বদলি নিয়ে কামান দেগে ইস্তফা বর্মার

রাফাল চুক্তিতে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করতে পারেন বলেই তাঁকে সিবিআই ডিরেক্টরের পদ থেকে সরানো হল? নাকি তিনি নিজেই কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিতে অভ্যস্ত এক দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসার?

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১২ জানুয়ারি ২০১৯ ০২:১৮
Share:

তিনি ‘ডক্টর জেকিল’ না ‘মিস্টার হাইড’?

Advertisement

রাফাল চুক্তিতে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করতে পারেন বলেই তাঁকে সিবিআই ডিরেক্টরের পদ থেকে সরানো হল? নাকি তিনি নিজেই কোটি কোটি টাকা ঘুষ নিতে অভ্যস্ত এক দুর্নীতিগ্রস্ত অফিসার?

এই সব প্রশ্নের মধ্যেই শুক্রবার অলোক বর্মা পদত্যাগ করলেন ইন্ডিয়ান পুলিশ সার্ভিস থেকে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার রাতে উচ্চ পর্যায়ের বাছাই কমিটি বর্মাকে সিবিআই ডিরেক্টরের পদ থেকে বদলি করেছিল। বর্মাকে ডিজি (ফায়ার সার্ভিসেস, সিভিল ডিফেন্স, হোম গার্ড) পদে বদলি করা হয়। কিন্তু শুক্রবার সকালে ওই পদের দায়িত্ব নিতে অস্বীকার করেন বর্মা। প্রথমে বিবৃতি দিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে সিবিআইয়ের স্বাধীনতায় হস্তক্ষেপের অভিযোগ তোলেন। বলেন, ‘সিবিআইয়ের উচিত বাইরের প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করা। সিবিআইয়ের বিশ্বাসযোগ্যতা ভেঙে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল। আমি সেটাই ধরে রাখার চেষ্টা করছিলাম।’ এর পরেই কর্মিবর্গ দফতরের সচিব সি চন্দ্রমৌলিকে চিঠি পাঠিয়ে আইপিএস থেকে পদত্যাগ করেন বর্মা। জানান, নতুন পদে যোগ দেওয়ার বয়স আর তাঁর নেই। বর্মার ইস্তফা গ্রহণ করা হবে কি না, তা এখনও স্পষ্ট নয়। মোদী সরকারের কর্তাব্যক্তিরা বরং বর্মাকে ‘উচিত শিক্ষা’ দেওয়ার পক্ষে। অবসরপ্রাপ্ত অফিসারের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া কঠিন। তাই তাঁকে চাকরিতে রেখেই শাস্তির প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে। সূত্রের খবর, খুব শীঘ্রই বর্মার বিরুদ্ধে অভিযোগের প্রাথমিক তদন্ত শুরু করতে চলেছে সিবিআই।

আরও পড়ুন: ‘তোতা’ আবার খাঁচাবন্দি, অলোক বর্মার অপসারণে কটাক্ষ কংগ্রেসের

বিরোধীদের অবশ্য দাবি, রাফাল চুক্তি তো বটেই। এমন মোট ৭টি ফাইল বর্মার টেবিলে ছিল, যার তদন্ত হলে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর দফতরের উচ্চপদস্থ কর্তাদের মাথায় টান পড়ত। সেই কারণেই তাঁকে সরানো হল। সিপিএম নেতা সীতারাম ইয়েচুরির সাফ যুক্তি, ‘‘বর্মার টেবিলে যে সব ফাইল ছিল, তার সঙ্গেই প্রথমে তাঁকে মধ্যরাতে ছুটিতে পাঠানো, তার পর দ্বিতীয় বার তাড়াহুড়ো করে সরিয়ে দেওয়ার যোগসূত্র রয়েছে। এই সব মামলার সুতো মোদী সরকারের শীর্ষ স্তরে বাঁধা রয়েছে।’’

