতাকা তুলে ধরতে বাধ্য হয় পাক বাহিনী। সাদা পতাকা আত্মসমর্পণ বা শান্তির প্রতীক। তাই সেটি দেখে গুলি চালানো বন্ধ করেন ভারতীয় জওয়ানেরা। দুই সতীর্থের দেহ তুলে নিয়ে যায় পাক বাহিনী।
এই ঘটনার ভিডিয়ো প্রকাশ্যে এসেছে। দেখা গিয়েছে, সাদা পতাকা উড়িয়ে ঢাল বেয়ে নেমে আসছেন পাক রেঞ্জার্সের এক সদস্য। এক হাতে পতাকাটি তুলে ধরে অন্য হাতে একটি দেহ তুলে ধরার চেষ্টা করেন তিনি। কোনও গুলি ছুটে আসছে না দেখে ঢাল বেয়ে দৌড়ে নেমে আসেন আরও দু’জন। সকলে মিলে দেহটি তুলে নিয়ে চলে যান। পরে আর এক বার নেমে এসে আর একটি দেহ তুলে নিয়ে যায় পাক বাহিনী। ভারতীয় সেনা জানিয়েছে, তারা মৃতদের সম্মান করে। তাই দেহ তুলে নিয়ে যেতে কোনও রকম বাধা দেওয়া হয়নি। এর আগে অবশ্য কার্গিল যুদ্ধে নিহত জওয়ানদের দেহ ফেরত নেয়নি পাকিস্তান। ৩০-৩১ জুলাই কেরন সেক্টরে দু’পক্ষের গোলাগুলিতে নিহত হয়েছিলেন পাঁচ-সাত জন পাক জওয়ান এবং জঙ্গি। কিন্তু তাদের দেহ নিতে চায়নি তারা।।
দেহ নেওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে বালাকোটে ফের সংঘর্ষ-বিরতি লঙ্ঘন করল পাক সেনা। অভিযোগ, এ দিন সকালে মর্টার এবং গোলা ছুড়তে শুরু করে তারা। জবাব দেয় ভারতও। বাসিন্দাদের অভিযোগ, নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে থাকা সাধারণ মানুষকেই নিশানা করেছে পাকিস্তান। এই হামলার জেরে ছ’টি স্কুলে আটকে পড়েন পড়ুয়া এবং শিক্ষকেরা। সানদিয়োটে এক শিক্ষক বলেন, ‘‘স্কুলের ৫০ মিটারের মধ্যে ছ’টি শেল পড়েছে। ছাত্রদের আমরা অন্য ঘরে সরিয়ে নিয়ে যাই।’’ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আরও দু’টি স্কুল। রাজৌরির ডিস্ট্রিক্ট ডেভেলপমেন্ট কমিশনার মহম্মদ আইজাজ আসাদ জানান, মাঞ্জাকোট সেক্টরেও স্কুল বন্ধ রাখা হয়েছে।
ভারতের বিরুদ্ধে সংঘর্ষ-বিরতি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে এ দিন ভারতের ডেপুটি হাই কমিশনার গৌরব অহলুওয়ালিয়াকে তলব করেছে পাকিস্তানও। তাদের দাবি, এ দিন নিকিয়া ও জন্দ্রত সেক্টরে ভারতীয় সেনার হামলায় নিহত হয়েছেন ৪০ বছরের এক পাক মহিলা।