ছোটদের থেকেও বড়রা শেখে। বাম রাজনীতিতে এ বার তেমনই হলো। বাম ছাত্র সংগঠনগুলির সাফল্য থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে এগোচ্ছেন কৃষক, শ্রমিক ও অন্যান্য গণ সংগঠনের নেতারা।
জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচনে এ বার একটি বাদে বাকি বাম ছাত্র সংগঠনগুলি জোট বেঁধেছিল। সেই জোটের কাছে পর্যুদস্ত হয়েছে সঙ্ঘ পরিবারের ছাত্র সংগঠন এবিভিপি। সেই সাফল্য অনুসরণ করেই এ বার নরেন্দ্র মোদী সরকারের ‘জনবিরোধী’ নীতির বিরুদ্ধে দেশ জুড়ে আন্দোলন শুরু করছে ছ’টি বাম দলের সমস্ত সংগঠন। সিপিএম, সিপিআই, সিপিআই (এম-এল), ফরওয়ার্ড ব্লক, আরএসপি এবং এসইউসি-র গণ সংগঠনগুলিকে নিয়ে তৈরি হয়েছে জোট। তাদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে আরও একাধিক গণ সংগঠন। ‘জন একতা জন অধিকার আন্দোলন’ নামের ওই মঞ্চে সংগঠনের সংখ্যা বাড়তে বাড়তে দেড়শো ছাপিয়ে গিয়েছে!
সম্মেলনের মঞ্চ থেকে সোমবার এই জোটের জন্য নরেন্দ্র মোদীকেই ধন্যবাদ জানিয়েছেন বাম নেতারা! তাঁদের যুক্তি, নোট বাতিলের মতো ভুল নীতির ফলে শ্রমিক-নিম্ন মধ্যবিত্তের উপর আঘাত না এলে, গোরক্ষক বাহিনীর তাণ্ডবে গ্রামীণ অর্থনীতি বেসামাল না হলে, ধর্মনিরপেক্ষতা-বাক স্বাধীনতার উপর আঘাত না এলে এ ভাবে এই জোট সম্ভব হতো না। সম্মেলনে ঠিক হয়েছে, প্রাথমিক ভাবে ৩০ অক্টোবর প্রতিটি জেলায় মশাল অভিযান হবে। তার পর সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের সময় ৯ নভেম্বর থেকে তিন দিনের ধর্নার ডাক দিয়েছে সমস্ত কেন্দ্রীয় শ্রমিক সংগঠন। এর পর ২০ নভেম্বর কৃষক সংগঠনগুলি সংসদ অভিযান করবে।
বাম নেতাদের যুক্তি, মোদী সরকারের বিরুদ্ধে যাবতীয় ক্ষোভকে এক সুরে বাঁধাটাই প্রধান উদ্দেশ্য। পেট্রোল-ডিজেলের দাম বৃদ্ধি থেকে কৃষকদের দুর্দশা, গোরক্ষক বাহিনীর তাণ্ডবে চাষি ও পশু ব্যবসায়ীদের হেনস্থা, সংখ্যালঘু-দলিতদের উপর অত্যাচার থেকে গোবিন্দ পানসারে-গৌরী লঙ্কেশ হত্যার মতো বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যে সব সংগঠনগুলি আন্দোলন করছে, তারা এক মঞ্চে আসায় উচ্ছ্বসিত বাম নেতৃত্ব। তাঁরা মানছেন, এই ধরনের জোট অভূতপূর্ব। কারণ এর আগে হয় কৃষক সংগঠনগুলির জোট হয়েছে, অথবা শ্রমিক সংগঠন একজোট হয়েছে। কিন্তু ছাত্র, যুব, কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, সাংস্কৃতিক, নারী অধিকার থেকে দলিত, সংখ্যালঘু, পরিবেশের মতো এত সংগঠন এক মঞ্চে আগে আসেনি।