অম্বেডকর বিশ্বিদ্যালয় চত্বরে প্রকাশ কারাট। নিজস্ব চিত্র।
সে বার ছিল প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর জন্মদিন। দিনটা ছিল রবিবার। সে দিন সকালে গিয়ে দেখা যায় প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর জন্মদিন পালনের জন্য ফটকই খোলা হচ্ছে না রাজ্য বিধানসভার। উত্তেজনা, হইচই। কিছু ক্ষণ এ ভাবে চলার পর বিধানসভার পশ্চিম দিকের ফটকে জ্যোতিবাবুর একটা ছবি আটকে সেখানেই বেঞ্চ জোগাড় করে জন্মদিন পালন করেছিলেন বিধানসভার প্রাক্তন স্পিকার হাসিম আব্দুল হালিম, তৎকালীন বিরোধী দলনেতা সূর্যকান্ত মিশ্রেরা।
আট বছর আগে বন্ধ গেটের বাইরে সেই জমায়েতের ছবিই যেন ফিরে এল দিল্লিতে। এ বার ঘটনাস্থল অম্বেডকর বিশ্ববিদ্যালয়। কথা ছিল নয়াদিল্লির অম্বেডকর বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে বুধবার এক আলোচনাচক্রে সিএএ, এনআরসি এবং এনপিআর নিয়ে বলবেন সেখানকার শিক্ষক প্রিয়াঙ্কা ঝা, সাংবাদিক আরফা খানুম শেরওয়ানি এবং সিপিএমের প্রকাশ কারাট। প্রথম দু’জনকে বলতে দিলেও কারাটকে ক্যাম্পাসের গেট থেকেই ফিরিয়ে দেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। মঙ্গলবার রাতে তাঁরা রুল বুক দেখিয়ে জানিয়েছিলেন, ‘‘ভোটে লড়া কোনও নেতাকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে না-দেওয়ার নিয়ম আছে।’’ আয়োজক এসএফআইয়ের সদস্যরা মনে করান, কারাট জীবনে ভোটেই দাঁড়াননি।
শেষ পর্যন্ত গেট বন্ধ করেও অবশ্য আটকানো যায়নি কারাটকে। বন্ধ গেটের ও পার থেকেই হ্যান্ড মাইক নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে জড়ো হওয়া পড়ুয়াদের উদ্দেশে বক্তৃতা করেন সিপিএমের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক। সে ছবি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে সোশাল মিডিয়ায়। এসএফআইয়ের প্রাক্তন সম্পাদক এবং সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীর মন্তব্য, ‘‘দেশের বাম আন্দোলনের নেতা এবং অন্যতম অগ্রণী বিদ্দ্বজ্জন প্রকাশ কারাটের সঙ্গে এই আচরণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আসলে স্বীকার করে নিয়েছেন যে, তাঁরা ভয় পেয়েছেন। মুক্ত চিন্তা, যুক্তিকে এঁরা ভয় পান। কিন্তু এ ভাবে না প্রকাশ, না পড়ুয়া কাউকেই আটকানো যায়নি।’’
এ বিষয়ে এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস বলেন, ‘‘সঙ্ঘের দ্বারা পরিচালিত উপাচার্যের অনুপ্রেরণাতেই এই কাণ্ড ঘটিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এ ভাবে কখনও মুক্ত চিন্তা, যুক্তির পরিসরকে খাটো করা যায় না। প্রতিবাদের আগুন আজ সর্বত্র পৌঁছে যাচ্ছে। কোনও ক্যাম্সাসই সেই আগুনের আঁচ থেকে বাঁচতে পারবে না।’’