ছবি পিটিআই।
জোট চলছে ঠিকই। কিন্তু বিজেপির সঙ্গে বর্তমান শরিকদের সম্পর্ক যে মধুর নেই, একই দিনে পূর্ব থেকে দক্ষিণ ভারতে তার প্রমাণ মিলল।
বিহারে বিজেপির শরিক জেডিইউ আজ বিজেপিকে কড়া বার্তা দিয়ে একের পর এক বিজেপি শাসিত রাজ্যে ধর্মান্তরণ বিরোধী আইনের সমালোচনা করেছে। তামিলনাড়ুতে বিজেপির শরিক এডিএমকে সাফ করে দিয়েছে, বিজেপি-র দাদাগিরি তারা মানবে না। তামিলনাড়ুতে বিজেপিকে এডিএমকে-র কথা মেনেই চলতে হবে।
এনডিএ থেকে শিবসেনা আগেই বিদায় নিয়েছে। সম্প্রতি কৃষি আইনের বিরোধিতায় পুরনো শরিক অকালি দলও এনডিএ ছেড়েছে। গত সপ্তাহে একই কারণে আর এক শরিক রাষ্ট্রীয় লোকতান্ত্রিক পার্টিও এনডিএ ত্যাগ করেছে। বাকি শরিকরাও এ বার উষ্মা প্রকাশ করতে শুরু করল।
বিহারে বিজেপি নীতীশ কুমারের জেডিইউ-র থেকে বেশি আসন পাওয়ার পরেই বিজেপি নেতারা ছড়ি ঘোরানোর চেষ্টা শুরু করেছিলেন। তার পরে অরুণাচলে জেডিইউ-র ছয় বিধায়ক বিজেপিতে যোগ দেওয়ায় নীতীশের দলের নেতারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। এ বার বিজেপিকে ধর্মান্তরণ আইন প্রসঙ্গে পাল্টা আক্রমণ করে জেডিইউ নেতা কে সি ত্যাগী বলেছেন, সংবিধান ও দেশের আইনে প্রাপ্তবয়স্কদের জাত-ধর্ম নির্বিশেষে জীবনসঙ্গী বেছে নেওয়ার অধিকার রয়েছে। জেডিইউ বিধায়কদের বিজেপিতে ভাঙিয়ে নেওয়ার প্রসঙ্গে ত্যাগী বলেন, ‘‘অটলবিহারী বাজপেয়ী যে জোট ধর্ম পালন করতেন, গত ১৫ বছরে বিহারে যে জোট ধর্ম পালিত হচ্ছে, এখনও জোট শরিকদের তা মেনে চলা উচিত।’’
সম্প্রতি বিহারের বিজেপি নেতারা দাবি তুলেছিলেন, মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ স্বরাষ্ট্র দফতরের ভার অন্য কাউকে ছেড়ে দিন। তাতে রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি সামলানো সহজ হবে। নীতীশ এ নিয়ে সরাসরি কিছু না বললেও রবিবার দলের বৈঠকে বলেছেন, ‘‘আমার তো মুখ্যমন্ত্রী হওয়ারও বাসনা ছিল না। আমি জনসমক্ষে বলেছিলাম, মানুষ রায় দিয়েছেন। যে কেউ মুখ্যমন্ত্রী হতে পারে। বিজেপি নিজের কাউকে মুখ্যমন্ত্রী করতে পারে।’’
তামিলনাড়ুতে এডিএমকে নেতারা ভোটের আগেই এ বিষয়ে সাবধান হয়ে গিয়েছেন। রাজ্যে এডিএমকে-বিজেপি জোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী কে হবেন, তা নিয়ে বিজেপি নেতা প্রকাশ জাভড়েকর সরাসরি কিছু বলতে চাননি। বর্তমানে এডিএমকে-র মুখ্যমন্ত্রী কে পলানিস্বামীর নামও ঘোষণা করতে চাননি। সোমবার এডিএমকে নেতা কে পি মুনুসামি বলেন, ‘‘পলানিস্বামীই মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবেন। যদি কোনও জাতীয় দল অন্য কিছু বলতে চায়, তারা জোটে যোগ দিতে না-ও পারে।’’ এরপরেই রাজ্যের বিজেপি সভাপতি এল মুরুগান পলানিস্বামীর সঙ্গে দেখা করেন। তাঁর দাবি, জোট মজবুত রয়েছে।
শুধু জোট শরিক নয়। বিজেপির সঙ্গে এত দিন ‘সুসম্পর্ক’ রেখে চলা তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও, অন্ধ্রের জগন্মোহন রেড্ডিরও সংঘাত বেঁধেছে। তেলঙ্গানায় বিজেপি এখন নিজের শক্তি বাড়াতে চাইছে দেখে রাও ফের বিজেপি-বিরোধী জোটের ডাক দিয়েছেন। জগন্মোহনের প্রকল্পে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলি ঋণ দিতে চাইছে না বলে, গত সপ্তাহে রাজ্যে ব্যাঙ্কের সামনে পুরসভার আবর্জনা জমা করা হয়েছিল। কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে রাজ্যের অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলে পরিস্থিতি সামাল দিতে হয়। শরিক নেতাদের বক্তব্য, বিজেপি নিজের সংখ্যার জোরে শরিকদের অপ্রয়োজনীয় বলে মনে করছে।