পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহ।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের তিনটি কৃষি আইন নাকচ করে দিতে পঞ্জাবের কংগ্রেস সরকার বিধানসভায় চারটি বিল পাশ করাল। নতুন করে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে বিবাদের মঞ্চ তৈরি হল। কারণ রাজ্যপাল বিলের সম্মতির জন্য রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাতে পারেন। রাষ্ট্রপতি তাতে সই না করলে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সংঘাত তৈরি হবে বলে মনে করছে বিজেপি, কংগ্রেস দুই শিবিরই।
বিরোধীদের আপত্তি সত্ত্বেও মোদী সরকার সংসদে তিনটি কৃষি আইন পাশ করানোর পরেই কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিকে নির্দেশ দিয়েছিলেন, তারা নিজেদের রাজ্যে বিল এনে এই আইন খারিজ করে দিক। সেই পথে হেঁটেই আজ পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপ্টেন অমরেন্দ্র সিংহ বিধানসভায় অভিযোগ তোলেন, কৃষি সংবিধানে রাজ্য তালিকাভুক্ত বিষয়। তা সত্বেও কেন্দ্রীয় সরকার তাতে নাক গলিয়েছে।
বিধানসভায় দুই বিজেপি বিধায়ক গরহাজির ছিলেন। বাকি সকলে বিলগুলিকে সমর্থন করেন। বিল পাশের পরেই রাজ্যের মন্ত্রীরা রাজ্যপালের কাছে গিয়ে অবিলম্বে এই বিলে সই করার অনুরোধ জানান। কংগ্রেস শাসিত রাজ্যগুলিকে দলের আইনজীবী নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি মডেল বিল তৈরি করে দিয়েছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘রাজ্যপাল রাষ্ট্রপতিকে বিলের সম্মতির জন্য পাঠাতে পারেন। সেখানে সংঘাতের আশঙ্কা থাকছে।’’ একইসঙ্গে কেন্দ্রীয় আইনগুলিকেও সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে তাঁর মত। তাঁর যুক্তি, ‘‘সংবিধানের দ্বিতীয় তালিকায় শুধুমাত্র রাজ্যের অধিকারের চারটি ক্ষেত্রে কেন্দ্রের আইন নাক গলিয়েছে। তৃতীয় তালিকায় আন্তঃরাজ্য ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে কেন্দ্র নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রতারণা করেছে। কিন্তু সংসদে পাশ হওয়া বিলে রাষ্ট্রপতি অনুমোদন দিয়ে দিয়েছেন। তা এখন আইন। কাজেই একমাত্র সুপ্রিম কোর্টই তা খারিজ করতে পারে।’’
আরও পড়ুন: টিকায় আবশ্যিক নয় ডিজিটাল স্বাস্থ্যকার্ড: কেন্দ্র
কংগ্রেস সূত্রের খবর, পঞ্জাবের পরে রাজস্থান, ছত্তীসগঢ়ও কেন্দ্রের কৃষি আইন নাকচ করে দিতে একই পথে হাঁটবে। মনু সিঙ্ঘভির মতে, পশ্চিমবঙ্গ থেকে মহারাষ্ট্র—অন্যান্য বিরোধী রাজ্যেও এর প্রতিফলন দেখা যেতে পারে। পঞ্জাবের অর্থমন্ত্রী মনপ্রীত বাদল বলেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গের অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্রের সঙ্গে আমার নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে। উনি চাইলেই আমরা বিলের কপি পাঠিয়ে দেব।’’
কর্পোরেট সংস্থাগুলিকে চুক্তি চাষ করিয়ে চাষিদের থেকে সরাসরি ফসল কিনে নেওয়ার অনুমতি, চুক্তি-চাষে কৃষকদের স্বার্থ রক্ষা এবং অত্যাবশ্যক পণ্য আইনে সংশোধন করে মজুতদারির উপরে বিধিনিষেধ তুলে নেওয়ার জন্য মোদী সরকার তিনটি কৃষি আইন জারি করেছে। কংগ্রেসের মূল অভিযোগ ছিল, মোদী সরকার ঘুরপথে ফসলের ন্যূনতম সহায়ক মূল্য বা এমএসপি তুলে দিতে চাইছে। এমএসপি-র কমে কেউ ফসল বেচতে পারবে না বলে আইনে শর্ত বেঁধে দেওয়া হোক। কেন্দ্র তাতে কান দেয়নি। পঞ্জাব সরকার প্রথম তিনটি কৃষি বিলে কেন্দ্রের এই তিনটি আইন নাকচ করে বিল পাশ করিয়েছে। যাতে কেন্দ্রের আইনের আগের অবস্থা বজায় থাকে। একইসঙ্গে এমএসপি-র কমে পঞ্জাবে কেউ ফসল কিনতে পারবে না বলেও শর্ত চাপিয়েছে।
আরও পড়ুন: সতর্কতায় শিথিলতা নয়, বার্তা মোদীর
চতুর্থ বিলে দেওয়ানি বিধিতে সংশোধন করে বলা হয়েছে, চাষিরা চুক্তি চাষের শর্ত মানতে না পারলেও ২.৫ একর পর্যন্ত জমি বাজেয়াপ্ত করা যাবে না। মনপ্রীত বলেন, ‘‘কেন্দ্র ঘুরপথে এমএসপি তুলে দিতে চাইছে। বিজেপির মন্ত্রীরা এমএসপি থাকবে বলে আশ্বাস দিচ্ছেন। কিন্তু কেন্দ্র যেখানে জিএসটি ক্ষতিপূরণ মেটানো নিয়েই প্রতিশ্রুতি রাখেনি, সেখানে এমএসপি-র কথা কী ভাবে বিশ্বাস করব?’’ বিলে সমর্থন করলেও বিলের প্রতিলিপি না মেলায় আপ বিধায়কেরা বিধানসভা ভবনেই ধর্নায় বসেন। সোমবার সারা রাত বিধানসভা চত্বরেই কাটান তাঁরা।