সরকারি সূত্রের পাল্টা দাবি, বর্মার বিরুদ্ধে ১০ দফা অভিযোগ ছিল। তার মধ্যে ৪টি ‘ভিত্তিহীন’ বলে জানিয়েছে ভিজিল্যান্স কমিশন। ৪টি অভিযোগে আরও তদন্তের সুপারিশ করেছে। দু’টি অভিযোগ ‘সঠিক’ বলে জানিয়ে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা বা ফৌজদারি তদন্তের সুপারিশ করেছে। এক, মাংস ব্যবসায়ী মইন কুরেশির থেকে দু’কোটি টাকা ঘুষ নেওয়া। দুই, আইআরসিটিসি কেলেঙ্কারির তদন্ত থেকে এক অভিযুক্তর নাম বাদ দেওয়া। যে কেলেঙ্কারিতে লালুপ্রসাদ ও তাঁর ছেলে তেজস্বী যাদব জড়িত। বর্মার আয় বহির্ভূত সম্পত্তি, বেনামি কোম্পানির একটি তালিকাও গত দু’সপ্তাহ ধরে দিল্লিতে ছড়ানো হয়েছে।

বর্মি-বাক্স ছুটিতে পাঠানোর সময়ে বর্মার টেবিলে ফাইল • রাফাল-চুক্তি নিয়ে যশবন্ত সিন্হাদের অভিযোগ • কয়লাখনি বণ্টনের দুর্নীতির তদন্ত, রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর দফতরের এক কর্তার নাম • প্রাক্তন অর্থসচিব হাসমুখ আঢ়িয়ার বিরুদ্ধে সুব্রহ্মণ্যম স্বামীর দুর্নীতির অভিযোগ • মেডিক্যাল কাউন্সিল অব ইন্ডিয়ায় ঘুষ কাণ্ডের তদন্ত, রয়েছে এক প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি ও হাইকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নাম • মোদীর ‘আস্থাভাজন’ রাকেশ আস্থানার বিরুদ্ধে দুর্নীতির তদন্ত • ঘুষ নিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার শীর্ষপদে নিয়োগ-অভিযোগ • মেডিক্যাল কলেজে ভর্তিতে দুর্নীতির অভিযোগ, যাতে ইলাহাবাদ হাইকোর্টের এক বিচারপতির নাম জড়িত

কংগ্রেস নেতা অভিষেক মনু সিঙ্ঘভির প্রশ্ন, ‘‘ভিজিল্যান্স কমিশনের রিপোর্টের ভিত্তিকে বর্মাকে সরানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। ওই রিপোর্ট কি বেদবাক্য? সিভিসি-র উপর বুলডোজার চালানো হয়েছে।’’

বর্মারও যুক্তি, ‘‘এক জন মাত্র ব্যক্তি (মোদীর আস্থাভাজন বলে পরিচিত রাকেশ আস্থানা), যে আমার বিরোধী, তাঁর সারসত্যহীন, মিথ্যে অভিযোগের ভিত্তিতে আমাকে বদলি করা হল। অথচ সেই ব্যক্তির বিরুদ্ধেই সিবিআই তদন্ত চলছে।’’ ঘটনাচক্রে আজই দিল্লি হাইকোর্ট সেই তদন্ত খারিজ করার বিষয়ে আস্থানার আর্জি বাতিল করে দিয়েছে।

সিভিসি-র রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন তুলে সিঙ্ঘভি বলেন, ২ কোটি টাকা ঘুষ নেওয়ার জন্য সিভিসি বর্মার শাস্তির সুপারিশ করেছে। অথচ রিপোর্ট বলছে, ঘুষ নেওয়ার সরাসরি প্রমাণ নেই। আইআরসিটিসি কেলেঙ্কারিতেও সিভিসি বলছে, বর্মা পটনায় সিবিআই তল্লাশি থামানোর চেষ্টা করেছিলেন— এমন প্রমাণও নেই। বর্মা নিজেও ইস্তফার চিঠিতে লিখেছেন, সিভিসি আসলে আস্থানার বিবৃতিটাই তুলে দিয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ কে পট্টনায়কের নজরদারিতে সিভিসি তদন্ত হলেও, তাঁর সামনে আস্থানা হাজির হননি। বিচারপতি পট্টনায়কও বলেছেন, সিভিসি-র রিপোর্ট সিভিসি-রই। তাঁর নয়। আইপিএস হিসেবে ইস্তফার চিঠিতে বর্মা লিখেছেন, সিবিআই ডিরেক্টর পদের মেয়াদ দু’বছর নির্দিষ্ট হলেই তাঁর ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত চাকরি ছিল। এমনিতে ২০১৭-র জুলাইয়েই তাঁর ৬০ বছর বয়স হয়ে গিয়েছে। তাই নতুন পদে যোগ দেওয়ার বয়স আর তাঁর নেই।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement