ফাইল চিত্র।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মিশ্র টেনি না উস্কালে লখিমপুর খেরি কাণ্ডে ঘটত না বলেই মনে করছে ইলাহাবাদ হাই কোর্টের লখনউ বেঞ্চ। কিছু দিন আগে মন্ত্রী-পুত্র আশিস মিশ্রকে জামিন দিয়েছিল যে আদালত, সেই হাই কোর্টই এবার লখিমপুর কাণ্ডে উত্তরপ্রদেশ থেকে নির্বাচিত কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অজয় মিশ্রের অশালীন ভাষা ব্যবহার নিয়ে প্রশ্ন তুলল। সুপ্রিম কোর্ট তাঁর জামিন খারিজ করায় নতুন করে ইলাহাবাদ হাই কোর্টে আবেদন করেন আশিস। জামিনের সেই আবেদনও খারিজ করে দিয়েছে আদালত।
লখিমপুর খেরিতে গত বছরের ৩ অক্টোবর চার জন কৃষক ও এক সাংবাদিকদের উপর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার ঘটনায় মূল অভিযুক্ত মন্ত্রী-পুত্র আশিস মিশ্র। ওই ঘটনার পর যে হিংসা ছড়িয়ে পড়ে, তাতে প্রাণ হারান আরও তিন জন। অভিযোগ, লখিমপুরের ঘটনার ঘণ্টাখানেক আগে আশিস তাঁর বাবার কনভয়ে সওয়ার হয়ে একটি কুস্তি প্রতিযোগিতায় যাচ্ছিলেন। যেখানে উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্যও উপস্থিত হয়েছিলেন। কৃষকেরা সেই কনভয়ের দিকে কালো পতাকা দেখায়। অভিযোগ, লখিমপুরের ঘটনার আগে মন্ত্রী অজয় মিশ্র কৃষকদের হুমকি দিয়েছিলেন। বলেছিলেন, বিক্ষোভ না থামালে দু’মিনিটেই ঠান্ডা করে দিতে পারেন তাঁদের। জনপ্রতিনিধি হওয়ার আগে তিনি কী ছিলেন, সেই অতীতকে কেউ যেন ভুলে না যায়। কারণ, জীবনে চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে কখনও পিছিয়ে আসেননি তিনি। হাই কোর্ট বলেছে, ‘‘রাজনৈতিক দলের নেতা, যাঁরা উচ্চপদে রয়েছেন, সমাজের প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে তাঁদের উচিত ভদ্র ভাষায় কথা বলা। নিজেদের পদমর্যাদার কথা ভেবে কাণ্ডজ্ঞানহীন মন্তব্য করা উচিত নয় তাঁদের।’’
উত্তরপ্রদেশ পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল সিটের দেওয়া চার্জশিটের প্রসঙ্গ তুলে ধরে হাই কোর্ট বলেছে, ‘‘লখিমপুরের ঘটনা হয়তো ঘটতই না যদি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী এমন সব কথা বলতেন।’’ বিচারপতি দীনেশ কুমার সিংহ বলেছেন, ‘‘এই ঘটনা না ঘটলে কয়েক জন নিরাপরাধকে এমন নৃশংস, বর্বরোচিত ভাবে মরতে হত না।’’
কুস্তি প্রতিযোগিতায় উত্তরপ্রদেশের উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্যের উপস্থিতি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে ইলাহাবাদ হাই কোর্ট। আদালতের মন্তব্য, ‘‘আইন প্রণয়ণ করেন যাঁরা, তাঁরাই আইন ভাঙছেন, এটা মানা যায় না। আমরা বিশ্বাস করি না যে লখিমপুর এলাকায় সে দিন যে ১৪৪ ধারা জারি হয়েছিল এবং জমায়েতে নিষেধাজ্ঞা ছিল, সেটা উপমুখ্যমন্ত্রী জানতেন না। তা সত্ত্বেও সেই কুস্তি প্রতিযোগিতা হয়েছে এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও রাজ্যের উপমুখ্যমন্ত্রী প্রধান অতিথি হিসেবে সেখানে অংশ নেন।’’
লখিমপুরের কৃষক হত্যার ঘটনার পরে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে অজয় মিশ্র টেনিকে বরখাস্ত করার দাবিতে সরব হয়েছিলেন বিরোধীরা। ইলাহাবাদ হাই কোর্টের এমন কড়া মন্তব্যের পরে সেই দাবি আরও জোরালো হয়ে উঠতে পারে বলেই মনে করা হচ্ছে।